ছোট বোনকে নিয়ে চিড়িয়াখানা ঘুরে দুই ঘণ্টায় যা দেখলাম
চার বছর বয়সী বোন আনিশার বায়না চিড়িয়াখানা দেখবে। তাকে নিয়ে গেলাম ঢাকার মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। সেপ্টেম্বরের একটি সুন্দর রৌদ্রজ্জ্বল দিনে স কাল সকাল পৌঁছে গেলাম। আজিমপুর থেকে বাসে করে যেতে তেমন বেশি সময়ও লাগেনি।
দর্শনার্থী প্রবেশের ফি দিয়ে কাটলাম টিকিট। বোনকে নিয়ে এ-প্রাণী ও-প্রাণীর খাঁচায় ঢু মারছিলাম। বুঝতে চাইছিলাম ছোট্ট আনিশার অনুভূতি কেমন! কিন্তু আমার নিজেরই তো মন খারাপ হয়ে এলো! পশুপাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর বেশিরভাগই জীর্ণশীর্ণ দশাই মন খারাপের কারণ।
হাঁটতে হাঁটতে দেখছিলাম চিড়িয়াখানায় যেন প্রাণ নেই। নেই কোনো পশু পাখির হাকঁডাকও। কয়েকটি প্রাণীর শরীরের হাড়ও যেন গোনা যাবে! চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণই তো রয়েল বেঙ্গল টাইগার। দেখলাম যথেষ্ট বয়স হয়ে আসা বাঘ এক কোণে পড়ে ঘুমোচ্ছে। সিংহের খাঁচার সামনে গিয়েও প্রায় একই দৃশ্য।
দর্শনার্থীদের কেউ কেউ বলাবলি করছিল দুর্বলতার কারণই এদের ঘুমিয়ে সময় কাটানোর বড় কারণ। কিন্তু প্রাণীগুলো কেন এত দুর্বলতায় ভুগবে সেটি বুঝতে পারলাম না।
আনিশা হাতি দেখতে চাইছিল। বিশালদেহী প্রাণীগুলোর কাছে গিয়ে দেখলাম—পায়ে শিকল বাঁধা। আর জায়গাটি খুবই নোংরা। সাপের খাঁচা ভরা শুধু অজগর। তাদের খাঁচাগুলোর চারপাশও আবর্জনায় ভরা।
আবার কাঁচঘেরা অন্ধকার খাঁচার ভেতরে রাখার কারণে অজগর খুব একটা দেখাও যাচ্ছিল না। অল্প জায়গায় অতিরিক্ত জলহস্তি রাখার কারণে প্রাণীগুলোর মধ্যে লড়াই লেগেই ছিল। এছাড়া বেশ কিছু প্রাণীর খাঁচা ফাঁকা ছিল। হরিণ দেখার স্থানটিও যথাযথ নয়।
দুই ঘণ্টা ঘুরে দেখলাম—হকার, কুকুর সমানতালে দখলে নিয়েছে চিড়িয়াখানা। বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত পুরো চিড়িয়াখানা জুড়েই। এদের কারণে আনিশার মতো চিড়িয়াখানায় আসা অন্য বাচ্চারাও ভয় পাচ্ছিল।
চিড়িয়াখানার মতো একটা জায়গায় আমরা দর্শনার্থীরাই বা কতোটুকু সচেতন থাকি? দেখলাম যেখানে সেখানে আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। বেশিরভাগই নানা খাদ্যসামগ্রীর অবশিষ্টাংশ। সহজেই খাবার নিয়ে ভেতরে ঢোকার সুযোগ থাকায় গোটা চিড়িয়াখানাই যেন পিকনিক স্পট! ফলশ্রুতিতে গোটা চিড়িয়াখানাটাই তার আসল রূপ হারাতে বসেছে।
লেখক: ঢাকার একটি কলেজে অধ্যয়নরত স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী