ঢাকায় বাসা-বাড়িতে গ্রিলকাটা চোর চক্রের হোতা ইউপি মেম্বার!

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২৩:২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মাদারীপুরের শিরখাঁড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) আজিজুল হক ফকির। অধিকাংশ সময় থাকেন রাজধানীতে। ঠান্ডা মাথার চোর এই জনপ্রতিনিধি। নিজের প্রাইভেটকার নিয়ে ঘুরেন ঢাকার অলি-গলি। আর তার চার সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে সুযোগ মতো চুরি করেন। তিনি সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে গ্রেপ্তার হওয়া বাসা-বাড়ি ও দোকানে গ্রিল ও তালা কাটা চোর চক্রের মূল হোতা বলে জানায় পুলিশ।

কাউকে বল প্রয়োগ বা ক্ষতি না করে যদি গ্রিল কেটে চুরি করা যায়। সেটা তো অনেকাংশে তাদের জন্য নিরাপদ। তারা মোবাইলও ব্যবহার করেন না। অনেক ক্ষেত্রে তারা কোনো ডিভাইস বা অন্য কিছু স্পর্শ না করেই শুধু স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে চলে যান। এছাড়া কাউকে আঘাতও করেন না তারা।

বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে সেনপাড়া পর্বতা ঈদগাহ মাঠ এলাকা থেকে আজিজুল হক ফকিরকে গ্রেপ্তার করে মিরপুর বিভাগের কাফরুল থানা পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে একটি লোহার শাবল সাদৃশ্য (খুন্তি), একটি বোল্ড কাটার, দুটি গাড়ির নম্বর প্লেট, একটি তালা, একটি বড় স্ক্র ড্রাইভার, ১২টি শাড়ি, চারটি প্লাজু, একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকার, একটি মোবাইল ফোন, একটি ব্যাগ ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ডিএমপির কাফরুল থানায় একটি মামলা হয়েছে।

এই চোর চক্রের হোতা গ্রেপ্তার আজিজুল হক তার চার সহযোগীর তথ্য ও নাম ঠিকানা প্রকাশ করেছেন। আজিজুলসহ তার সহযোগীরা সারাদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেন। আর ‍সুযোগ মতো চুরি করতেন। মেম্বার আজিজুলের নেতৃত্বে তার চার সহযোগী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়িতে রাতে গ্রিল কেটে অন্তত ৫০০ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে হাফিজ আক্তার বলেন, এই ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে তারা প্রাইভেটকার নিয়ে সারা ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ান। সময় সুযোগ বুঝে প্রাইভেটকারের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে প্রায়ই চুরি করেন। এমনকি তাদের ব্যবহৃত গাড়িটির নামে ঢাকার প্রতিটি থানায় নেটিশ করা আছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় নম্বর প্লেট পরিবর্তন করায় চিহ্নিত করা যেত না। এই গাড়িতেই তারা গ্রিলকাটা যন্ত্রাংশ রাখতেন। ছোটখাটো যা পায় টার্গেট করে দ্রুত গ্রিল কেটে বা দরজা ভেঙে চুরি করে মাদারিপুর নিজেদের বাড়িতে চলে যান।

হাফিজ আক্তার জানান, তারা বিভিন্ন স্থানে চুরি শেষে বেনারশি পল্লীতে মিলিত হন। সেখানে চোরচক্রের সদস্যরা তাদের স্ত্রীদের জন্য লেহেঙ্গা কেনেন। যদি পছন্দ না হয়! সেজন্য তারা শাড়িও কিনেন।

