মসজিদে ব্যয়ের হিসাব নিয়ে দ্বন্দ্ব, অভিযোগ গড়াল ইউএনও পর্যন্ত

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩:৩৯ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:০৩

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ব্যয়ের হিসাব নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির খানের বিরুদ্ধে এ নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। তবে, সাধারণ সম্পাদক যথারীতি অডিট কমিটি ও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হিসাব বুঝিয়ে দিলেও সভাপতির কাছে থাকা গচ্ছিত টাকার হিসাব এখনো পায়নি কেউ।  

জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ জুলাই স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদল খান ১৭ জন গ্রামবাসীর পক্ষে মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও নতুন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। 

তিনি অভিযোগ করেন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির খান নিজের ইচ্ছামত লোকজন নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে মসজিদের ভবন নির্মাণ করেছেন। তিনি নির্মাণ কাজের হিসাব দিতে গড়িমসি করেন। তাই সঠিক হিসাব ও নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত দেওয়ার পর তদন্তকালীন সময়ের মধ্যেই বাদল খানকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।

আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির খান বলেন, আমাকে হেয় করার জন্যই এই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি দিন রাত পরিশ্রম করে মসজিদের নির্মাণ কাজ করিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয় চলতি বছরের ২১ জুলাই। মসজিদের নির্মাণ কাজ সাময়িকভাবে সমাপ্ত হওয়ায় এর আয়-ব্যয়ের জন্য মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) মো. রেজাউর রহমান খানকে প্রধান করে এর আগে ৫ মে ৫ সদস্যের একটি অডিট কমিটি গঠন করা হয়। আমি সেই কমিটির কাছে সমস্ত হিসাব বুঝিয়ে দেই।

তিনি আরো বলেন, ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আমাদের আয় হয় ৩১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৪০ টাকা। এর মধ্যে আমার কাছে ছিল ২৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪০ টাকা। অবশিষ্ট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫শ টাকা সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেনের নিকট জমা ছিল। নির্মাণ কাজে আমার মাধ্যমে ব্যয় হয় ২৯ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৪ টাকা। এতে করে আমার পকেট থেকে অতিরিক্ত ৫৯, ৯১৪ টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তার কাছেও আমি হিসাব বুঝিয়ে দিয়েছি। সেই সঙ্গে হিসাবের কাগজটি মসজিদের ভেতরেও সাটিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে সবাই হিসাব দেখতে পারেন।

অডিট কমিটির আহ্বায়ক মো. রেজাউর রহমান খান বলেন, সাধারণ সম্পাদক তার আয় ব্যয়ের হিসাব আমাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সভাপতির কাছে থাকা ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫শ টাকার হিসাব আমরা আজও পাইনি। তিনি এখনো আমাদের কাছে কোনো হিসাব দেননি।

এ বিষয়ে সাবেক সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, আমার কাছে থাকা ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫শ টাকা আমি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মহিদুরের নিকট নির্মাণ কাজে খরচ করার জন্য দিয়েছি। তিনি ওই টাকা মসজিদের নির্মাণ কাজে খরচ করেছেন। দ্রুতই তার খরচের টাকার হিসাব দেওয়া হবে।

বর্তমান কমিটির আহবায়ক ইউপি সদস্য বাদল খান জানান, মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও নতুন কমিটি করার জন্য আমি অভিযোগ দিয়েছিলাম। আমরা অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবো।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিংগাইরের ফিল্ড অফিসার মো. আকবর আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি তদন্ত করেছি। কমিটির সাধারণ সম্পাদক তার আয়-ব্যয়ের হিসাব আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তবে, সভাপতির কাছে থাকা টাকার হিসাব আমি পাইনি।

সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপন দেবনাথ বলেন, কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়েই দ্বন্দ্বে জড়ানো উচিত নয়। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এসএম)