দিগ্বিজয়ী সারস পাখি দেশরত্ন শেখ হাসিনা

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:১২

আশিকুর রহমান অমি

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান জাতির জনক কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। দগ্ধ ভস্ম ভেদ করে পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির মতো যিনি এদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নের জন্য। যিনি এসেছিলেন বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রত্যয় আর স্বদেশব্রতের মহান অভিপ্সা নিয়ে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা সেই জন্মলগ্ন থেকেই পাহাড় সমান স্পর্ধা, সীমাহীন ত্যাগ আর স্বদেশগড়ার শপথে আমৃত্যু দৃপ্ত থাকা বঙ্গবন্ধুর জীবনাচরণকে আপন মহিমায় ধারণ ও লালন করে আসছেন।ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে যখন নব দুটি রাষ্ট্রে বৈষম্যের দমন নিপীড়নের সন্ধিক্ষণে ঠিক সেসময়ে বাঙালি জাতির কালান্তরের সেই গোধূলি বেলায় বাংলার আকাশ আলো করে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের রত্নখনি হয়ে এসেছিলেন আমাদের দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

আজ বঙ্গবন্ধু কন্যার ৭৬ তম জন্মদিন। বাবার সংগ্রামময় জীবন, মায়ের সীমাহীন ত্যাগে যখন বাংলার আকাশ বাতাস ভাস্বর সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা জীবনের মর্মবাণীকে আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন। বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কিভাবে শৈশব থেকে কৈশোরে, যৌবন থেকে পৌঢ়ে অনাড়ম্বর ও সহজ সরল স্বাভাবিক জীবন যাপনে দেশ মা ও মাটির সাথে নির্লিপ্তভাবে মিশে যাওয়া যায় তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ বঙ্গবন্ধু দুহিতা দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

রাজনীতির আঁতিপাঁতিতে দূরদর্শী হবার পাশাপাশি তিনি সাংসারিক জীবনেও একজন সংগ্রামী  সফল নারী এবং একজন সফল মানবতাবাদী মা। কখনও রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকায় দেশ পরিচালনা করেছেন তো কখনও দুহাত ভরে আঁচল দিয়ে মমতাময়ী মায়ের মতো নিজের সন্তানদের পৃথিবীতে স্বনির্ভর ও সফলতার পাশাপাশি ঔদার্যের শিক্ষা দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তারুণ্যের গণজোয়ারের ম্যান্ডেট আহ্বানের জন্য তিনি তিলে তিলে প্রস্তুত করেছেন। একমাত্র মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে মানবতার অবতার হিসেবে তৈরি করে নিয়োজিত করেছেন দুস্থ অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিতদের সেবা করবার নিমিত্তে।

স্বজন হারানোর বেদনা, পিতৃহত্যার বদলা, দেশের মানুষের জ্বরা গ্লাণিকে সময়ের তাড়নায় এক চিলতে হাসিতে রূপান্তরের প্রত্যয় প্রবাদ নিয়ে এই বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যাই নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন সকল অশনি শক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। এসেছিলেন বিশ্ব জয়ের মাতোয়ারা শক্তিকে পুঁজি করে। জন্মলগ্নের সেই ১৯৪৭ সাল থেকে আজ ২০২২, জীবনের এই ৭৬ বছরের উজান ভাটির খেয়াঘাটের জীবনে দেশ ও দেশের মানুষের এক নির্ভীক খাদেম হিসেবে নিজেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন আমাদের মমতাময়ী নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা৷

স্বৈরাচারী সরকার,  সন্ত্রাসের ভয়াল করালগ্রাস, অগণতান্ত্রিক সামরিক পেটোয়া বাহিনী, দুষ্টের দৌরাত্ম্য, সকল কিছুকে যিনি আলিঙ্গন করেছিলেন পিতা মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের নেপথ্যে দিগ্বিজয়ী সারস রূপে৷ বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রীয় মৌলনীতিকে বাস্তবায়ন, দেশে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা সাধন, জঙ্গীবাদ উৎখাতে অকুতোভয় দুঃসাহসী অভিযাত্রিক হিসেবে যিনি নিজের জাত চিনিয়ে বিশ্ববুকে নন্দিত হয়েছেন অপরাজেয় লৌহ মানবী হিসেবে তিনিই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সকল ঘাত প্রতিঘাতকে উপেক্ষা করে এবং সময়ের সাথে সন্ধি করে জন মানুষের আস্থার ঠিকানা হয়ে প্রতিদান দিয়েছেন নিজের জীবনকে বাজি রেখে লড়ে যাওয়ার অদম্য উচ্ছাসকে সঞ্জীবিত করবার মাধ্যমে।বুলেটের বাহাদুরি আর গ্রেনেডের গণতন্ত্রের  সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন সমগ্র বঙ্গীয় বদ্বীপে শান্তি, সমৃদ্ধি, আর্থ সামাজিক বিপ্লবের সোরগোলকে জিইয়ে রাখার প্রত্যাশা নিয়ে৷ আজ বাংলাদেশের মানুষ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পায়, চিকিৎসা সেবায় অভূতপূর্ব বৈপ্লবিক সমৃদ্ধির সাক্ষী হয়, মাথাপিছু আয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখায়, শিক্ষায় সমৃদ্ধি পরিগনিত হয়, বাস্তুহারা মানুষ আবাসন পায়, দেশের অগ্রগতির প্রাকৃত স্বরূপ বিশ্বের দরবারে উন্মোচিত হয় কেবলই দেশরত্ন শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়োকচিত নেতৃত্বের দূরদর্শিতার প্রেক্ষিতে। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের এই স্বপ্নই তো জাতির জনক তার জীবনে বাস্তবিক রূপায়নের সার্বিক রূপকল্পের কথা দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আজ তা সফলভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার হাত ধরে এ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং উন্নয়ন পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিমন্ডলে শেখ হাসিনার অর্জন আজ অনন্য ও অতুলনীয়।

