এসএসসির প্রশ্নফাঁসে ৫ শিক্ষক বরখাস্ত, মিলছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৩৬

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আটক ছয় শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। অপরদিকে ঘটনা তদন্তে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের তিন সদস্যের কমিটি শনিবার তদন্ত রিপোর্ট বোর্ডচেয়ারম্যান প্রফেসর মো. কামরুল ইসলামের কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

দায়িত্বে অবহেলা আছে কিনা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মাকেতিন কার্যদিবসের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হলেও রবিবার পর্যন্ত তিনি জবাব দেননি। এ ঘটনায় ইউএনও কার্যালয় কিংবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কোনো তথ্য মিলছে না। ফলে রহস্য আরো ঘনীভূত হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ছিল পূর্ব অভিজ্ঞতা। ২০১৬ সাল থেকে একই পদ্ধতিতে অষ্টম শ্রেণির প্রশ্নপত্র ফাঁস শুরু করে চক্রটি। তখন উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো করা। আর ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ২-৩ জন শিক্ষক। পরবর্ততীতে চক্রের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয় এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্যান্য জেলায় প্রশ্নপত্র বিক্রি করা হয়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে গতবছরের ১০ জুলাই দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে কেন্দ্র সচিবদের মিটিং ছিল। ওই মিটিংয়ে নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তার পরের দিন অর্থাৎ ওই বছরের ১১ জুলাই বোর্ডমিটিংয়ের কথা বলে তিনি এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বায়নার (অগ্রিম) টাকা নিতেই তিনি সেদিন রংপুর গিয়েছিলেন।

প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত কমিটি তদন্তকালে জানতে পারে শুধু তত্ত্বীয় প্রশ্ন ফাঁস করা হয়নি এর সঙ্গে নৈর্ব্যক্তিক বিষয়ের প্রশ্নপত্রও ফাঁস করা হয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক বিষয়ের গণিত (বি-সেট) ৪টি খামের মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ১টি খাম, উচ্চতর গণিতের (বি-সেট) ২ খামের মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ১টি খাম, পদার্থ বিজ্ঞান (সি-সেট)৩টি খামের মধ্যে ২০টির ১টি খাম, রসায়ন (এ-সেট) ৩টি মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ১টি খাম, জীব বিজ্ঞান (এ-সেট) ৩টি খামের মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ১টি খাম, কৃষি বিজ্ঞানের (বি-সেট) ৪টি খামের মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ১টি খাম পায়নি।

তত্ত্বীয় বি সেটের গণিতের ১১টি খামের মধ্যে ৫০টির ১টি খাম,কৃষি (তত্ত্বীয়)১০টি খামের মধ্যে ৫০ টি প্রশ্নের ১টি, পদার্থ (তত্ত্বীয়)৪টির মধ্যে ৫০টির ১টি, উচ্চতর গণিত (তত্ত্বীয়)২টি খামের মধ্যে ৫০টির ১টি খাম, রসায়ন ৪টি খামের মধ্যে মধ্যে ৫০টি একটি,জীব বিজ্ঞান (তত্ত্বীয়)৪টি খামের মধ্যে ১টি খাম পায়নি বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানাগেছে। একইভাবে এ- সেটের প্রশ্নপত্রও ফাঁস করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান এসএসসি ২য় বিভাগ, এইচএসসি বিশেষ বিবেচনায় এবং স্নাতক ৩য় বিভাগে পাস করেন। তিনি শশুড়ের (তিলাই ইউনিয়নের নাসির উদ্দিন) প্রভাব খাটিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে প্রথমে হামিদা খানম উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরে একই কায়দায় ভূরুঙ্গামারী সদরে অবস্থিত নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিযুক্তি পান। প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হবার পর আর তাকে পিছু তাকাতে হয়নি। তিনি ভূরুঙ্গামারীর বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ স্থানে এবং তার নিজবাড়ী রামখানার নাহারগঞ্জে কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। ভুরুঙ্গামারী শহরে কিনেছেন ১৬ শতক জমি। যার মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

এই প্রধান শিক্ষকের অন্যতম সহযোগী মাওলানা যুবায়ের হোসেন ভোটহাট দাখিল মাদরাসার সুপার ছিলেন্ সেখান থেকে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। কিন্তু এনটিআরসিএ সার্টিফিকেট ভুয়া সার্টিফিকেটের কারণে তার এমপিওভুক্তি হয়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও প্রধান শিক্ষক তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

তিনি খণ্ডকালীন শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র ফাঁসের গ্রাহক সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন। এক কথায় কেশিয়ারের দায়িত্ব পালন করতেন। শুধু তাই নয়, তিনি ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ মসজিদের ১ বছর থেকে পেশ ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

প্রধান শিক্ষকসহ ৫ শিক্ষকের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নেহাল উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান পলাশ।

শনিবার তাদের বরখাস্ত করা হয়।

তিনি জানান, শত্রুতাবশত সাধারণ শিক্ষকদের যদি কেউ ফাঁসিয়ে দেয় এই আশংকায় সাধারণ শিক্ষকরা আতংকে রয়েছেন।

এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও ওই বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর ফলে যারা প্রশ্ন পেয়েছে তারা লাভবান হলো আর যারা প্রশ্ন পায়নি তারা বঞ্চিত রয়ে গেল। তারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আজাহার আলী জানান, পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলেই আরো কেউ জড়িত আছে কিনা জানা যাবে। ২৯ সেপ্টেম্বর রিমান্ডের শুনানি রয়েছে বলে তিনি জানান। আসামিকে রিমান্ডে নিতে পারলে বিস্তারিত জানা, যোগ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ভূরুঙ্গামারীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার নেহালউদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান, সহকারী শিক্ষক যুবায়ের হুসাইন, আমিনুর রহমানকে এবং বৃহস্পতিবার হামিদুল ইসলাম, সোহেল আল মামুন ও অফিস পিয়ন সুজন মিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। দায়িত্ব অবহেলার কারণে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মাকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তদন্ত কার্যক্রম শেষ করলেও তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে কেউ অফিসিয়ালী মুখ খুলতে নারাজ।

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :