স্বামীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ে ৩৪ বছর ধরে রওশনের লড়াই

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:২৫ | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪৪

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীতে গাড়িচাপায় নিহত হন দৈনিক সংবাদের তৎকালীন বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হক মন্টু। স্বামীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য ৩৪ বছর ধরে আদালতে আইনি লড়াই করছেন তার স্ত্রী অধ্যাপক রওশন আক্তার। ক্ষতিপূরণ মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায়ে মন্টুর পরিবারকে দুই কোটি এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ের আট বছরেও সেই ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি পরিবার।

মোজাম্মেল হক মন্টু ১৯৮৮ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর শান্তিনগরে আনন্দ ভবনের সামনে বাংলাদেশ ট্রান্সকম বেভারেজ কোম্পানির একটি মিনি ট্রাকের চাপায় আহত হন।১৬ ডিসেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

প্রয়াত মন্টুর স্ত্রী রওশন আক্তার দুই ছেলেকে নিয়ে পল্টনের একটি বাড়িতে বসবাস করছেন। ওই বাড়িটির একটি ফ্ল্যাট তিনি তার বাবার কাছ থেকে ওয়ারিশ হিসেবে পেয়েছেন। রওশন আক্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক হিসেবে অবসরে গেছেন অনেক আগে। এখন বয়সের ভারে অনেকটাই নুয়ে পড়েছেন তিনি।

রওশন আক্তার ঢাকা টাইমসের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে তার জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় ২৬ বছর অপেক্ষার পর  রায় পেয়েছি। এটা জাহাজের সঙ্গে ডিঙি নৌকার যুদ্ধ করার মতো অবস্থা। আমি অনেক ছোট মানুষ। একটি কোম্পানির সঙ্গে লড়াই করে অনেক কষ্টে মামলা চালিয়েছি।’

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন চাকরি করি, তখন এই ক্ষতিপূরণ মামলা করেছিলাম। এখন আমি অবসরে। জীবন-যৌবন সবই শেষ। এটা বুঝতে হবে- কোনো মানুষকে ধৈর্য্য হারালে হবে না। যথাযথ জায়গায় প্রতিকার চাইলে পাওয়া যায় এ রায়ের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হয়েছে।’

১৯৮৮ সালের ৩ ডিসেম্বর শান্তিনগরে আনন্দ ভবনের সামনে বাংলাদেশ ট্রান্সকম বেভারেজ কোম্পানির একটি মিনি ট্রাকের চাপায় দৈনিক সংবাদের তৎকালীন বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হক মন্টু গুরুতর আহত হন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।

১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ট্রান্সকম বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেড এবং ট্রাক ড্রাইভারের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ঢাকা তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন রওশন আক্তার। ওই মামলায় ২০০৫ সালের ২০ মার্চ আদালত ট্রান্সকম বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেডকে দুই কোটি ৫২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ট্রান্সকম বেভারেজ কোম্পানি হাইকোর্টে আপিল আবেদন করে।

ওই আবেদনের বিষয়ে ২০১০ সালের ১১ মে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে মন্টুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই কোটি এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ফের আপিল করে ট্রান্সকম বেভারেজ কোম্পানি।

২০১৪ সালের ২১ মে  রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে মোজাম্মেল হক মন্টুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ে মন্টুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই কোটি এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আদালতে মোজাম্মেল হকের স্ত্রী রওশন আক্তারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খলিলুর রহমান। অন্যদিকে বাংলাদেশ ট্রান্সকম বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (পেপসিকোলা) পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।

আপিল বিভাগের রায়ের আট বছর পার হয়ে গেলেও মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি। কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি পরিবারটি। পরে ট্রান্সকম বেভারেজ কোম্পানির সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ের জন্য আদালতের দারস্থ হন রওশন আক্তার। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও ওই সম্পত্তি কেনার জন্য কেউ আগ্রহ দেখায়নি। চলতি মাসের ২১ তারিখেও এই মামলার ধার্য তারিখ ছিল।

রওশন আক্তার বলেন, এখন আদালত কী করবেন সেই অপেক্ষায় আছি। আমরা চাই আদালত ওই সম্পত্তি বিক্রি করে আমাদের ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিক। কারণ এত বড় কোম্পানির সঙ্গে আমরা যুদ্ধ করে পারবো না।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/এএ/এফএ)