বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কোনো দলকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র: পিটার হাস

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:৪৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

বুধবার আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) সংগঠনের আয়োজিত এক সভায় একথা বলেন তিনি।

পিটার হাস বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ধরনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। কোনো পক্ষ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে ব্যর্থ হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না।

রাজনৈতিক সহিংসতাকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন পিটার হাস।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে ৫টি বিষয়েও ওপর গুরুত্ব দেয় তার দেশ। প্রথমত, শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ত, এ দেশের প্রতিশ্রুত গণতন্ত্র, বহুদলীয় গণতন্ত্র, সহিষ্ণুতা, স্বচ্ছতা, সুশাসন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা। তৃতীয়ত, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষমতা। চতুর্থত, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফেরা পর্যন্ত তাদের আশ্রয় দেওয়া। পঞ্চমত, এই চার লক্ষ্য সার্থকভাবে পরিপালন করলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শ্রমমান উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়া। দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এসব অর্জন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে পিটার হাস বলেন, দুঃখজনকভাবে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের অনুকূলে নেই। তবে অন্যান্য উন্নয়নসহযোগীদের মতো যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গাদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজন মিটাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে মার্কিন উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন হবে। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্র সফরে গত সপ্তায় মার্কিন এফডিআইয়ের আহবান জানিয়েছেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে বিনিয়োগের পরিবেশ।

এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, মার্কিন উদ্যোক্তারা কোনো দেশে বিনিয়োগের আগে দুর্নীতি সংক্রান্ত বাস্তবতা, সহজ ব্যবসা পরিবেশ, দক্ষ শ্রমশক্তির সহজপ্রাপ্যতা ও বেশি মুনাফার বিষয়টি বিবেচনা করে থাকে। দুঃখজনকভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে।

জিএসপি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, শ্রমিক নিরাপত্তা প্রশ্নে বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করা হয়। এখনো রপ্তানিপণ্যের বাইরে স্থানীয় বাজারের জন্য যেসব পণ্য উৎপাদিত সেগুলোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই। শ্রম আইনের জটিলতাও এখনো কাটেনি। এছাড়া শ্রমঅধিকার এবং সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্সি) যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) শুল্কমুক্ত রপ্তানিতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টিও জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যকার আগামী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংলাপে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/ওএফ/ইএস)