ডিআইজি হাবিবের নেতৃত্বগুণের প্রশংসা সব মহলে

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:৩৭ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:০১

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

কর্মক্ষেত্রে সততা, সাহসিকতা, দক্ষতা, চৌকস আর দৃঢ় ব্যক্তিত্ব তাকে করেছে অনন্য। পুলিশ কর্মকর্তা হলেও নানামুখি মানবিক কাজ করে কুড়িয়েছেন সুখ্যাতি। সময়োপযোগী ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুনের কারণে বাহিনীতেও ছড়িয়েছে তার সুনাম।

তিনি হাবিবুর রহমান। বর্তমানে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি)। ২০১৯ সালের ১৬ মে এই রেঞ্জের দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পাওয়া হাবিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছেন মানবিক কাজে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে নিয়ে তার কাজ সবসময় হচ্ছে প্রশংসিত।

পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানবিক কাজই নয় শুধু হাবিবুর রহমান সম্পদনা করেছেন আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যৌনপল্লীর শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়ানো, একাত্তরে পাক-হানাদারদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের খুঁজে বের করা, তাদের নিয়ে বই সম্পাদনা এসব কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্ব নেওয়ার পর হাবিবুর রহমান তার আওতাধীন থানাগুলোতে সিসিটিভি বসিয়ে পুলিশি সেবা নিশ্চিত করেছেন। এরইমধ্যে তার এই উদ্যোগ পুলিশে নজির তৈরি করেছে।

১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া হাবিবুর রহমান ১৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে। বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত এই পুলিশ কর্মকর্তা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সফলভাবে পালন করে এসেছেন। পেশাগত সাফল্য তাকে নিয়ে গেছে ঈর্ষণীয় অবস্থানে।

থানা পর্যায়ে পুলিশের প্রতি মানুষের যে ভাবমূর্তি তা ডিআইজি হাবিব বদলে দিয়েছেন অনেকটাই। তার বহুমুখী ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণেই পুলিশ বাহিনীর সুনাম ও প্রশংসা বেড়েছে। তিনি প্রমাণ করেছেন সৃজনশীলতা, মেধা, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে নেতৃত্ব দিলে পুলিশের মতো একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বাহিনীকে জনগণের বন্ধুতে পরিণত করা যায়।

এত সব কিছুর পরও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও নিজের স্বাক্ষর রেখেছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। ক্রীড়াঙ্গনে থিতিয়ে যাওয়া কাবাডিকে মূলধারায় তুলে এনেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম কুড়িয়েছেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে এখন তিনি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহ-সভাপতির দায়িত্বও সামলাচ্ছেন।

ডিআইজি হাবিব অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’। বর্তমানে ঢাকার সাভার ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নাটোরের সিংড়া এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্ত প্রায় ভাষা নিয়ে ‘ঠার’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। ‘ঠার’ বেদেদের মাতৃভাষা, যা সাধারণ মানুষের বোধগম্যের বাইরে।

তার নিজের ভালো লাগা আর দায়বোধের জায়গা থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে সবসময় সচেষ্ট থাকার কথা বলছেন হাবিবুর রহমান। এত এত কাজ আর সেসব কাজের প্রশংসাকে কিভাবে দেখছেন তার কাছে প্রশ্ন ছিল ঢাকা টাইমসের।

ডিআইজি হাবিব ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পুলিশের জন্য ইতিবাচক ফল আসবে এমন কাজ করি ভালোবাসার জায়গা থেকে। পুলিশের চাকরির বাইরে আর যেসব কাজ করি সেগুলি হচ্ছে ভালোলাগা আর দায়বোধ থেকে।’

ঢাকা রেঞ্জের ৯৮ থানার কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং:

ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থানা। ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বলছেন একজন সেবাপ্রত্যাশী। ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে থেকে ডিউটি অফিসারের তৎপরতা পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত একটি দল।

হঠাৎই অডিও-ভিডিও সাপোর্টেবল ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বললেন অতিরিক্ত ডিআইজি। এভাবেই রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলার ৯৮ থানার কার্যক্রম একটি মনিটরে পর্যবেক্ষণ চলছে।

২৪ ঘণ্টাই একযোগে, এক মনিটরে, সব থানা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিচ্যুতি কিংবা অনিয়ম করলেই, দায়ী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। সেন্ট্রি, ডিউটি অফিসার ও হাজতখানার কর্মকাণ্ড তদারকিতে প্রতিটি থানায় তিনটি করে মোট দুশো আটাশিটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, যেগুলো ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে আশপাশের দৃশ্যও দেখা যায়।

