'ব্যাচেলর পয়েন্ট'-র আপত্তিকর সংলাপ নিয়ে চারিদিকে ছি: ছি:

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৫১

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অনেকেই বলে থাকেন নাটক, সিনেমা সমাজের দর্পণ। যুগ যুগ ধরে মানুষের জীবনযাপন তথা সমাজের নানা দিক নাটক, সিনেমার মাধ্যমে দর্শকের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। নাটক বিনোদনের একটা বড় উৎস হিসেবে বহুকাল ধরে মানুষকে অনাবিল আনন্দ দিয়ে এসেছে।

নাটকের মাধ্যমে শিক্ষণীয় ও শুদ্ধ বিষয়বস্তু তুলে ধরা মূল লক্ষ্য হলেও আজকাল প্রায় নাটকে এমন মানুষ হাসানোর নামে অশ্লীল ও আপত্তিকর বাক্য, ভাষার বিকৃতি, গালিগালাজ, আঁটসাঁট পোশাক, কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত দেখা যায়; যা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখতে গেলে লজ্জায় পড়তে হয়। এই সময়ের টেলিভিশন নাটক নিয়ে নানা অভিযোগের সঙ্গে সম্প্রতি নতুন করে যুক্ত হয়েছে অশ্লীল সংলাপ।

বলা হয়ে থাকে, সংলাপ নাটকের প্রাণ। নাটকে চরিত্রগুলো মুখর হয় সংলাপের ভেতর দিয়ে। কিন্তু এখনকার নাটকে তা নেই। অহরহ ব্যবহৃত হচ্ছে অরুচিপূর্ণ সংলাপ। অনেক নাটকে ভিপ ব্যবহার হলেও কিছু কিছু নাটকে প্রকাশ পাচ্ছে অরুচিপূর্ণ সংলাপ। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে 'ব্যাচেলর পয়েন্ট' নাটকে বলা একটি সংলাপ। ওই সংলাপে সহশিল্পীকে  ‘যৌনকর্মীর ছেলে’ বলে একাধিকবার গালি দিতে শোনা যায়।  নাটকে অবশ্য তার প্রতিবাদ করেছে সহশিল্পী। পাশাপাশি এতে 'সহবাস' কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। দৃশ্য দুটি বেশ ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। এর কড়া সমালোচনা করেছেন অনেকে।

বিভিন্ন গ্রুপে চলছে সমালোচনা। কেন্দ্রবিন্দুতে পাশা চরিত্রের অভিনেতা মারজুক রাসেল। দর্শক বলছে, 'নাটকের কলাকুশলীরা নষ্টামির সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করছে এই নাটকের মাধ্যমে।

এখনি এদের থামানো না গেলে এই ভাইরাস পুরো দেশ পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়বে।'

সাইবার ৭১ এর সূত্র দিয়ে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে একাধিক পোস্ট করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকের নতুন ট্রেন্ড এই  ‘যৌনকর্মীর ছেলে’ গালি। এই নাটকের বেশিরভাগ দর্শক উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে, তাই স্বভাবগতভাবেই জমজমাট এই গালির ব্যবহার এখন সর্বত্র এবং সর্বজন স্বীকৃত।

এর আগেও ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটি ঘিরে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল। তবে এসবে কান পাতেননি এ নাটকের নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি। আপত্তিকর গালির ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে নির্মাতা অমিকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মারজুক রাসেলকেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

তবে মারজুর রাসেল বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ''এএএএএএএ 'যৌনকর্মীর ছেলে'...।' সংলাপটারে 'নারীবাচক' ধরিয়া  যাহাদিগের গুহ্যদ্বার জ্বলিতেছে, তাহাদের শিক্ষাদীক্ষার অব(নতি)গতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, 'যৌনকর্মী' শুধু নারীবাচক শব্দ নহে, পুরুষবাচক, হিজড়াবাচকও। নারী ছাড়াও দুনিয়াতে অসংখ্য পুরুষ ও হিজড়া যৌনকর্মী ছিল,আছে,থাকবে।'

এদিকে বিষয়টির কড়া সমালোচনা করেছেন আনোয়ার হোসেন নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী। বাংলা নাটক গ্রুপে নাটকটির স্ক্রিনশট দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘নিষিদ্ধ করা হোক ব্যাচেলর পয়েন্ট’। নিষিদ্ধে কিছু কারণ তুলে ধরেছেন আনোয়ার। লিখেছেন, ‘বিনোদনের নামে নোংরামিতে সব সময়ই বেস্ট। নানিকে অশ্লীল গালি দেওয়া শিখিয়েছে এই নাটক। মদ খাওয়া, কথায় কথায় গালিগালাজ শিখিয়েছে এই নাটক। মেয়েদের আগুন বলে ডাকা শিখিয়েছে এই নাটক। পর্ন ভিডিওকে ১৯-২০ নামে স্বাভাবিক করে তোলা। নতুন এলো যৌনকর্মীর ছেলে।’

আরাফাত মৌসিম নামের একজন লিখেছেন, ‘যৌনকর্মীর ছেলে, সহবাস’ - এইগুলা কী, এসব খুব দ্রুত থামানো উচিত। এরা পোলাপানদের ব্রেইনওয়াশ করে ফেলছে। সবচেয়ে খারাপ লাগে তখন, যখন দেখছি যারা এই বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করতেছে তারাও এক শ্রেণির মানুষ  দ্বারা আক্রমণের শিকার হচ্ছে।

রেজাউর রহমান রবিন নামের একজন লিখেছেন, '"যৌনকর্মীর ছেলে, সহবাস "- এই যদি হয় একটা দেশের সবচে জনপ্রিয় নাটকের সংলাপ ; তাহলে বুঝতে হবে আমাদের রুচি,সংস্কৃতি আর শিল্প কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে।'

সিফাত নামের একজন লিখেছেন, 'দিন যাচ্ছে আর এই নাটকের অশ্লীলতা আর গালি গালাজ বেড়েই যাচ্ছে,,,, বন্ধ করা হোক এই নাটক কে!'

বাংলা নাটকপ্রেমীদের অনেকেই বলছেন, আপত্তিকর ভাষায় ব্যবহার করে জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়, কিন্তু ধরে রাখা যায় না। এ সমস্ত বিকৃত ভাষার ব্যবহার বন্ধের দাবিও করেছেন অনেকে।

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/এলএম)