স্বাধীনতার ৫০ বছর পর রুটি গ্রামে দুর্গাপূজার আয়োজন

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৩২

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাণবাড়িয়া) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

২৩ বছর আগে বউ হয়ে আসেন বকুল রাণী শীল। কিন্ত স্বামীর বাড়িতে কোন দিন দুর্গাপূজার আয়োজন না হওয়ায় পূজার আনন্দ করতে পারেননি। জোসনা রানী শীলের বিয়ে হয়েছে প্রায় ১৭ বছর হলো। তিনিও স্বামীর বাড়িতে কোন দিন পূজা হতে দেখেননি। এজন্য তাদের মন খারাপ হতো কিন্তু কিছু করার ছিল না। বকুল রানী আর জোসনা রানীর দীর্ঘ দিনের পূজা করতে না পারার মনের সেই কষ্ট এবার দূর হচ্ছে।

দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর এবার তাদের বাড়িতে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের রুটি গ্রামের চিত্র। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার দুর্গা মা আসছে তাদের উঠুন জুড়ে। এজন্য তারা আনন্দিত-উচ্ছ্বসিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধরখার ইউনিয়নের রুটি গ্রামে ২০/২২টি হিন্দু পরিবার রয়েছে। উপজেলার অন্যান্য এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায় প্রতি বছর দুর্গাপূজা উদযাপন করলেও ওই গ্রামে দুর্গাপূজা করা হতো না।  স্বাধীনতার ৪/৫ বছর বছর আগে সর্বশেষ ওই গ্রামে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে। এরপর আর্থিক অসচ্ছলতা, লোকবল আর উদ্যোগের অভাবে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই গ্রামে দুর্গাপূজা হয়নি। গ্রামে পূজার আয়োজন না হওয়ায় অন্য এলাকায় গিয়ে পূজা করতো তারা।  নারীদের অনেকে চলে যেত বাপের বাড়ি।  তবুও পূজার পূর্ণ আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিল ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়। এবছর আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজলের উৎসাহ অনুপ্রেরণা আর যুবকদের আগ্রহে তারা দুর্গাপূজা উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে রুটি শীলপাড়ার কাজল মাস্টারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠান জুড়ে প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছে শ্রমিকরা। একটি ভিটিতে পূজা মন্ডপ তৈরি করা হয়েছে। একজন নারী ধোয়ামুছার কাজ করছেন। অন্য নারীরা এটা সেটা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাড়ির সামনের সড়কে সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক থেকে বাড়ি পর্যন্ত সরু পথের দুই পাশে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ছোট ছেলেমেয়েরা আনন্দে ছোটাছুটি করছে।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আব্দুস সামাদ বলেন, দীর্ঘদিন পর রুটি গ্রামের শীল পাড়ায় পূজা হচ্ছে। এজন্য তাদের সাথে আমরাও আনন্দিত। তারা যাতে সুন্দরভাবে পূজা করতে পারে এজন্য আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

শীল পাড়ার বকুল রানী শীল বলেন, আগে অন্য জায়গায় গিয়ে পূজা দেখতাম। এবার আমাদের বাড়িতে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এজন্য খুব ভালো লাগছে।

১০ বছরের ছোট্ট শিশু উদয় উঠানো ছুটাছুটি করছিল। সেও জানায় বাড়িতে পূজা আয়োজন হওয়ায় তার খুব ভালো লাগছে। পূজার জন্য নতুন কাপড় কিনেছে সে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় যাতে নির্বিঘ্নে ও সুন্দরভাবে পূজা করতে পারে এজন্য আমরা সব সময় খোঁজ খবর রাখছি। তাদেরকে উৎসাহ দিচ্ছি। আমাদের এলাকায় হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে।

রুটি শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি, রুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজল চন্দ্র শীল বলেন, স্বাধীনতার আগে আমাদের গ্রামে দুর্গাপূজা হতো। ৬৫-৬৬ সালে সর্বশেষ দুর্গাপূজা করা হয়েছে। লোকবলের অভাব, আর্থিক অসচ্ছলতা আর উদ্যোগের কারণে এতদিন পূজা উদযাপন করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এবছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল আমাদেরকে দুর্গাপূজা করার জন্য উৎসাহ উদ্দীপনা ও  সহযোগিতা করেছেন। তার অনুপ্রেরণা আর যুবকদের আগ্রহে আমরা নিজেরা চাঁদা দিয়ে এবার দুর্গাপূজা উদযাপন করছি। গ্রামের মুসলমানরাও আমাদেরকে উৎসাহ উদ্দীপনা দিচ্ছে। আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে। সবার সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যওতে পূজা করব।

এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, যার যার ধর্ম সে পালন করবে এটা তো আনন্দের ব্যাপার। যে কোন কারণেই হোক এতদিন তারা পূজা করেনি।  আমি তাদেরকে পূজা করতে উৎসাহ দিয়েছি। তারা যে পূজা করছে এজন্য আমার খুব ভালো লাগছে। 

উল্লেখ্য, এবছর আখাউড়ায় ২২টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/এসএ)