গ্রেপ্তার এড়াতে ঘনঘন স্থান পাল্টাতেন রাজাকার খলিল, রাখতেন না ফোন

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:২৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

খলিলুর রহমান খলিল। ছিলেন ’৭১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যান। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন ও একাকী বসবাস শুরু করেন। ব্যবহার করতেন না মোবাইল ফোনও। গোপনীয়তা বজার রেখে পরিবারের সঙ্গেও দেখা করতেন কালেভদ্রে।

এ মাসে আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিলে আগের স্থান পাল্টে ঢাকার সাভারে আত্মগোপন করেন। এতোকিছুর পরেও একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধী ইসলামী ছাত্র সংঘের তৎকালীন সদস্য খলিলুর রহমান খলিলকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার হতে হয়।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, নেত্রকোণার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার বিভিন্ন এলাকায় ২২ জনকে হত্যা, এক নারীকে ধর্ষণসহ ৫টি অভিযোগ আনা হয় খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নয় নম্বর মামলার অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজাকার খলিলুর রহমান, তার ভাই আজিজুর রহমান, একই এলাকার আলমপুর ইউনিয়নের মৃত তরাব আলীর ছেলে আশক আলী, জানিরগাঁও ইউনিয়নের কদর আলীর ছেলে শাহনেওয়াজ এবং রমজান আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সবকটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় খলিলুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড এবং একটি অভিযোগে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অপরাধে তাকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে একটিতে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাঁচ আসামির মধ্যে খলিলুর রহমান ব্যতিত সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিচারকালীন সময় চারজন আসামি বিভিন্ন সময় মৃত্যুবরণ করেন।

 

এদিকে র‌্যাব মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত পলাতক আসামি খলিলুর রহমানকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়।

গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, ২০১৫ সাল থেকে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। ২০১৭ সালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে গৃহীত হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। রাজধানীর দক্ষিণখান, তুরাগ ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। আত্মগোপনে থাকাকালীন নিজের গ্রেপ্তার এড়াতে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন ও একাকী অবস্থান করতেন।

এসময় যোগাযোগের জন্য কোনো ধরনের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। মাঝে মাঝে তার পরিবারের সদস্যরা গোপনে তার সাথে দেখা করতেন। ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ দিত। মামলার রায় ঘোষণার পর তিনি গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় তার অবস্থান নিরাপদ নয় ভেবে স্থান পরিবর্তন করে সাভারে আত্মগোপন করেছিলেন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।

রাজাকার খলিল ১৯৫৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিলেন। যুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। পরে চন্ডিগড় ইউনিয়নের আলবদর বাহিনীতে কমান্ডার হন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা থানা এলাকায় গণহত্যায়সহ দুর্ধর্ষ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে ২২জনকে হত্যা, একজনকে ধর্ষণ, একজনকে ধর্ষণের চেষ্টা, অপহৃত চারজনের মধ্যে দুজনকে ক্যাম্পে নির্যাতন, ১৪-১৫টি বাড়িতে লুটপাট ও সাতটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/এসএস/ইএস