মির্জাপুরের বাঁশতৈল ফাঁড়িতে আটক ব্যক্তির আত্মহত্যা

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৫৩

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার বাঁশতৈল ফাঁড়ি পুলিশের হেফাজতে থাকা হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক লেবু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার রাতের কোন এক সময়ে হাজত খানার টয়লেটের একটি রডের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। লেবু মিয়া (৫০) উপজেলার বাঁশতৈল গ্রামের বাহার উদ্দিনের  ছেলে।

পুলিশ জানায়, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল পশ্চিমপাড়ার বসতঘর থেকে সখিনা বেগম (৪২) নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে।

রবিবার রাতে বাড়িতে ওই নারী বাড়িতে একা থাকার সুযোগে কে বা কারা তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। সোমবার এই ঘটনায় পুলিশ সখিনার সাবেক স্বামী বাঁশতৈল গ্রামের মফিজুর রহমান এবং লেবু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, আটক লেবু মিয়া রাতের কোন এক সময়ে ফাঁড়ি হাজতে গলায় রশি পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মরদেহ সুরহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সোমবার অনেক বেলা হলেও সখিনাকে না দেখে পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজন খোঁজ করতে আসে। পরে ঘরের ভেতরে তার মরদেহ দেখতে পায়। খবর পেয়ে বাশতৈল ফাঁড়ি পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। সখিনার গলায় রশির দাগ এবং গলার ডান পাশে কালো দাগ আছে বলে পুলিশ জানায়।

সখিনার মা আকিরন বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। ওরে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নারীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের গলায় রশির দাগ ও গলার ডান পাশে কালো দাগ রয়েছে। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে তিনি জানান।

সুমন শেখ নামের এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ বলছে, সুমন ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তবে হত্যার অভিযোগ তুলে শনিবার বিকেলে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। ফলে থানার আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

থানার সামনে আহাজারি করতে থাকা সুমনের স্ত্রী জান্নাত আরা জানান, রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সুমন। শুক্রবার রাতে সেখানে চুরির অভিযোগে তাকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আসে। আনার সময় মারধর করেছে। এরপর থানা হাজতে নির্যাতনের সময় সুমনের মৃত্যু হয়। তার বাড়ি নবাবগঞ্জ থানার দক্ষিণকান্দিতে।

জান্নাত বলেন, আমার স্বামীরে ওরা থানার ভেতর মেরে ফেলছে। অফিসে ওরে মারছে। রাতে পুলিশ গিয়ে নিয়ে আসছে। পুলিশও মারতে মারতে আনছে। রাতে আমি থানায় দেখতে আসছিলাম, আমারে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বের করে দিচ্ছে।

মৃত রুম্মনের বেয়াই সোহেল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সুমন নিজেই আত্মহত্যা করছেন। থানায় বসে একজন আসামি আত্মহত্যা করলেন সেটা সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা যাচ্ছে, এটা দুঃখজনক। আমি নিজে ফুটেজ দেখেছি।

তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে যায়, সুমন পরনের ট্রাউজার লোহার গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতালে নেয়া হয়। পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এমনটি ঘটেছে বলে অভিযোগ তার।

এ বিষয়ে ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের ডিসি এইচ এম আজিমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিলিভারের পিউরইট নামের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন সুমন শেখ। ওই অফিস থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরি হলে ১৫ আগস্ট হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেন নামের তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেয়া হয়। তারা এখন কারাগারে আছেন। এই তিনজনের তথ্য ও অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সুমন শেখকে চিহ্নিত করা হয়। শুক্রবার বিকেলে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার রাতে সুমনকে নিয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। তার বাসা থেকে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার হয়। অভিযান শেষে তাকে হাজতে রাখে পুলিশ, সকালে তাকে কোর্টে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ভোররাত ৩টা ৩২মিনিটে সুমন তার পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে গলায় ফাঁস দেন। যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এই ফুটেজ নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনদেরও দেখানো হয়েছে।

ডিসি জানান, ঘটনায় রাতে থানায় থাকা ডিউটি অফিসার হেমায়েত হোসেন ও হাজতের প্রহরী মো. জাকারিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/এআর)