ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রাম সম্পর্কে জানুন

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:৩৪

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

এখানে দিনের শুরু হয় খুব সকালে। পাখি বাসা ছেড়ে বাইরে বের হওয়ার আগেই আখড়ায় আখড়ায় ভিড় জমে যায়। চলে মুগুর ভাঁজা, ডন-বৈঠক এবং কুস্তি। সকাল সকাল হাজারখানেক ডন-বৈঠক কোনো ব্যাপারই না এই যুবকদের কাছে। ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী লোকেরা নাকি থাকেন সে গ্রামে। জায়গার নাম অসোলা-ফতেহপুর বেড়ি।

ভারতের রাজধানী দিল্লির পার্শ্ববর্তী একটি পরিচিত এলাকা অসোলা-ফতেহপুর। গ্রামের যুবশক্তি সেখানকার ‘প্রাণ’। বস্তুত, দিল্লিসহ ভারতের বড় বড় রেস্তোরাঁ-বারের বাউন্সারের দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের সিংহভাগের ঠিকানাই অসোলা-ফতেহপুর বেড়ি।

শুধু বাউন্সারের চাকরিই নয়, রাজনীতিক থেকে ফিল্মস্টার, বেশির ভাগের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন অসোলা-ফতেহপুরের যুবকরা। কিন্তু এই গ্রামের বিশেষত্ব কী? কীভাবে সিংহভাগ যুবকের পেশিবহুল শরীর? কেনই বা বাউন্সারের চাকরি তাদের এতটা টানে?

কয়েক প্রজন্ম ধরে অসোলা-ফতেহপুরের বাসিন্দাদের দিন শুরু হয় ঘণ্টা দুয়েক কসরত করে। বিকালেও দুই ঘণ্টা ঘাম ঝরান তারা। বছরের পর বছর বড়দের দেখে শিখছে ছোটরা। কিশোর থেকে ৫০ পেরনো প্রৌঢ়- সবাই আখড়ায় লড়েন। ব্যায়াম করেন। ইট তোলেন। ধুলা মেখে লড়াই করেন। একসঙ্গে ঘাম ঝরান।

দিল্লির এই গ্রামের যুবকদের কাছে ভারোত্তোলন শখের খেলা। সময় কাটাতেও ব্যায়াম করেন তারা। কেউ কেউ ৩৫০ কেজি পর্যন্ত ওজন তোলেন। স্বাস্থ্যের বিষয়ে সবাই সচেতন। ভালো খাওয়া-দাওয়া করা, নেশা থেকে দূরে থাকা- এটাই তাদের সুস্বাস্থ্যের কারণ বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা।

কী খাওয়া-দাওয়া করেন এই যুবকরা? সংবাদমাধ্যমকে অসোলা-ফতেহপুরের বাসিন্দারা জানান, তাদের গ্রামে কেউ মদ্যপান করেন না। সিগারেট-বিড়ি বা তামাকজাত কোনো নেশায় কারও আসক্তি নেই।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, অসোলা-ফতেহপুরের সিংহভাগ বাসিন্দাই নিরামিষাসী। গ্রামের এমনই একটি আখড়ার প্রধান প্রশিক্ষক বলেন, ‘আমরা সবাই স্বাস্থ্যকর খাবার খাই এবং অবশ্যই সঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া করি। এটাই এখানকার দৈনন্দিন রুটিন। প্রতিদিন ভালো খাবার খাও এবং প্রতিদিন শরীরচর্চা করো, এটা এখানকার রীতির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

অসোলা-ফতেহপুরের বাসিন্দারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন ভারতের বিভিন্ন নাইটক্লাব, পাবে। কাজ করেন বাউন্সার হিসাবে। আসলে এখানকার যুবকদের আলাদা করে চাহিদা রয়েছে এই কাজে। তাদের দায়িত্ববোধ এবং নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন সবাই পছন্দ করেন। সংবাদমাধ্যমকে এমনটাই জানান দিল্লির একটি নাইটক্লাবের এক কর্মকর্তা।

তনওয়ার নামে এক যুবক কয়েক বছর আগে অলিম্পিকে কুস্তি লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কোনো কারণে তা হয়ে ওঠেনি। তারপর নেন বাউন্সারের চাকরি।

কেন বাউন্সারের কাজ বাছলেন? সংবাদমাধ্যমকে তনওয়ারের সহজ জবাব, ‘আমি এমন একটা কাজ খুঁজছিলাম যেখানে আমার পেশিশক্তি দেখাতে পারব। পাশাপাশি ভালো উপার্জন করতে পারব। সে ক্ষেত্রে বাউন্সারের চাকরি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো সুযোগ ছিল।’

এই তনওয়ার নাকি তার গ্রাম থেকে উঠে আসা প্রথম বাউন্সার। খেলাধুলা, সেনাবাহিনী ছাড়াও অসোলা-ফতেহপুরের বাসিন্দাদের সবচেয়ে বড় পছন্দের চাকরি বাউন্সারের।

তনওয়ারের দাবি, তাকে দেখেই পরে গ্রামের যুবকরা বাউন্সারের কাজ নিচ্ছেন এবং এখন সারা ভারতের ছোট-বড় শহরে কাজ করছেন তারা। তিনি জানান, গ্রামের কেউ নেশা করেন না। পুষ্টিকর খাবার খান। আর সবাই এই লোহার মতো শরীর তৈরি করেছেন কঠোর পরিশ্রম করে। কোনো সাপ্লিমেন্টের ধার ধারেন না তারা।

তনওয়ারের কথায়, ‘আমার দেখাদেখি গ্রামের বাকি যুবকরাও পরে বাউন্সারের চাকরি নিয়েছে। শুধুমাত্র দিল্লির ক্লাব এবং বারেই আমার গ্রামের ৩০০ ছেলে বাউন্সারের কাজ করছে।’

দিল্লির এই গ্রামের বাসিন্দারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, স্বাস্থ্যই সম্পদ। শুধু স্বাস্থ্যবানই নন, রুজিরোজগারেও তাদের সমান নজর। যেমন তনওয়ারই বলছেন পরিবারকে ভালো রাখা, সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়াতে কে না চায়! তারাও সেটা চান।

তবে শুধু বাউন্সারের চাকরির জন্য যে কসরত করেন সেটাও না। আসলে তনওয়ারের গ্রামের ঐতিহ্যই হচ্ছে সুস্থ্য সবল ভাবে বাঁচা। ব্যায়াম করলে মন ভালো থাকে। শরীর ভালো থাকে। ছোটখাটো চোট-আঘাত, জ্বর ইত্যাদি অসুখ চট করে কাহিল করতে পারে না।

ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে তাই সবাই ব্যায়াম করেন। সেই চর্চা আগামিদিনেও থাকবে বলে বিশ্বাস গ্রামবাসীর। শুধু শরীরচর্চা করেও যে তারা সবার থেকে আলাদা, সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/এজে)