গ্যাস সংকটে বাসা-বাড়িতে রান্নার কাজ ব্যাহত

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৬ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:০৭

ওমর ফারুক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর ইস্কাটন রোডের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোস্তাফিজুর রহমান। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মোস্তাফিজ বাসা থেকে প্রাতরাশ করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তবে গত এক মাস ধরে তাকে সকালের আহার সারতে হচ্ছে বাইরের খাবার দোকানে। কারণ তার বাসার চুলায় সকালের দিকে থাকছে না গ্যাস।

এই ভোগান্তি কেবল মোস্তাফিজুরেরই নয়। ঢাকার অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতে ক্রমেই বেড়ে চলেছে গ্যাস সংকট। গ্যাস স্বল্পতার ফলে একদিকে যেমন বেড়েছে ভোগান্তি, তেমনি বেড়েছে বাড়তি খরচ।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সকালে চুলায় গ্যাস থাকে না। গ্যাস আসে দুপুরে, আবার অনেক সময় রাতে। গ্যাসের এমন সংকটে বাধ্য হয়ে বাইরে খেতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে সংসারের খরচের ওপর।

গ্যাস সংকটের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ১৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। তার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহ করতে পারছে ১৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস, ঘাটতি ৩০ কোটি ঘনফুট। যার কারণেই মূলত এমন সংকট।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, মুগদা, মান্ডাসহ উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের সংকট চলছে প্রতিদিনই। যেসব এলাকায় গ্যাস রয়েছে, সেখানেও স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে গ্রাহকদের ভেতর।

মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় বসবাস গৃহিণী মল্লিকা সাহা। স্বামী অবনিশ সাহা ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, দিনের অধিকাংশ সময়ই গ্যাস থাকে না। আগে সকালে একটু গ্যাস আসলেও এখন সেটাও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে স্বামীকে না খেয়েই বেরুতে হয়।

পাইপলাইন গ্যাসের এমন আচরণের জন্য বেশিরভাগ গ্রাহক বাসাবাড়িতে বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন। লাইনের গ্যাসের জন্য বিল পরিশোধের পাশাপাশি বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেও। ফলে গ্যাসের পিছনে খরচ দাঁড়াচ্ছে দ্বিগুণ।

মিরপুরের ১০ নম্বরে বসবাস করেন গৃহিণী আফরোজা খানম। তিনি বলেন, গ্যাস তো থাকেই না। যদিও রাতে গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু রাতে গ্যাস দিয়ে করবো কি? সকালে আর দুপুরে গ্যাসের প্রয়োজন পড়ে বেশি। এখন খরচ দুইদিকেই বাড়লো। গ্যাসের বিলও দিতে হয়, সিলিন্ডার খরচ তো আছেই।

বাংলাদেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় সাড়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে সরকার এখন পর্যন্ত দৈনিক সরবরাহ করে ৩০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই গ্যাসের মধ্যে দেশীয় উৎপাদন প্রতিদিন ২৩০০ থেকে ২৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর আমদানি করা লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজির পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে চাপ বাড়ে সরবরাহের ওপর। এছাড়া দেশীয় পর্যায়ে গ্যাস উৎপাদন কমে যাওয়ায় সামগ্রিক গ্যাস সরবরাহ কমেছে ৭-৮ শতাংশ।

এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের মোট চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। বর্তমানে গড়ে পাচ্ছি ১ হাজার ৬২৬ মিলিয়নের মতো। যা চাহিদার তুলনায় কম। আমরা যে পরিমাণ গ্যাস পাচ্ছি সেটাই গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করছি। শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ নানা জায়গায় গ্যাস সাপ্লাইয়ের ফলে আবাসিক এলাকা গ্যাস কিছুটা কম পাচ্ছে। তবে কবে নাগাদ গ্যাস সংকটের সমাধান হতে পারে সেটা এখনি বলা যাচ্ছে না।

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/ডিএম)