এভাবেই রেঞ্জের আওতাধীন সব থানার কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হচ্ছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রেঞ্চ ডিআইজি কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে থানাগুলো মনিটরিংয়ে এই উদ্যোগ নেন হাবিবুর রহমান।

কেরানীগঞ্জে অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে ব্যাগসহ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেন বেসকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এম আজাদ। নিয়ম অনুযায়ী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

থানার কর্মকর্তাদের ব্যবহার ও সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদ বলেন, ‘ব্যাগ হারিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। কেরানীগঞ্জ থানায় গিয়ে বলি, ‘আমি জিডি করতে চাই।’

‘একজন পুলিশ কর্মকর্তা খুব আন্তরিকভাবে আমার কথা শোনেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে জিডি লিখে দেন। এমনকি ওই সময় সেখানে লোক না থাকার কারণে আমাকে নাস্তা খাওয়াতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।’

এমন ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা এখন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন প্রত্যেক থানা এলাকার মানুষের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে। যারা সেবার জন্য থানা-পুলিশের দারস্থ হয়েছিলেন। কাঙ্ক্ষিত সেবা পেয়েছেন। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হোক বা মামলা, টাকা না দিলে কাজ হয় না। আমূল বদলে গেছে ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায়।

পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান ‘বেস্ট প্র্যাকটিস’ নামে এ উদ্যোগ সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছেন। যার সুফল পাচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশী মানুষ।

ধীরে ধীরে সেবাপ্রত্যাশীদের থানাভীতি কাটছে এবং পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়ছে বলে জানালেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশনস অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স) বিপ্লব কুমার সরকার।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘২৪ ঘন্টায় আমাদের অফিসাররা রেঞ্জ অফিসে বসে সিসিটিভি মনিটরিং করেন। একটি টিম জনসাধারণকে ফোন করে জানতে চায়, আপনারা থানায় কেমন ব্যবহার পেলেন? একদিকে আমাদের ভিডিও রেকর্ডিং আর অন্যদিকে আমাদের সেবা প্রত্যাশীদের বক্তব্য এ দুটি মিলিয়ে কেউ যদি কোনো গাফিলতি করেন বা অনিয়ম করেন তবে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেই। পুলিশি সেবাই কোনো দুর্নীতি, নিপীড়ন থাকবে না; এজন্যই আমরা কাজটি করেছি। মূলত হয়রানিমুক্ত থানা গড়তেই আমাদের এ উদ্যোগ।’

জুম্মার বয়ান করছেন থানার ওসিরা:

সন্ত্রাস, মাদক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ বন্ধে জুম্মার নামাজের আগে মসজিদে মসজিদে বক্তব্য দেন ঢাকা রেঞ্জের বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি)। ডিআইজি হাবিবুর রহমানের ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছে। কমেছে বেশ কিছু অপরাধ। সচেতন হয়েছে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি কেটেছে পুলিশিভীতি।

নায়ারণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ সায়েদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ডিআইজি হাবিব স্যারের এই ধরণের উদ্যোগে থানার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। এতে মানুষ থানামুখী হচ্ছে। ফলে যেকোনো ধরণের সংঘাত এড়ানোর পাশাপাশি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ব্যবহারের প্রচলন বেড়েছে।’

সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি জনগণ কীভাবে সেবা পাচ্ছেন বা পুলিশি সেবা দিচ্ছি সেসব বিষয়ে মসজিদে মসজিদে প্রতি জুম্মার দিনে খুদবার আগে কিছু কথা বলা হচ্ছে বলে জানান রাজবাড়ীর কালুখালী থানার ওসি নাজমুল হাসান।

ঢাকা টাইমসকে ওসি নাজমুল বলেন, ‘এতে মানুষের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে পুলিশের প্রতি মানুষের যে আস্থা সেটা বহুগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি পুলিশি সেবা যেমন- মামলা, জিডি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স কিংবা অন্য কোনো সেবা নিতে টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয় না। এর জন্য কোনো সুপারিশ বা তদবিরও লাগে না। নিঃসংকোচে একজন মানুষ থানায় চলে আসতে পারে এবং তার কাঙ্খিত সেবাটা আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব দিয়ে থাকি।’

নরসিংদী মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের থানায় যে ক্যামেরা আছে সেটা ডিআইজি স্যারের অফিস থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটার একটি প্রতিক্রিয়া আছে। বিশেষ করে থানায় যেসব অফিসার আছেন তারা সতর্কভাবে নিজেদের কার্যক্রম করেন।

