পবিত্র জুমার দিনে দোয়া কবুলের বিশেষ সময়

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪৪

ইসলাম ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

পবিত্র জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর ইবাদত-বন্দেগির নির্ধারিত দিন। দিনটিকে সাদরে গ্রহণ করেছেন মুমিন মুসলমান। এ দিনের ফজিলত অনেক বেশি। জুমার দিনের ফজিলতগুলো হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ওঠে এসেছে। বিশেষ কারণে দিনটি মর্যাদার দাবি রাখে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সূর্য উঠা দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এ দিন আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিন তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, এ দিনটিতেই কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম)

ইসলামে জুমার গুরুত্ব এতই ব্যাপক যে, কোরআন শরিফের একটি সুরার নামই রাখা হয়েছে সুরা ‘জুমা’। এ থেকে বুঝা যায়, আল্লাহতায়ালা জুমাকে কত মহান গুরুত্বই না দিয়েছেন।
জুমার দিন এমন অসাধারণ একটি নেয়ামতের সময় আছে, যে সময়টাতে দোয়া কবুল হওয়ার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, 'জুমার দিনে একটি সময় আছে, যে সময়টা কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন এবং তিনি (রাসূল সা.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।' (বুখারি)

পবিত্র কোরআনে জুমার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝো’ (সুরা জুমা: আয়াত ৯)। ইসলামে জুমার দিনের নামাজের যে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে তা এই আয়াত স্পষ্ট করে।

হাদিসে জুমার নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি, এ চার প্রকার মানুষ ছাড়া সব মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য।’ (আবু দাউদ)

জুমার দিনে এমন এক মুহূর্ত আসে যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দার দোয়া গ্রহণ করেন। তবে কিছু বিশেষ সময়-মুহূর্ত রয়েছে যখন দোয়া খুব দ্রুত কবুল হয়, বিশেষ করে জুমার দিন। সেই সময় কোনো মুসলমান দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন।

হাদিস শরীফে এসেছে, অর্থাৎ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন— “জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন কোনো মুসলমান আল্লাহ তায়ালার কাছে যা কিছু প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তা দান করবেন। কাজেই তোমরা আসরের পর দিনের শেষ মুহূর্তে সে সময়টা তালাশ করো” (আবু দাউদ: ১০৪৮)।

অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে দিনগুলোয় সূর্য উদিত হয় তন্মধ্যে সর্বোত্তম জুমার দিন, যেদিন হযরত আদম (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যেদিন তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল, যেদিন তাকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করা হয়েছিল। এই দিনে এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোন মুসলমান নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা দান করবেন।

হযরত আবু বুরদা ইবনে আবু মুসা আশআরী (রা.) বলেন, হযরত ইবনে উমর (রা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার পিতার কাছ থেকে জুমার প্রহরের মহিমা সম্পর্কে কোনো হাদীস শুনেছ? আমি বললাম হ্যাঁ শুনেছি, তিনি বলেছেন আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, জুমার দিন মহিমান্বিত মুহূর্তটি হচ্ছে ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম শরীফ ১৯৭৫)

এ সকল হাদিসের আলোকে আলেমগণ জুমার দিন মহিমান্বিত প্রহর ও গ্রহণযোগ্য মুহূর্ত দু’টি নির্ধারণ করেছেন, ১. খুতবা শুরু ও নামাজ শেষ হওয়ার মধ্যবর্তী সময়। ২.আছরের পর সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্বে।
তাই অন্তরে কবুলের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করবে, আল্লাহ তায়ালা সবার দোয়াই কবুল করেন। তবে দোয়া কবুলের পদ্ধতি-রুপরেখা ভিন্ন, কখনো যা চাওয়া হয় তাই দেন, কখনো কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদাপদ দূর করে দেন, আবার কখনো নিজ অভিপ্রায়-কর্মকুশলতায় বান্দার পরকালের জন্য স্টোরেজে রেখে দেন। মনে দৃঢ় বিশ্বাস-প্রত্যয় নিয়ে ক্রন্দন করে, আগে-পরে দরুদ শরীফ পাঠ করে, দোয়ার আদব ও কবুলের বিশেষ সময়-মুহূর্ত বিবেচনা করে গোলামের মতো আল্লাহর কাছে বারবার দোয়া করবে। আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও নিরঙ্কুশ শাসক, তিনি যেভাবে ইচ্ছা গ্রহণ করবেন।
হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে এলো, এরপর সাধ্যমত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করলো, এরপর ইমামের খুতবাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকলো; এরপর ইমামের সঙ্গে (জুমার) নামাজ আদায় করল, এতে তার দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনসমূহ এবং আরো তিন দিন (মোট ১০ দিনের) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায়ের জন্য উত্তমরূপে অজু করে (মসজিদে) উপস্থিত হয়, এরপর চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুত্ববাহ শুনে, তার (ঐ) জুমা থেকে (পরবর্তী) জুমা পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর কুচি অপসারণ বা নাড়াচাড়া করলো সে অনর্থক কাজ করলো।’ (আবু দাউদ)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাঁকে তা দান করবেন। (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কখন? এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। যা হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সে সময়টি হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা, তিরমিজি)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার মিম্বারের সিড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, ‘যারা জুমার নামাজ ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল (মোহর) মেরে দিবেন; এরপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (মুসলিম)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন আগে আগে মসিজদে যাওয়া। দিনটি ইবাদত-বন্দেগি ও ভালো কাজে অতিবাহিত করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের হক আদায় করে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/আরজেড)