ছোট হোক, বড় হোক চুরির ঘটনা কমাতে হবে উল্লেখ করে হাফিজ আক্তার বলেন, চোর ও ছিনতাইয়ের ওপর স্পেশাল ড্রাইভ দেয়া হচ্ছে। সবগুলো ডিভিশন ও ডিবি ড্রাইভ দিচ্ছে। কারণ এ ধরনের উপদ্রবে বিরক্ত সাধারণ মানুষ। আমরা আশ্বস্ত করব এসব ঘটনা কমবে।ইতোমধ্যে আজিজুল হাকিম গ্রেপ্তার হয়েছে। তার বাকি সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি গ্রেপ্তারের রাতেই চারটি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা হয়েছে। একটি মামলা মাদারীপুরে হয়েছে।

রাজধানীতে সম্প্রতি চুরির ঘটনা বেড়েছে উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গত মাসে বিভিন্ন থানায় ৭৩টি চুরির মামলা হয়েছে। বাস্তবিক চিত্র এর চেয়েও বেশি। অল্প চুরির ঘটনায় আইনি জটিলতা ভেবে ভুক্তভোগীরা মামলাই করেন না। চুরির ঘটনা কমাতে চোরের ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকার চার হাজারের বেশি চোরের ডাটাবেজ পুলিশের কাছে আছে।

‘চোরের ডাটাবেজ তৈরির জন্য প্রতিটি থানাতেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চেষ্টা করছি, আমাদের পুলিশিং যেন বিশ্বমানের হয়। কোনো কোনো থানায় এখনো হাই ও ত্রিমাত্রিক ছবি তুলে সংরক্ষণ করে তা ডাটাবেজে তুলে রাখা হচ্ছে। একবার কোনো চোর ডাটাবেজে ঢুকলে পরবর্তিতে জেল থেকে বের হলেও সে সার্ভিলেন্সে থাকবে। সে সক্ষমতা আছে। এটা প্রতিনিয়ত চলতে থাকবে। চোর ভাল হলেও ডাটাবেজ থেকে যাবে। হয়তো তার বিরুদ্ধে ভাল হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। অপরাধীদের ডাটাবেজ যদি স্ট্রং না হয় তাহলে পুলিশিংয়ে সমস্যা হয়’—যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, যখনই কোনো একটি ঘটনা বাড়তে থাকে, তখনই তা কমানোর জন্য চেষ্টা করে ডিএমপি। এখন আমরা বিশেষভাবে চুরির ঘটনা মনিটরিং করছি। এটা নিয়ে কাজ করছি। চুরির ঘটনায় আমরা একটি ডাটাবেজ ডেভেলপ করেছি। ঢাকার চার হাজারের বেশি চোরের ডাটাবেজ সংরক্ষণ আছে। মনিটরিংগুলো করা হয়েছে, কে কীভাবে কোথায় চুরি করছে। কখনো দিনে, কখনো রাতে চুরি হচ্ছে। ফাঁকা বাসাতে চুরি হচ্ছে। দিনের বেলা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বেশি চুরি হয়। আর রাতে ফাঁকা বাসায় কাউকে স্পর্শ না করেই চুরি হচ্ছে।

হাফিজ আক্তার বলেন, ঢাকা শহরে মার্ডার কখনো বাড়ে কখনো কমে। আবার ডাকাতিও কখনো বাড়ে। ইদানিং ডাকাতির চেয়ে চুরি বেশি হচ্ছে। অপরাধীরা হয়তো মনে করছে চুরিটা বেশি নিরাপদ। চুরির পর ধরা পড়লেও দ্রুত জামিন পাওয়া যায়। তাছাড়া অল্প চুরির ঘটনায় থানায় রিপোর্টও করেন না অনেক ভুক্তভোগী।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, সম্প্রতি রাজধানীতে বড় বড় চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত ২০ আগস্ট কলাবাগান থানার ডলফিন গলিতে একটি বাসার গ্রিল কেটে বড় চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই বাড়ি থেকে ৭২ ভরি স্বর্ণ ও এক লাখ টাকা নিয়ে যায়। সেই চোরের দলকে তিনটি পিস্তল, গুলি, স্বর্ণ ও টাকাসহ গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টম্বর/এএইচ/ইএস