কেমন আছেন সার্জেন্ট মহুয়ার বাবা, তদন্তে কেন ধীরগতি?

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৫৪ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৫০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন পুলিশের সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা মনোরঞ্জন হাজং। পায়ে একাধিক অপারেশনের পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন মনোরঞ্জন। শারীরিক অবস্থারও উন্নতি হয়েছে, যদিও পা কেটে ফেলতে হয় তার। দুর্ঘটনার পর মামলা নিতে গড়িমসি করে পুলিশ। শেষমেশ মামলা হলেও ১০ মাস পেরিয়ে গেছে, তদন্ত শেষ হয়নি এখনো।

গত বছরের ২ ডিসেম্বর রাত সোয়া দুইটায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যান বাড়ি ইউটার্নে দ্রুতগতির গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন বিজিবির সাবেক হাবিলদার মনোরঞ্জন হাজং। তিনি ২০০৪ সালে বিজিবি থেকে অবসরে যাওয়ার পর বনানীর একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

দুর্ঘটনার পর মামলা নিতে গড়িমসি করে থানা পুলিশ। কারণ অভিযুক্ত প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন একজন বিচারপতির ছেলে। অনেক নাটকীয়তা শেষে প্রায় দুই সপ্তাহ পর রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন সার্জেন্ট মহুয়া। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

তদন্তে বেশ অগ্রগতি আছে জানিয়েছে সংস্থাটির প্রধান বনজ কুমার মজুমদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা মামলার তদন্ত কাজ অনেকটা গুছিয়ে এনেছি। আর তদন্তে বেশকিছু বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। দ্রুতই তদন্ত শেষ হলে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

মনোরঞ্জন হাজংয়ের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। সবশেষ গেল জুন মাসে বাম পায়ে একটি অপারেশনের পর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগে দুর্ঘটনার পর পর ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়।

মামলা নিয়ে নাটকীয়তা

ঘটনার দিন রাত সোয়া দুইটায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যান বাড়ি ইউটার্নে দ্রুতগতির গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন বিজিবির সাবেক হাবিলদার মনোরঞ্জন হাজং। তাকে উদ্ধার করে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অস্ত্রোপচার হয়। এ সময় তার ডান পায়ের গোড়ালির নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়। ৮ ডিসেম্বর সংক্রমণের কারণে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকেও কেটে ফেলা হয়। পরে উরু থেকে পুরো পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এ সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার পর মামলা করার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেন মনোরঞ্জনের মেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত সার্জেন্ট মহুয়া হাজং। একাধিক থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। পরে দুই সপ্তাহ পর ১৬ ডিসেম্বর অভিযুক্তদের নাম ছাড়াই মামলা নেওয়া হয়। কারণ হিসেবে পুলিশ দাবি করে, তারা (পুলিশ) জানে না কে তার বাবাকে গাড়িচাপা দিয়েছে। তাছাড়া তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই দুর্ঘটনার পর প্রাইভেটকারের চালক যুবককে আটক করেও ছেড়ে দেয় পুলিশ। সেই যুবক একজন বিচারপতির ছেলে। তবে তার নাম প্রকাশ পায়নি।

মামলার এজাহারে মহুয়া হাজং অভিযোগ করেছিলেন, ঢাকা মেট্রো ঘ–১৫–৪৯০৬ নম্বরের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক অপর দুই সহযোগীর কথায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে তার বাবার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে বাবার ডান পায়ের হাঁটুর নিচে গুরুতর জখমসহ হাড় ও মাংস থেঁতলে যায়। বাঁ পায়ের উরুর হাড় ভেঙে যায়।

তখন মহুয়া ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছিলেন, ‘চালকসহ দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশই তার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। অথচ পরে কিছু না জানিয়ে থানা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িসহ আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’

এদিকে দুর্ঘটনার পর মহুয়ার বাবার চিকিৎসায় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম আট লাখ ৪২ হাজার টাকা দেন। তাছাড়া মনোরঞ্জন হাজং যেখানে চাকরি করতেন সেখান থেকেও সহযোগিতা করা হয়। আর মহুয়ার চাকরির সুবাধে পুলিশ হাসপাতাল থেকে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন।

এখন কেমন আছেন মনোরঞ্জন

গুরুতর আহত মনোরঞ্জন আগে থেকেই হার্টের ও ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। হাসপাতালের বিছানায় তার দুর্ঘটনার ধকল নিতে কষ্ট হয়। একাধিকবার আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বারডেমে চিকিৎসাধীন ছিলেন বেশ কিছু দিন। পরে তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

মহুয়া হাজং ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে তার বাবা বাসায় আছেন। শারীরিক অবস্থা আগের থেকে বেশ ভালো আছে। খাওয়া-দাওয়াও করতে পারছেন।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর নাসির উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তবে আমি বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলাম, এজন্য কিছু কাজ শেষ করতে পারিনি।’

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এসএস/এফএ)