ইডেন কলেজের ইমেজকে যারা প্রশ্নে ফেলেছে তাদের বিচার হোক

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৪৩ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৫০

হাবিবুর রহমান জুয়েল

একজন প্ল্যাকার্ডে লিখেছে, ‘দেহ ব্যাবসায়ী প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি চাই না’। একজন স্টেটমেন্ট দিলো, ‘যে মেয়েটা একটু দেখতে সুন্দর তারা তাকে সিলেক্ট করে রাখে, সিলেক্ট করে তারা তাকে রুমে নিয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধামকি দিয়ে বিভিন্ন ধরণের খারাপ প্রস্তাব দেয়।’

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেত্রীদের এমন অনেক মন্তব্য ও লেখা অনলাইন জুড়ে ঘুরছে। তারপর নিউজে দেখা গেল কিভাবে তারা চেয়ার তুলে মারছে, কিভাবে চুল টেনে ছিড়ছে। একটি চ্যানেল নিউজের শিরেনাম দিয়েছে, ‘ইডেনে ছাত্রলীগ নেত্রীদের চুল ছেড়াছেড়ি’।

অনলাইন জুড়ে অনেকে মন্তব্য করছেন, ‘ইডেনের মেয়েরা কাজের বুয়াদের মতো ঝগড়া করছে’। ‘ওদের কে বিয়ে করবে?’ ‘ইডেনের মেয়ারা খারাপ’ ‘মেয়েদের বেশি পড়ানো উচিত না’ ইত্যাদি হাজারো বাজে মন্তব্য।

বাবা মা বা ভাইরা তাদের মেয়ে কিংবা বোনকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে হলে সবার আগে চিন্তা করে ইডেন কলেজের কথা। কেন না এটি মেয়েদের কলেজ এক কথায় মেয়েদের জন্য নিরাপদ। তাই তারা নিশ্চিন্তে থাকেন। আমার পরিবারের দুজন ইডেন এর ছাত্রী ছিলো।

সেই ইডেন কলেজ পুরে জাতিকে কী বার্তা দিলো? দেশবাসীর মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে ইডেনে কি আসলে এসব হয়? এর আগেও দেখেছি, ইডেন ছাত্রলীগে দু পক্ষের মারামারির জের ধরে এক পক্ষের মেয়েরা অভিযোগ তুলেছিল, জোর করে সভাপতি সেক্রেটারি মেয়েদের অনৈতিক কাজে পাঠাতো।

বারবার এরকম অভিযোগ ইডেনকে জাতির কাছে কিভাবে পেশ করছে? কিভাবে একজন বাবা একজন মা একজন ভাই তাদের মেয়ে বা বোন কে ইডেন এ পাঠাবে? বা ইডেনের একজন ছাত্রীর সামাজিক অবস্থান কী দাঁড়াবে?

এ দেশে নারী শিক্ষাকে অগ্রসর করার পেছনে ইডেনের ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলন সংগ্রামেও ইডেনের ভূমিকা রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের বুকে এভাবে কালিমা লেপন করা হচ্ছে একের পর এক।

ছাত্রলীগের এক পক্ষের অভিযোগ যদি মিথ্যা হয়, তবে অতীতে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো তদন্ত প্রতিবেদনে জাতির কাছে সত্যটা তুলে ধরা হয়েছে কি না? আর যদি সত্য হয় তবে তার বিচার করা হয়েছে কি না?

বিচার মানে নিজ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার মতো ঠুনকো বিচার নয়। তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া হয়েছে কি না? কেননা, কোনো ছাত্রীকে দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো রাষ্ট্রীয় আইনে অনেক বড় অপরাধ।

আর যদি বিষয়টি মিথ্যা হয় তাদেরকেও রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায় আনা হয়েছে কি না? ছাত্রলীগ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে কিংবা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম সাময়ীক বন্ধ করা হয়েছে—এটা কোনো জাতীয় সমাধান নয়।

এত বৃহৎ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম, ছাত্রীদের সামাজিক অবস্থানকে প্রশ্নের সম্মুখিন করার পিছনে যারা দায়ী আমরা রাষ্ট্রীয় আইনে তাদের কঠোর বিচার ও শাস্তি দাবী করছি...।