বিএনপি পায়ে পাড়া দিয়ে দেশে অশান্তি করতে চায়: নানক

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:০৫ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আন্দোলনের নামে বিএনপি পায়ে পাড়া দিয়ে দেশে অশান্তি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিএনপির যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা কঠোর হাতে প্রতিহত করা হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

‘মানবতার আলোকবর্তিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যান বিষয়ক উপকমিটি। এ সময় গৃহহীনদের গৃহ ও দুঃস্থদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।

নানক বলেন, আগামী নির্বাচনেকে সামনে রেখে বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা ‘অপতৎপরতায়’ লিপ্ত রয়েছে। সহনশীলতাকে কেউ যদি দুর্বলতা মনে করে, তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে।

নেতাকর্মীদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দেশ একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ের সম্মুখীন। গণতন্ত্র হুমকির মুখোমুখি। শান্তি আজ বিঘ্নিত প্রায়। আজকের এই পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতিটি কর্মীকে মনে রাখতে হবে তারা (বিএনপি) যখন ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে, যখন লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমে চ্যালেঞ্জ করে; তখন মনে রাখতে হবে তারা পায়ে পাড়া দিয়ে দেশে একটি অশান্তি তৈরি করতে চায়।’

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মুজিব পরিবারের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা, ঐক্যবদ্ধ শক্তি। এই ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে একাত্তরে যেভাবে বিজয় অর্জন করেছি, যেমনি ২০০৮ সালে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জয়লাভ করেছিলাম; তেমনিভাবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ সব অপশক্তি যারা অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, এদের প্রতিহত করতে হবে।

নানক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা অনুরোধ জানাব লাঠিসোটা নিয়ে যে সভা সমাবেশ করা হচ্ছে, সেই সভা সমাবেশের অনুমতি কীভাবে পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের শান্তি নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

দেশের সার্বিক উন্নয়নের বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দুরদর্শী এবং বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রশংসা করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জাতিসংঘে সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় বক্তব্য দিয়ে তিনি অস্ত্র প্রতিযোগিতা ত্যাগ করে শিশুকে খাদ্য দেয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, এটা এক বিরল আহ্বান।

‘তার দুরদর্শী নেতৃত্বে দেশকে দারিদ্রমুক্ত করে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশের আর্থসামাজিক, জনসাধারণের ক্ষমতায়ন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের যুগান্তকারী পরিবর্তনের পাশাপাশি বিশ্ব জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষা, শান্তি ও স্থিতিশলীতা এবং জঙ্গিবাদ দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণসহ ইত্যাদি বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন’—যোগ করেন নানক।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির হত্যা-খুনের রাজনীতি করে। তাদের মাথায় হত্যা-খুন, নাশকতা ছাড়া কিছু নেই। এ দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তিনি ও ক্ষমতা দখল করেছে হত্যার মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগ হত্যার রাজনীতি বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ টানা ১৪ বছর ক্ষমতায়, বিএনপির কেউ বলতে পারবে না যে, তাদের ওপরে হামলা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। যখন আপনারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে গাড়িতে আগুন দিয়েছেন, ভাঙচুর করেছেন, তখন হয়তো পুলিশ আপনাদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।

বিএনপি স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের বংশধররা সবাই ছিলো পাকিস্তানপন্থি। এরা একাত্তরে রাজাকার ছিল। বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব, সংবিধান এরা বিশ্বাস করে না। তাদের কোনো আস্থা নেই। তারা এখন চায় বাংলাদেশকে পাকিস্তানে নিয়ে যেতে।

হানিফ বলেন, পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, যারা এসব কথা বলে যে, ফয়সালা হবে রাজপথে; তাদের বলতে চাই, এই বাংলাদেশের ফয়সালা হয়ে গেছে একাত্তরে। আমরা রাজাকারদের পরাজিত করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করে এখন শেখ হাসিনা নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। একাত্তরের ফয়সালা হয়ে গেছে এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, স্বাধীনতার পক্ষের বাংলাদেশ, এটা স্বাধীন বাংলাদেশ, এটা রাজাকারকে বাংলাদেশ নয়। কাজেই নতুন করে ফয়সালার কোনো দরকার নেই। আপনারা যারা এখনো রাজাকারকে প্রেতাত্মা হিসেবে এই দেশকে আবার ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ বলে পেছনে নিয়ে যেতে চান, সেই স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক সহনশীলতা ও শিষ্টাচারের বিশ্বাস করি। তাই বলে এটা নয় যে আমাদের ওপর বারবার হামলা আর আমরা বসে দেখবো, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে হানিফ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করুন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো বাধা নেই, কিন্তু কর্মসূচির নামে লাঠিসোটা হাতে নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করবেন, প্রশাসনের লোকজনের ওপর হামলা করবেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করবেন সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করবেন, তাহলে কেউই আপনাদের ছাড় দেবে না।

ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয় সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন দলের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, দপ্তরসম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/ইএস)