সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর শুরু: ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকার চার কৌশল প্রচারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৫২ | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২, ০৮:২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সাইবারজগতে দেশের মানুষের নিরাপদ পরিভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যাসগত পরিবর্তন আনা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই দেশে সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি তৈরি গড়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা। এর অংশ হিসেবে শনিবার সাইবার নিরাপত্তা মাস অক্টোবরের শুরু থেকে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। মোবাইল ফোন অপারেটর রবি এবং প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সাইবার প্যারাডাইজের পৃষ্ঠপোষকতায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

পুরো অক্টোবর মাস ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকার চারটি কৌশল শেখাতে প্রচার চালাবে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস বিষয়ক জাতীয় কমিটি (এনসিক্যাম)। ‘নিরাপদ অনলাইন কঠিন তো নয়, সতর্ক থাকলেই হয়’- এই প্রতিপাদ্যে পালিত হবে এসব কর্মসূচি।  অনলাইনে ব্যবহৃত আইডিতে বহুস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, নিয়মিত সফটওয়্যার হালনাগাদ ও ইন্টারনেটে ফিশিং চেনার উপায়-এই চারটি বিষয় মেনে চললে অনলাইনে ব্যবহারকারী নিজের নিরাপত্তাবলয় নিজেই তৈরি করতে পারবেন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০০৪ সাল থেকে বিশ্বে অক্টোবরকে পালন করা হয় সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস হিসেবে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই কর্মসূচির মাধ্যমে নিরাপদ ইন্টারনেটের বার্তা পৌঁছে দিতে ২০২১ সাল থেকে প্রযুক্তিবিদ, আইনজীবী ও করপোরেট ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠন হয়েছে ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস বিষয়ক জাতীয় কমিটি (এনসিক্যাম)। দেশে ২০১৬ সাল থেকে মূলত অক্টোবর মাসের এই কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে স্বেচ্ছোসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ ফাউন্ডেশন)। এই সংগঠনের উদ্যোগেই গঠন হয় এ বিষয়ক জাতীয় কমিটি। 

‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর ২০২২’ উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এনসিক্যাম। এতে মাসব্যাপী কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন জাতীয় কমিটির সদস্য ও সিসিএ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মো. মুশফিকুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রবির সাইবার সিকিউটি অ্যান্ড প্রাইভেসি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্তী, ক্যাম্পেইন পার্টনার ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির যুগ্ম মহাসচিব মো. আবদুল কাইউম রাশেদ, ক্যাম জাতীয় কমিটির সমন্বয়ক কাজী মুস্তাফিজ, কমিটির সদস্য মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন ও আবুল হাছান।

মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘অনলাইনে ফিশিং হলো মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে ম্যানুপুলেট করা। এর মাধ্যমে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে হয়তো টাকা কিংবা সম্পর্ক তৈরির প্রলোভনে কোনো সাইটে ক্লিক করার মাধ্যমে তাকে অনিরাপদ ওয়েবসাইটে নিয়ে যায়। ফলে ব্যক্তির তথ্য হাতিয়ে নেয় অথবা টাকা আদায় করে নিতে পারে প্রলোভন দেখিয়ে।’

রবির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, 'ইন্টারনেট ব্যবহারের ভালো দিকও আছে, খারাপ দিকও আছে। সেজন্য দেখে-শুনে নিরাপত্তা নিয়ে ইন্টারনেট চালাতে হবে।'

আপনিও যুক্ত হতে পারেন: কাজী মুস্তাফিজ জানান, অক্টোবর মাসের প্রতি সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে অ্যাকাউন্টে একাধিকস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, নিয়মিত সফটওয়্যার হালনাগাদ, ফিশিং আক্রমণ চেনা ও অভিযোগের পদ্ধতি শেখাতে প্রচার কার্যক্রম চালানো হবে। সারা দেশে এ প্রচারের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুকে যুক্ত করারও উদ্যোগ নিয়েছে এ বিষয়ক জাতীয় কমিটি। cyberawarebd.com ঠিকানার ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে যেকোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন।

আইএসপিএবির যুগ্ম মহাসচিব মো. আবদুল কাইয়ুম রাশেদ বলেন, আমরা এই সচেতনতা কর্মসূচিকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেবো। সাইবার নিরাপত্তার প্রথম ধাপ নিজের সচেতনতা। সফটওয়্যার আপডেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপডেট চাইলে সঙ্গে সঙ্গে আপডেট করে নিতে হবে। কারণ বিশ্বের কোথাও কোনো সমস্যা হলে সফটওয়্যার কর্তৃপক্ষ এই আপডেট করে। কোনো লিঙ্কে ক্লিক করার আগে জানতে হবে এটাতে কোনো ফিশিং আছে কি না।

ক্যাম জাতীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ কাওছার উদ্দিন বলেন, আইএসপিএবি, রবিসহ বিভিন্ন কোম্পানির উচিত এ ধরনের সচেতনতা কার্যক্রম চালু করা। শুধু অক্টোবর মাসই নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলগুলোতে এক জরিপে দেখা গেছে অধিকাংশ মেয়ের পাসওয়ার্ড তার ক্লোজ বন্ধু জানে। এটা একটি খারাপ বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের যদি এমন অবস্থা থাকে তাহলে সারা দেশের কী অবস্থা। তাই সারা বছর এই সচেতনতা চালু রাখতে হবে এবং তা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। 

অক্টোবর মাসে জাতীয় কমিটির কর্মসূচি: জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে মাসব্যাপী সারা দেশে ক্ষুদেবার্তা প্রচারের (এসএমএস) ক্যাম্পেইন, ৬৪ জেলা থেকে অন্তত ১০০ জন তরুণ-তরুণীকে ঢাকায় যুব কর্মশালার আয়োজন, সাইবার সুরক্ষা বিষয়ক আলোচনা সভা, প্রতি সপ্তাহে বিশিষ্টজনদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক ওয়েবিনার, ডিজিটাল পোস্টার ডিজাইন প্রতিযোগিতা, স্যোশাল মিডিয়ায় মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন ইত্যাদি।

আমেরিকার ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিআইএসএ) পৃথিবীজুড়ে সাইবার সচেতনতা মাসের এই ক্যাম্পেইনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত বছর বিশ্বের ৭৫টির বেশি দেশের অগণিত বাণিজ্যিক-সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের অসংখ্য ‘সাইবার চ্যাম্পিয়ন’ সাইবার সচেতনতা মাসের কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

২০২১ সালে এনসিক্যামের উদ্যোগে এই ক্যাম্পেইনে সারাদেশ থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান (৪৯টি) চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা পোস্ট করা, বিভিন্ন ধরনের রিসোর্স তৈরি, প্রবন্ধ রচনা ও প্রকাশ, অনলাইন ইভেন্ট পরিচালনা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসের চ্যাম্পিয়নবৃন্দ দেশের নাগরিকদের সাইবারজগতে নিরাপদ হতে সহযোগিতা করেছে। এ বছরও এই কর্মসূচিকে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০১অক্টোবর/আরকে/কেএম)