বিএনপি নেতা টুকুর বক্তব্য ‘অশালীন’, বিবৃতিতে বলল জামায়াত

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:২৪ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের ‘পরকীয়া’ চলছে বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি ‘অশালীন’ বলছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটি।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম মঙ্গলবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা বলেন।

বিবৃতিতে আবদুল হালিম বলেন, ২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির এক সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন। তার এমন বক্তব্য দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে।

সোমবার ঢাকার হাজারীবাগে দলের এক সমাবেশে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হলেও দলটিকে বেআইনি ঘোষণা না করার পেছনে আওয়ামী লীগের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

টুকু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের নিবন্ধন ক্যানসেল করেন, কিন্তু বেআইনি ঘোষণা করেন না। তা হলে কি আমি বলব, উনাদের পরকীয়া প্রেম চলছে?’

‘নিবন্ধন বাতিল করলেন, তাদেরকে বেআইনি ঘোষণা করলেন না কেন? তার অর্থ আওয়ামী লীগ জামায়াতের ফাঁদে পড়েছে...। আজকে থেকে আওয়ামী-জামায়াত হবে, বিএনপি-জামায়াত আর হবে না।’

বিএনপি নেতা টুকুর এমন বক্তব্য ‘রাজনীতিবিদের ভাষা হতে পারে না’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে জামায়াত নেতা আবদুল হালিম বলেন, ‘তার (টুকু) এ বক্তব্য স্বৈরাচারী শাসনকে প্রলম্বিত করার ক্ষেত্র তৈরি করবে।’

বিএনপি নেতা টুকুর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াত নেতা আবদুল হালিম বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও বেআইনি ঘোষণাসংক্রান্ত বিষয়ে তার কথা ও মর্মবেদনায় জনগণের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।’

কার স্বার্থে এবং কাকে সন্তুষ্ট করার জন্য টুকু এ বক্তব্য দিয়েছেন প্রশ্ন তুলে জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াতে ইসলামী কখনো কোনো আপস, গোপন ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না এবং করার প্রশ্নই আসে না।’

দুই যুগের বেশি সময় ধরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে থাকা জামায়াতে ইসলামী একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল। বিএনপি জোটের হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পর দলটির কয়েকজন যুদ্ধাপরাধী মন্ত্রীও হন।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। বিচারে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতাদের অধিকাংশই দণ্ডিত হন। তাদের অধিকাংশের ফাঁসির রায়ও কার্যকর হয়েছে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় আদালতের এক রায়ের পর দলটির নিবন্ধনও বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০১৮ সালে জামায়াত নেতাদের ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয় বিএনপি।

তবে বেশ ক’বছর ধরেই জোটের প্রধান দল বিএনপির সঙ্গে যৌথ কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না জামায়াতে ইসলামী। আর সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী বিএনপি জোট ছেড়ে গেছে বলে দলটির নায়েবে আমিরের একটি বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশ পায়। তবে জামায়াত জোট ছেড়েছে কি না তা নিয়ে বিএনপি নেতারা মুখ খোলেননি। জামায়াতের পক্ষ থেকেও কোনো পরিস্কার বক্তব্য আসেনি।

জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতিতে ‘একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে’ দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ পাঁচজন শীর্ষ স্থানীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে দণ্ড দিয়ে কারাগারে আটক রাখা এবং তিনজনের কারাগারে মারা যাওয়ার ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে।

আবদুল হালিম বলেন, ‘সে দলটি (জামায়াত) সম্পর্কে ইকবাল হাসান মাহমুদের বক্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। তার বক্তব্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে।..তার এ বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। তার বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, তিনি জনগণের ভাষা বুঝতে অক্ষম এবং তিনি জনগণের ভাষায় কথা বলতে পারেন না।

সোমবার দলের সমাবেশে বিএনপি নেতা টুকু আরও বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-জামায়াত বুলি হয়ে গেছে। আমি বলছি, এখন সময় এসেছে আওয়ামী-জামায়াত, আওয়ামী-জামায়াত বলার জন্য। জামায়াতও উর্দু, আওয়ামীও উর্দু, দুইটার মিলবে ভালো।’

বিবৃতিতে এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, ‘জামায়াত শব্দটিকে উর্দু ভাষা বলে ইকবাল হাসান মাহমুদ অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।’

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/ডিএম)