‘আর মসজিদভিত্তিক বক্তব্যে আমরা প্রতি শুক্রবার যোগ দিই। এটারও একটা রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশের মধ্যেও আগের থেকে অনেক স্বচ্ছতা চলে এসেছে। আগে অনেকে বিপদে পড়লেও পুলিশের কাছে আসতে চাইত না। এখন যাদের পুলিশি সেবা প্রয়োজন, তারা সরাসরি থানায় আসছেন। এর অন্যতম কারণ আমরা এখন মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছি।’

 

ওয়েসিসের মাধ্যমে সেবা:

পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’।

সম্পূর্ণ অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। তারই হাত ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে ‘টেলিমেডিসিন সেবা’ চালু হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন বিনামূল্যেম ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া হয়। প্রতিনিয়ত বিষয়টি মনিটরিংও করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুশান্ত নারায়ণ দে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ডিআইজি স্যার এ মাসেও দুইবার ওয়েসিসে এসেছেন। রোগীদের চিকিৎসা, খাবার, কাউন্সিলিং সব বিষয় খোঁজ খবর নিয়ে গেছেন। পাশাপাশি যারা এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ঠিক মতো করা হচ্ছে কি না সেই রেজিস্টার পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে দেখে গেছেন।’

 

ডিআইজি হাবিবের প্রতিষ্ঠিত পুলিশ থিয়েটারের ‘বিশ্বরেকর্ড’:

একবছরে শততম বার মঞ্চায়ন করে দেশব্যাপী সাড়া জাগিয়েছে পুলিশ থিয়েটারের কালজয়ী নাটক ‘অভিশপ্ত আগস্ট’। মঞ্চ নাটকটির পরিকল্পনা, গবেষণা ও তথ্য সংকলন করেছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। আর নাটকটির রচনা নির্দেশনা দিয়েছেন মো. জাহিদুল রহমান।

হাবিবুর রহমান ২০১১ সালে যখন ডিএমপির সদরদপ্তরের ডিসি ছিলেন তখন পুলিশ থিয়েটারটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকটি মঞ্চায়িত করে বিশ্বরেকর্ড (আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি মেলেনি) করেছে পুলিশ থিয়েটার। কারণ, এখন পর্যন্ত একবছরে কোনো থিয়েটার গ্রুপ শতবার কোনো নাটক মঞ্চায়িত করতে পারেননি।

নাটকটির নির্দেশক জাহিদুল রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই নাটকটা এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে ৩৬ জেলা ও রাজধানী মিলিয়ে ১১০ বার মঞ্চায়িত হয়েছে। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বুদ্ধিজীবি, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই নাটক দেখে আপ্লুত হয়েছেন। দুই বাংলার সব থেকে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব গঙ্গা-যমুনা। আগামী ২১ অক্টোবর শিল্পকলা একাডেমিতে এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম দিনেই মঞ্চায়িত হবে নাটকটি।’

বেদে জনগোষ্ঠীতে শিক্ষার আলো:

নৌকায় করে ভাসমান সাভারের বেদে পরিবারগুলোর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন হাবিবুর রহমান। তার উদ্যোগের বদৌলতে বেদে শিশু-কিশোররা এখন স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। সম্প্রতি তিনি বেদে জনগোষ্ঠীর মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরষ্কার তুলে দেন।

সাভার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রমজান আহমেদ। তিনিও বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। বলেন, ‘ডিআইজি হাবিবুর রহমান সাভারে বেদে পল্লীতে উত্তরণ শিক্ষালয় স্থাপন করেছেন। বেদে পরিবারের হতদরিদ্র শিশু, কিশোরেরা এখানে এসে কোচিং নিয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখছেন।’

কাউন্সিলর রমজান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে উত্তরণ শিক্ষালয়ে প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা খুবই মেধাবী হয়ে গড়ে উঠছে। এছাড়াও কারিগরি শিক্ষার জন্য ডিআইজি হাবিবুর রহমান বেদে পল্লীতে উত্তরণ কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার, উত্তরণ ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন।’

সাভারের পোড়াবাড়ি বেদে পল্লীতে নির্মিত হচ্ছে, হাবিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়, দারুল আফতান হাফিজিয়া মাদ্রাসা, উত্তরণ পল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান। বেদে বেকার নারী-পুরুষদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে উত্তরণ ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্টস কারখানা। যেখানে প্রতিনিয়ত কর্মমুখর দৃশ্য দেখা যায়। সাভারের তুরাগ নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে উত্তরণ পল্লী।