মাননীয় নেত্রী আজ প্রায় ৪১ বছর যাবত দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সভাপতি এবং একই সাথে ১৭ বছরের বেশি সময় এবং টানা চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করছেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বিপন্ন গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ইতিহাসের সঠিক ধারায় এনে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার ফলস্বরূপ আজ তিনি ৩১টিরও বেশি আন্তর্জাতিক পদক ও স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।

বাংলাদেশ দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বিস্ময়কর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে এক নবজাগরণ ঘটিয়েছে। ১৪ বছর আগের সেই বিএনপি-জামায়াত জঙ্গীদের দুঃশাসন ও অপশাসনের কারণে যখন বাংলার দুঃখী মানুষ দু-বেলা খাবার পেত না সেই অনাহারী মানুষকে আজ আর অনাহারে থাকতে হয়না। সেই ১৪ বছর আগের মাথাপিছু আয়কে চার গুণ বাড়িয়ে আজ ২৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশের রিজার্ভকে সর্বকালের সেরা রেকর্ডে উন্নত করে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজের জাত চিনিয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি, পরাজিত অপশক্তি ও দেশবিরোধী রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের কলিজা যেন পানি হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু কন্যার সুতীক্ষ্ণ খুরধার নায়কোচিত নেতৃত্বের বিজয় কেতন দেখে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখিয়ে দিয়েছেন যে, দেশদ্রোহীদের এই বাংলার মাটিতে কোন ঠাই নেই। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বঙ্গবন্ধু তনয়া বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক, লড়াকু এবং সম্প্রীতিময় বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকারকে প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়ভাবে সংকল্পবদ্ধ।

শেখ হাসিনার জন্মই যেন জাতির আঁধারের ঘনঘটায় অগ্নিসেতু স্থাপনের নৈসর্গিক কর্মযজ্ঞকে বাস্তবায়ন করবার জন্য। শেখ হাসিনার জন্ম বলেই বাঙালি জাতির মুক্তির শৃঙ্খলকে উজ্জীবিত করবার আত্মিক মিত্রতায় আমাদের প্রগতির পদে পদে গৌরবের ইতিহাস রচনার যুগপৎ সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনার জন্ম বলেই বাঙালি আঁধারেও বোধের দ্বীপশিখাকে জ্বাজ্জল্যমান প্রদীপ রূপে লালন করার সাহস পায়।

মানুষের দুঃখ-কষ্ট-বেদনার মৃণ্ময়ী শ্রোতা জননেত্রী

শেখ হাসিনা। যিনি সকল দূর্যোগ দুর্বিপাকে এক দুর্জয়ী কাফেলা হয়ে আলোর নৌকা বয়ে নিয়ে চলেছেন।ইতিহাসের সেই ১৯৯১ সালের এপ্রিল ট্র‍্যাজেডির পাতা থেকেই আমরা দেখি, সেবার ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছিল সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজের তোয়াক্কা না করে ছুটে গিয়েছিলেন অনাহারে থাকা শিশু থেকে মা, মা থেকে বৃদ্ধ, পৌঢ় সকলের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেবার জন্য। জাতির সকল ক্রান্তিলগ্নে এভাবেই অনড়, অটল, অবিচল থেকেছেন আমাদের মমতাময়ী নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু কন্যার রাষ্ট্রনায়োকচিত নেতৃত্বে আজ সমগ্র দেশবাসী প্রবল উচ্ছ্বাসে উজ্জীবিত। আজ দেশের মানুষ তাঁর দিগ্বিজয়ী জয়রথকে আলিঙ্গন করে। দেশের শোষিত বঞ্চিত নিপীড়িত নিষ্পেষিত শৃঙ্খলিত মানুষের আর্তনাদে সাড়া দেওয়া এক সেবকের নাম শেখ হাসিনা। তাই একজন বাঙালি হিসেবে আজ সকলের প্রত্যাশা জাতির পিতার কন্যা আমাদের অন্তরের মণিকোঠায়, বাস্তবিক জীবনের অঙ্গারে বিমূর্ত প্রতীক ও প্রতিবাদী নারী হিসেবে সুদীর্ঘ কাল ধরে যেন বেঁচে থাকে এবং এভাবেই যেন এদেশের অগ্রযাত্রার লাল সূর্য তার হাতেই অক্ষুণ্ণ  থাকে একুশ শতাব্দীর একজন তরুণ শিক্ষার্থী হিসেবে আজ এতটুকুই প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/এসএটি)