কোথায় আছেন ক্যাসিনো সেলিম, দিন কাটছে কীভাবে?

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৩৬ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:১৩

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

সেলিম প্রধান। বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনোর বড় হোতা। এখন কাশিমপুর পার্ট-১ কারাগারে বন্দি। প্রায় তিন বছরে আগে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে অন্যদের মতো গ্রেপ্তার হন তিনিও। অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা কামানো এই জুয়া কারবারির এখন দিন কাটাতে হচ্ছে কারাগারের দেওয়া খাবার খেয়েই।

একসময় আয়েশি জীবনযাপন করা সেলিম প্রধান কারাগারে কেমন আছেন, কীভাবে দিন কাটছে তার- এসব জানতে চেষ্টা করে ঢাকাটাইমস। জানা গেছে, সাধারণ বন্দিদের মতোই দিন কাটছে এই ক্যাসিনো হোতার।
 
কাশিমপুর পার্ট-১ কারাগারের একটি সূত্র জানায়, সেলিম প্রধান দ্বিতীয় শ্রেণির ডিভিশন পাওয়া সাধারণ বন্দি হিসেবে কারাগারে আছেন। কারাগারটিতে অনেক ভিআইপি বন্দি রয়েছেন। সবাই সেখানে নিয়ম মেনেই চলছেন। ফলে সেলিম প্রধানকে নিয়ে আলাদা কোনো নজরদারি নেই কারাগারের কর্মরত নিরাপত্তা রক্ষীদের।

কিভাবে দিন কাটছে সেলিমের জানতে চাইলে সূত্রটি জানায়, কারাগারে সকালেই ঘুম থেকে ওঠেন সেলিম প্রধান। পরে নিজের মতো করেই দিন পার করেন। কারাগারের ভেতরে আনুষ্ঠানিকতা বাদে বাকি সময় নিজের মতো করেই ঘুমান তিনি।

পরিবারের সদস্যরা কেউ দেখা করতে আসে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কারাগারের ওই সূত্রটি জানান, এক মাস আগে তার রাশিয়ান স্ত্রী আনা প্রধান দেখা করতে এসেছিলেন। আর প্রতি সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে থাকেন এই ক্যাসিনো কারবারি।

কাশিমপুর পার্ট-১ কারাগারের জেল সুপার  মো. নুরুন্নবী ভূঁইয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কারাবিধি অনুযায়ী সরকারের যে খাবার মেন্যু সেখান থেকেই খাবার খান সেলিম প্রধান। কারাগারে একজন বন্দি যেভাবে থাকেন তিনিও সেভাবেই আছেন। এক মাস আগে রাশিয়ান স্ত্রী এসেছিলেন তার সঙ্গে দেখা করতে।’

জেল সুপার জানান, সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। দুটি মামলায় জামিন না পাওয়ায় তাকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে।

২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে ব্যাংকক যাওয়ার সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করে র‌্যাব-১। এরপর তার গুলশান, বনানীর বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ টাকা, বিপুল বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।

সেখান থেকে সাতটি ল্যাপটপ ও দুটি হরিণের চামড়া জব্দ করার পাশাপাশি সেলিমের কর্মচারী আক্তারুজ্জামান ও রোকনকে আটক করা হয়। হরিণের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় ওই দিনই সেলিম প্রধানকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পরদিন ১ অক্টোবর গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইনে দুটি মামলা করে র‌্যাব।

এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে আরও একটি মামলা করা হয়। মাদকের মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। আর অর্থপাচারের মামলাটি এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) তদন্তাধীন রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’
 
সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

সেলিম প্রধান ‘প্রধান গ্রুপ’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। এই গ্রুপের অধীনে পি২৪ গেইমিং নামের একটি কোম্পানি আছে, যারা রীতিমত ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে ক্যাসিনো ও অনলাইন ক্যাসিনোর কারবার চালিয়ে আসছিল।

দুদকের করা মামলায় সেলিম প্রধানের বিচার শুরু হয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে। ইতোমধ্যে প্রাইম ব্যাংক উত্তরা শাখার সিনিয়র প্রেসিডেন্ট শারমিন আক্তার এবং একই ব্যাংকের মতিঝিল শাখার সহকারী অফিসার নাসিম গনি সাক্ষ্য দিয়েছেন ।

মাদক মামলা: সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে র‌্যাবের করা মাদকের মামলার বিচার চলছে ঢাকার চতুর্থ যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে। এই মামলায় সেলিম প্রধান জামিন পেয়েছেন। বর্তমানে মামলাটিতে তার বাড়ির ম্যানেজার তাজুল ইসলাম ও দারোয়ান রাশেদ সাক্ষ্য দিয়েছেন।

সেলিম প্রধান এর আগে মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায়ও জামিন পান। তবে এখনও দুটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকায় কারামুক্ত হতে পারছেন না তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেলিম প্রধানের আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। দুদকেরসহ দুটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তবে তাকে কারামুক্ত করতে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/এএ/এফএ)