পোড়াবাড়ির ওয়াহিদুল্লাহ। একসময় সাপের খেলা দেখাতেন। তার স্ত্রী আনিসাও বেদেদের জাত ব্যবসা করে আসছিল। উত্তরণ শিক্ষালয়ে কোচিং করে তার মেয়ে ওয়াহিদিনা আক্তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মেয়ে শিক্ষিত হয়ে ভাল একটি চাকরি করবে এমনই প্রত্যাশা ওয়াহিদুল্লাহর। ওয়াহিদিনার মতো অনামিকা আক্তারও ইডেন কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

সাভারের বেদে পল্লীর নারী-পুরুষেরা এখন শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠছে। অনেকে পুলিশ বিভাগে চাকরি করছেন। সরকারি অফিসেও দেখা যায় বেদে শিক্ষিত যুবকদের চাকরি করতে। এ সবই ডিআইজি হাবিবুর রহমানের অবদান।

রাজারবাগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

ডিআইজি হাবিবুর রহমানের একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে টেলিকম ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর, যা এক ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দায়বদ্ধতা থেকেই তার এই উদ্যোগ। ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ এটি সর্বসাধারণের প্রবেশের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভের ঠিক পাশেই নব-নির্মিত জাদুঘর ভবনের উদ্বোধন করেন।

জাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত রাইফেল, বন্দুক, মর্টারশেল, হাতব্যাগ, টুপি, চশমা, মানিব্যাগ, ইউনিফর্ম, বেল্ট, টাই, স্টিক, ডায়েরি, বই, পরিচয়পত্র, কলম, মেডেল, বাঁশি, মাফলার, জায়নামাজ, খাবারের প্লেট, পানির মগ, পানির গ্লাস, রেডিও, শার্ট, প্যান্ট, র্যা ঙ্ক ব্যাজসহ টিউনিক সেট, ক্যামেরা, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, লোহার হেলমেট, হ্যান্ড মাইক, রক্তভেজা প্যান্ট-শার্ট, দেয়ালঘড়ি, এমএম রাইফেলসহ অনেক কিছু সংরক্ষণ আছে।

ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা:

ঢাকা রেঞ্জ এলাকার পুলিশের জরুরি রক্ত সরবরাহে খুলেছেন ব্লাড ব্যাংক। নিজ বাহিনীর সদস্যরাই সেখানে রক্ত দেন; পরে তা সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে রাখা হয়। পরবর্তীতে জরুরি প্রয়োজনে তা কাজে লাগান পুলিশ সদস্যরা।

লেখালেখিতে সময়:

অবসর সময়ে প্রতিনিয়ত বই পড়েন পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। করেন লেখালেখিও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে বই সম্পাদনা করেছেন ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান ‘গ্রন্থটি।

বইটিতে তুলে আনেন মন্ত্রীর বাল্যকাল, পড়াশোনা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার বিষয়াবলী। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বইটি প্রকাশ করে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড।

এছাড়া ২০১৮ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরে একটি বই সম্পাদনা করেন ডিআইজি হাবিব। নাম দেন ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’। সম্প্রতি বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের উদ্যোগগুলো মানুষ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে জানিয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা মানুষের সেবাই বিভিন্ন রকম কৌশল বা পদক্ষেপ নিই। ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি সাধারণ মানুষের রিঅ্যাকশন বুঝতে পেরেছেন। আমরা এটাকে অবশ্যই গঠনমূলক, গণমুখী এবং সেবামুখী পদক্ষেপ বলতে পারি।’

‘বিশেষ করে থানাগুলো মনিটরিং করতে একটা ব্যাতিক্রম সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগে মানুষ কতটা উপকৃত হচ্ছে, মানুষ কতটা উপলব্ধি করছে সেটা মানুষ মূল্যায়ন করবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমের উচিত এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা। তাহলে মানুষ অনেক বেশি উপকৃত হবেন।’

শহীদুল হক বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম বুলেট পুলিশ ছুঁড়েছিল কিন্তু এ বিষয়ে তেমন লেখালেখি হয়নি। ২০০৯ সালের আগে এটা কেউ জানতোও না। আমি যখন ডিএমপি পুলিশ কমিশনার তখন এটাকে সামনে নিয়ে আসি। এরপরই হাবিবুর রহমান পুলিশের প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এরপর বইও প্রকাশিত হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/ডিএম)