সহজে নিরাপদ থাকার বার্তায় অক্টোবর মাসব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা কর্মসূচি

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:১১ | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

‘নিরাপদ অনলাইন কঠিন তো নয়, সতর্ক থাকলেই হয়’- এই প্রতিপাদ্যে মাসজুড়ে সারাদেশে নেওয়া হয়েছে সপ্তম সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (ক্যাম) অক্টোবরের কর্মসূচি। মোবাইল ফোন অপারেটর রবি এবং প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সাইবার প্যারাডাইজের পৃষ্ঠপোষকতায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অক্টোবর মাসব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা কর্মসূচি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস বিষয়ক জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে মাসব্যাপী কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন কমিটির সদস্য ও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মো. মুশফিকুর রহমান। বক্তব্য রাখেন রবির সাইবার সিকিউটি অ্যান্ড প্রাইভেসি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্তী, ক্যাম্পেইন পার্টনার ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির যুগ্ম মহাস‌চিব মো. আবদুল কাইউম রাশেদ, ক্যাম জাতীয় কমিটির সমন্বয়ক কাজী মুস্তাফিজ, কমিটির সদস্য মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন ও আবুল হাছান।

এ সময় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইডিতে বহুস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, নিয়মিত সফটওয়্যার হালনাগাদ ও ফিশিং চেনার উপায়- এই চারটি বিষয় মেনে চললে অনলাইনে ব্যবহারকারী নিজেই অনলাইনে নিজের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে পারবেন।

রবির সাইবার সিকিউটি অ্যান্ড প্রাইভেসি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ক্রমেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে সাইবার ঝুঁকি। আগে রবির গ্রাহকদের ৪০ শতাংশ ফোর জি ব্যবহার করতো, যা এখন ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রত্যেক ব্যবহারকারীকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকার কোনো বিকল্প নেই।

ক্যাম্পেইন পার্টনার ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির যুগ্ম মহাস‌চিব মো. আবদুল কাইউম রাশেদ বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে অক্টোবর মাসব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েছে আইএসপিএবি। সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহকদের সচেতনতায় গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। 

ক্যাম জাতীয় কমিটির সমন্বয়ক কাজী মুস্তাফিজ বলেন, ইউরোপ আমেরিকায় যেভাবে অক্টোবর মাসব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মসূচি রাষ্ট্রীয়ভাবে নেওয়া হয়, সেদিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তৃণমূল পরযায়ে প্রত্যেক প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর কাছে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছানো খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এই ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

২০২২ সালে বাংলাভাষীদের জন্য ‘নিরাপদ অনলাইন কঠিন তো নয়, সতর্ক থাকলেই হয়’ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস বিষয়ক জাতীয় কমিটি। এই বছরের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চান যে, আপনার তথ্য সুরক্ষিত রাখার সব ধরনের উপায় আছে। মাত্র চারটি মূল পদক্ষেপ অনুসরণ করলে সাইবার নিরাপত্তা বজায় রাখা কঠিন হবে না। কয়েকটি ক্লিকের  আপনি অনলাইনে আপনার তথ্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে পারেন বলে জানায় সংগঠনটি।

জানানো হয় অক্টোবরের প্রতি সপ্তাহে আলাদা একটি করে চারটি বিষয়ে কর্মসূচি হবে। প্রথম সপ্তাহ: মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু করুন, দ্বিতীয় সপ্তাহ: শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, তৃতীয় সপ্তাহ: আপনার সফ্টওয়্যার আপডেট করুন এবং চতুর্থ সপ্তাহ: ফিশিং চিনুন এবং রিপোর্ট করুন।

মাসব্যাপী ক্যাম ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সচেতনতার বার্তা সারাদেশে পৌঁছে দিতে যেকোনো ব্যক্তি/সংগঠনকে এই কর্মসূচিতে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে ক্যাম জাতীয় কমিটি। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনলাইনে www.cyberawarebd.com এ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে বাংলা টুল‌কিটসহ বিনামূল্যে বিভিন্ন উপকরণ পাবেন এবং এর মাধ্যমে প্রচারাভিযান করতে পারবেন।

তৃণমূল ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মাসব্যাপী সারাদেশে এসএমএস ক্যাম্পেইন, ৬৪ জেলা থেকে শতাধিক তরুণ-তরুণীকে ঢাকায় যুব কর্মশালার আয়োজন, সাইবার সুরক্ষা বিষয়ক আলোচনা সভা, প্রতি সপ্তাহে বিশিষ্টজনদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক ওয়েবিনার, ডিজিটাল পোস্টার ডিজাইন প্রতিযোগিতা, স্যোশাল মিডিয়ায় মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন। 

আমেরিকার ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিআইএসএ) পৃথিবীজুড়ে সাইবার সচেতনতা মাসের এই ক্যাম্পেইনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত বছর বিশ্বের ৭৫টির বেশি দেশের অগণিত বাণিজ্যিক-সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের অসংখ্য ‘সাইবার চ্যাম্পিয়ন’ সাইবার সচেতনতা মাসের কর্মসূচিতে অংশ নেয়। 

বাংলাদেশে ২০১৬ সালে সিসিএ ফাউন্ডেশন এই কর্মসূচির সূচনা করে। ২০২১ সালে ক্যাম জাতীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে তৃণমূলের সামাজিক সংগঠকদের যুক্ত করা শুরু হয় এবং গত বছর এই ক্যাম্পেইনে সারাদেশ থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান (৪৯টি) চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা পোস্ট করা, বিভিন্ন ধরনের রিসোর্স তৈরি, প্রবন্ধ রচনা ও প্রকাশ, অনলাইন ইভেন্ট পরিচালনা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসের চ্যাম্পিয়নবৃন্দ দেশের নাগরিকদের সাইবারজগতে নিরাপদ হতে সহযোগিতা করেছে। এ বছরও এই কর্মসূচিকে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/কেআর/কেএম)