ইভিএমে আস্থা ইসির নাকি রাজনৈতিক দলের

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:১১ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৩৩

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে দুই দফায় ২৯টি রাজনৈতিক দল সংলাপে বসে। এই সংলাপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ছাড়া বেশিরভাগ দলই জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে বিরোধিতা করেছেন। তবে ইসি বলছে ভিন্ন কথা। নির্বাচন কমিশন মনে করে রাজনৈতিক দলগুলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে অমত থাকলেও দলগুলো অন্তর থেকে ইভিএমে বিশ্বাস করে। ইসির এমন বক্তব্যের সমালোচনা করছেন রাজনীতিবিদ ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন এটা ইসির কৌশল। তারা নিজেদের ইচ্ছা অন্যের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এসব কথা বলে তারা নিজেদের বিতর্কিত করছে। জনগণের সঙ্গে ঠাট্টা করছেন।

গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি আলমগীর বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩৯ রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করবে। ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা তাদের কৌশল।  

তিনি বলেন, ১২ কোটি ভোটারের পরিপূর্ণ আস্থা আছে। হয়তো দলগুলোর রাজনৈতিক কৌশল আছে। তবে তাদেরও অন্তরে বিশ্বাস আছে, মুখে নেই। কারণ অনেক দলই বিপক্ষে কথা বলছে, কিন্তু আমাদের কাছে এসে পক্ষে বলেছেন। একটি দলের একজন সংসদ সদস্য আমাদের কাছে এসে লিখিত দরখাস্ত করেছেন তার এলাকায় ইভিএম দেওয়ার জন্য। কাজেই এটা অন্তরে আছে, ওরা ইভিএম বিশ্বাস করেন।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।  তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম চাইছে না। ইভিএম বাতিলের দাবি জানিয়েছে। ইসি বলছে তাদের অন্তরে ইভিএম নিয়ে বিশ্বাস আছে, এটা কেমন কথা!  এই নির্বাচন কমিশন সরকারি দলের তোষণ করে চলছে, যে কারণে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো তাদের সঙ্গে সংলাপে বসেনি। কারণ বোঝা যাচ্ছে তাদের নিরপেক্ষতা নেই। ইসি নিজেদের ইচ্ছা অন্যের ওপ চাপিয়ে দিচ্ছে।’

ইসি আলমগীরের মন্তব্যে অনেকটাই অবাক হয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, একজন মানুষ কীভাবে জানবে আমার অন্তরে কি আছে। তিনি এটা বলেছেন তাদের কৌশল। তারা (ইসি) যেটা চান সেটা বাস্তবায়ন করতেই এই দাবি বলে আমি মনে করি। এই  ধরনের বক্তব্যের কোনো ব্যাখা নেই আমার কাছে। এটা ইসির একান্তই নিজস্ব বক্তব্য, রাজনৈতিক দলগুলো এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবে বলে আমি মনে করি না।

ইসিকে অন্তর্যামী না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ইসির কথাবার্তা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। নিজেদেরকে প্রতিদিনই বিতর্কিত করছে তারা। রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম চাইছে না, এরা বলছে দলগুলো অন্তর থেকে ইভিএম বিশ্বাস করে। আমার প্রশ্ন তিনি কি তাদের দাবি নিজ কানে শুনেছেন নাকি অন্তরের কথা। তিনি যদি অন্তর্যামী হয়ে থাকেন তাহলে সংলাপ করলেন কেন। এরা সাধারণ মানুষের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। এই কমিশন জনমানুষের দাবির সঙ্গে ঠাট্টা করছে।

ইসি আলমগীরের ৩৯ রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তার প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই কমিশনের গ্রহণযোগ্যতাই তলানীতে ঠেকেছে। অযোগ্য ও তল্পীবাহক কমিশনের দায়িত্বে রেখে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের শরিক ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এরা একটা ম্যানেজড নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। যেটা আমাদের গণতন্ত্রকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে।  

এর আগে আরেক নির্বাচন কমিশনার রাশেদা খানম এমিলির বক্তব্য নিয়েও তুমুল সমালোচনা হয়েছে। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে রাশেদা খানম বলেছিলেন, আমরা যদি বুঝি এটা দিয়ে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব তাহলে ইভিএম কে চাইল কে চাইল না এটা কি মেটার করে? ইলেকশনটা তো আমাদেরকেই করতে হবে। অন্য কেউ তো ইলেকশনটা করে দেবে না। ইসির কি এই স্বাধীনতা থাকবে না? আমরা তাদের (রাজনৈতিক দল) সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের ইচ্ছাটা জেনেছি।

তারও আগে ‘ইভিএমে ভোট ইসির নিজস্ব সিদ্ধান্ত’ নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের এমন বক্তব্য নিয়েও সমালোচনা হয়। ইতোমধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ (কর্মপরিকল্পনা) ঘোষণা করেছে ইসি। তাতে বলা হয়েছে, ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণকারী ২৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইভিএমের পক্ষে ১৭টি রাজনৈতিক দল মত দিয়েছে। বিপক্ষে মত দিয়েছে ১২টি রাজনৈতিক দল। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএমের পক্ষে থাকায় যন্ত্রটি ব্যবহার না করা যুক্তিসঙ্গত হবে না বলে কমিশন মনে করে।

কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, উভয়পক্ষের (পক্ষে-বিপক্ষে মতামত) প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কমিশন অনূর্ধ্ব ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যুক্তিসঙ্গত মনে করে। ইভিএমগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের আসনগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবহার করা হবে। অবশিষ্ট ১৫০ আসনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এছাড়া কর্ম পরিকল্পনায় ১৪টি চ্যালেঞ্জ ও এর থেকে উত্তরণের ১৯টি উপায় বলেছে সংস্থটি।

গত জুলাই মাসে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয় ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে। ১৭ জুলাই শুরু হওয়া ইসি সংলাপ শেষ হয় ৩১ জুলাই। তেরো দিন ধরে চলা এই সংলাপে অংশ নেয় ২৮টি দল। সময় চেয়ে আবেদন করা আরো একটি দল সেপ্টেম্বরে প্রথম সপ্তাহে ইসির সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নেয়। ৩৯ দলের মধ্যে মোট সংলাপে অংশ নেয় ২৯ দল।

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে দলগুলোর পক্ষ থেকে মোট ৩২১টি প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে বেশি কথা হয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা ও নির্বাচনে সেনা মোতায়েন- এই তিনটি বিষয় নিয়ে। আসন বৃদ্ধি, সংরক্ষিত আসন বাতিল, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধসহ বেশ কিছু দাবিও জোরালোভাবে এসেছে সংলাপে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের ওপরে আস্থার সংকটের কথাও উঠে আসে কয়েকটি দল থেকে।
 
(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর)