শেখ হাসিনা আপনিই তো বাংলাদেশ

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:২৩ | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩১

ড. যশোদা জীবন দেবনাথ

শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ প্রিয় নেত্রীর ৭৬তম জন্মদিন। তাই বঙ্গকন্যার জন্মদিনে সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা। শেখ হাসিনা মধ্যবিত্ত গার্হস্থ্য আবহে হাসি আনন্দে ভরা পরিবারে বেড়ে ওঠা এক নারী। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে সর্বহারা হয়ে যাওয়া সেই অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানো। যত সময় গড়িয়েছে ততই তিনি সমৃদ্ধ হয়েছেন।

শেখ হাসিনা একমাত্র সরকারপ্রধান যিনি সোজাসুজি স্পষ্ট করে বলতে পারেন। এটাও তার জন্মসূত্রে পাওয়া। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে আমরা দেখতে পেয়েছি ‘আমি কথা চিবাই না, যা ভালো মনে করি বলে ফেলি, ভুল হলে তা সংশোধন করি। যারা রাজনীতি করেন তারা বলেন, শেখ হাসিনা একটি আদর্শ। যারা রাজনীতি করেন না, তারা বলেন শেখ হাসিনা দক্ষ শাসক।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও বলেন, পরিপূর্ণ রাজনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। যিনি বিপন্ন ও দুর্যোগকবলিত বাংলাদেশকে বিস্ময়কর উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করতে পেরেছেন। তিনি আর কেউ নন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। যার নেতৃত্বে জীবনমান, উন্নয়ন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা সামাজিক নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আজ বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারছি। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘বাংলাদেশ’ এক বিস্ময়ের নাম। উন্নয়নের সিঁড়িতে ভর করে বাংলাদেশ এমন গল্প বলতে পারে, তা যেন অনেকেরই অজানা ছিল।

শেখ হাসিনা শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের দুঃসাহসী অভিযাত্রায় আন্দোলনের অগ্নি মশালের নাম শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। যার অনুপ্রেরণা, প্রণোদনা এবং নেতৃত্বে বাংলার মানুষ স্বপ্ন দেখেছে। সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় উদ্দীপ্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা এক গৌরবোজ্জ্বল আদর্শের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সার্থক উত্তরাধিকারী। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আপসহীন নেত্রী। আওয়ামী লীগের নৌকা আজ তার কর্মগুণে জাতীয় প্রতীক। রাজনীতির প্রতীক। দেশের উন্নয়নের প্রতীক।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতার চেয়েও বড় পরিচয় তিনি একজন যোদ্ধা, একজন অভিভাবক ও একজন ক্রাইসিস ম্যানেজার। জাতির পিতার রক্ত, স্বপ্ন, দ্রোহ আর বেদনা বুকে ধারণ করে তিনি হয়েছেন বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্নসারথি। আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই আজকের ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর মতো তার চরিত্রে মানুষের প্রতি বিশ্বাস-ভালোবাসা, সততা, দক্ষতা, ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতার বিশেষ গুণ বিদ্যমান। দেশের বাইরেও প্রশংসিত হয়েছে তার সাহসিকতা ও মানবতার রাজনীতি। সংকটকালে দাঁড়িয়েও ‘আরও সবুজ, আরও পরিচ্ছন্ন এবং আরও নিরাপদ’ বিশ্বের স্বপ্ন দেখেন তিনি।

শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। তাকে বলা হয় বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থানের একমাত্র কারিগর। স্বাধীনতা পরবর্তী মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেসব উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করেই আজকের বাংলাদেশকে গড়ে তুলছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা আজ পূর্ণতা পেয়েছে।

সোনার বাংলার লক্ষ্য অর্জন শেষে বাঙালি জাতি এখন এক নতুন ডিজিটাল বাংলাদেশ অভিমুখে যাত্রা করছে। দেশের যেদিকে তাকাই শুধু নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প দৃশ্যমান হয়। শুধু উন্নয়নই নয় বঙ্গবন্ধুকন্যার মানবিক নেতৃত্বে, বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনমান আমূল বদলে গেছে। অভাব, মঙ্গা ও দারিদ্র্যের কড়াল গ্রাস থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। গত এক দশকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১০ লক্ষাধিক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। নতুন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে প্রায় এক কোটি মানুষের। নামমাত্র মূল্যে সার ও বীজ পাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যেমন এক কোটি শরণার্থীসহ প্রায় দুই লাখ স্থানচ্যুত মানুষকে পুনর্বাসন করেন, বাস্তুহীনদের জন্য নির্মাণ করেন ৪৩ লাখ বাসগৃহ। তেমনি ১৯৯৮ সালের বন্যায় দেশের ৭০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হওয়ার পরেও তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করেন শেখ হাসিনা। বন্যার কারণে রোগবালাই এবং খাদ্যাভাবে এক কোটি মানুষ মারা যাবে বলে আগাম সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল বিশ্ব গণমাধ্যমে। কিন্তু ফলে কোনো লোকক্ষয় ছাড়াই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এ দুর্যোগ শক্ত হাতে মোকাবিলা করেন তিনি। এরপরই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শেখ হাসিনাকে ‘বিস্ময়কর’ নেতা বলে অভিহিত করা হয়।

সেই ধারাবাহিকতায়, কখনোই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো থেকে পিছপা হননি বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ মানবিক নেত্রীর নির্দেশে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দিতে প্রায় নয় লাখ ঘর তৈরির কাজ অব্যাহত রেখেছে সরকার। এমনকি সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য দেওয়া হচ্ছে শিক্ষাবৃত্তি। প্রথম শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে আনা হয়েছে নিয়মিত বৃত্তির আওতায়।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে সব শ্রেণির সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীসহ মোট ৯১ লাখ মানুষকে দেওয়া হচ্ছে সুরক্ষা ভাতা। নারীদের জন্য গর্ভকালীন ছুটি চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে, চালু হয়েছে পিতৃকালীন ছুটিও। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য সম্মানী কয়েক ধাপে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা উত্তীর্ণ করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গত এক দশকে ডিজিটাল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা। করোনার প্রাদুর্ভাবে ২০২০ সালের শুরুতে বিশ্ব যখন থমকে গিয়েছিল, সেই সময়টাতেও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ সরকার। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সরকার, ডিজিটাইজড সিস্টেমের মাধ্যমেই সচল রাখা হয়েছে দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা।

করোনা প্রতিরোধে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে নিয়মিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রচারণা চালিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। উগ্রপন্থীদের প্রাণনাশী গুজব মোকাবিলা করে গণমানুষকে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করেছে সরকার। ভ্যাকসিন নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচ কোটির বেশি ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে শুধু শেখ হাসিনার বিচক্ষণতার কারণে। তার আধুনিক নেতৃত্বের কারণেই মহামারিকালেও থেমে নেই মানবিক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিয়মিতভাবে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে সারা দেশে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত এক কোটিরও বেশি মানুষের ঘরে।

ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫০ লাখ কৃষক-শ্রমিক-মজুরের হাতে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যেমন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তেমনই ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রেখে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার নির্দেশেই দেশজুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ।

এমনকি এই করোনাকালে সারা দেশের মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা ও এতিমখানার উন্নয়ন এবং এসবের সঙ্গে যুক্ত প্রায় অর্ধকোটি মানুষের জন্য নগদ অর্থ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে অর্থ সংগ্রহ করে এসব খাতে আড়াইশ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য বিশ্ব নেতারা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনার।

ইতোমধ্যে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে ৬১টি জেলা। পাহাড় কিংবা দুর্গম চরেও পৌঁছে যাচ্ছে বিদ্যুতের সুবিধা। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিনগুণ। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের ফলে বেড়েছে গড় আয়ু। ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে সহজ হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। চার লেনের সড়ক ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হচ্ছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। নিজস্ব অর্থায়নে দ্বিতল বিশিষ্ট পদ্মাসেতুর কাজ সম্পন্ন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে বঙ্গবন্ধু টানেল ও রাজধানীর মেট্রোরেলের কাজও প্রায় শেষ।

এতদিন টেলিভিশনের পর্দায় বিদেশের যেসব মেগাপ্রকল্পের চোখ ধাঁধানো দৃশ্য আমরা দেখতাম, ঠিক সেসব অবকাঠামোই দেশের মাটিতে বাস্তবায়ন করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এসব উদ্যোগের কারণেই একসময়ে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র বাংলাদেশকে বিশ্ব আজ সমীহ করছে। গত এক যুগে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানের যে উন্নয়ন তা আজ বিশ্বনেতাদের কাছে এক বিস্ময়। এ কারণে ২০১৯ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের মডেল’ হিসেবে অভিহিত করেন।

২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী পালনকালে এ নতুন বাংলাদেশের পেছনে শেখ হাসিনার কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করেছেন বিশ্ব নেতারা। একজন দূরদর্শী রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এখন সম্মানিত করা হচ্ছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। দেশের সামাজিক পরিস্থিতি উন্নয়নে অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ মহান নেতার একজন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। তার নান্দনিক নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ইমেজ গড়ে ওঠার স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এ কারণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছে বাংলাদেশ।

লেখক: সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ কমিটি আওয়ামী লীগ

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/এজে)