ভোলায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং, হামলার শিকার পুলিশ সদস্য

ইকরামুল আলম, ভোলা
| আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩:৪২ | প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩:২৮

ভোলা জেলা পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবল এনামুল হক (২৪)। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে ভোলা শহরের জেলা পরিষদ পুকুর পাড়ে (বক ফোয়ারা) ঘুরতে যান। সন্ধ্যার দিকে সেখানে থাকা একদল বখাটে কিশোর তার স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করে।

এসময় এনামুল প্রতিবাদ করলে তারা তার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে কিশোরদের মধ্য থেকে কয়েক জন এনামুলের ওপর হামলা করে। এসময় ছুরি দিয়ে এনামুলকে কুপিয়ে জখম করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। ছুড়ির আঘাতে এনামুলের গলা, কান, হাত ও পিঠসহ মোট ছয়টি স্থানে জখম হয়।

এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরো চার জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজন ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। বাকি দুজন মোবাইল মেকানিক।

অপরদিকে এর আগেও বক ফোয়ারায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ এক কিশোরকে আটক করে। পরে ওই কিশোরের পরিবারের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৯ এপ্রিল রাতে সরকারি স্কুলের ব্রিজ সংলগ্ন একটি দোকানের সামনে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইমতিয়াজ নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এক দল কিশোর গ্যাং।

ওই ঘটনায় আহত ইমতিয়াজের পরিবার থানায় মামলা করে। মামলায় আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাদী পক্ষের সঙ্গে আপস করে মামলা তুলে নেয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভোলা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলী আকবর জানান, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় বাদী ও আসামি পক্ষের আপস হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, এ দুটি ঘটনাই শেষ নয়। ভোলা শহরের পৌর ভবন ও জেলা পরিষদ ভবনের মধ্যবর্তী বক ফোয়ারার পুকুর পাড়ে কিশোর গ্যাং ও বখাটেদের হাতে অনেকেই হেনস্তার শিকার হন। দুপুর ও বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এখানে আড্ডায় লিপ্ত থাকে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এমনকি তাদের সঙ্গে থাকা স্কুল ব্যাগে ধারালো অস্ত্রও থাকে বলে জানা গেছে। কোনো স্কুল ছাত্রী কিংবা নারী দেখলেই তাকে উত্ত্যক্ত করে এ দলটি।

তাদের ভয়ে অনেকে প্রতিবাদ করার সাহসও পান না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সব সময় বখাটেদের দখলেই থাকে বক ফোয়ারা। ভোলা প্রেসক্লাব সভাপতি এম হাবিবুর রহমান বলেন, ভোলা একটি শান্তিপূর্ণ জেলা। এখানে এরকম বখাটেপনা আগে ছিল না। গত কয়েক বছর ধরেই এটি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পুকুর পাড়ের নিকটবর্তী ভোলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠেছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বলা হলেও প্রশাসনের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায় আজ পুলিশই বখাটেদের হামলার শিকার হয়েছে।

তিনি বলেন, যেখানে একজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক হয়েও বখাটেদের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা।

ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন ফকির বলেন, হামলার ঘটনায় রাতে আহত পুলিশ কনস্টেবল এনামুল বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে হামলা ও উত্ত্যক্তের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ বখাটেকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। শনিবার তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়।

ভোলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কনস্টেবল এনামুল হকের শরীরের ৬টি স্থানে আঘাত করা হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজও পাওয়া গেছে। এই ভিডিও পর্যালোচনা করে এ ঘটনার সঙ্গে অন্যান্য যারা জড়িত তাদেকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :