যে নিয়ম মানলে মিলবে প্রশান্তির ঘুম

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর ২০২২, ১০:৩৩

দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থতা বজায় রাখতে ঘুমের বিকল্প নেই। একজন মানুষের রাতের ঘুমের ব্যাপ্তি গড়পরতায় ৮ ঘণ্টার কাছাকাছি হওয়া উচিত এটা কমবেশি সবারই জানা। কিন্তু স্লিপ ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতি ৩ জনে ১ জন ঘুমজনিত নানারকম সমস্যায় ভুগছে। যেমন- দীর্ঘদিন যাবত হাড়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, হতাশা, উদ্বিগ্নতা, নাক্রোলেপসির মতো জিনগত কারণ (একধরনের নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার), বয়স বেড়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন রকম ওষুধ সেবন, যেমন-কিছু কিছু এন্টিডিপ্রেসেন্ট, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক ওষুধ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।

ভালো ঘুমের জন্য রয়েছে বেশ কিছু পন্থা। রাতের পর্যাপ্ত ঘুম একজন ব্যক্তির সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির সঞ্চার করে এবং এর ফলে স্নিগ্ধ অনুভূত হয়। রাতে ভালো ঘুমের জন্য কিছু কিছু কাজ দৈনন্দিন অভ্যাসের আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব কম ঘুম বা খুব বেশি ঘুম কোনোটাই স্বাভাবিক নয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে চার থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম স্বাভাবিক এবং ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম হলো আদর্শ। দেখা গেছে, যারা নয় ঘণ্টা বা এর চেয়ে বেশি ঘুমান, তাদের মধ্যে বিভিন্ন রোগের প্রবণতা বেশি।

প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা এখন অনেক সময় ব্যয় করি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটে। এর একটা প্রভাব পড়ে মনোজগতে। এর ফল হিসাবে সময়মতো ঘুম না আসার মতো সমস্যাগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে।

প্রতিদিন নিশ্চিন্তে ৬ থেকে ৮ ঘন্টার ঘুম না হলে প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, হজমের সমস্যা, হৃদরোগের ঝুঁকি, হতাশা, ওজন বৃদ্ধি এমনকি চোখের সমস্যাও হতে পারে। সারাদিন পরে ঘুম যেমন-তেমন করে হলে তা শরীরের উপর প্রভাব আনে।

ভালো ঘুম না হলে সেটা শরীর ও মনকে নেতিবাচক প্রভাবিত করতে পারে৷ এবং তার প্রভাব পরের দিনের কাজের ওপর পড়বে৷ তাই রাতে শান্তি মতো ঘুমানোটা খুবই দরকার৷

পিঠের উপর ভর দিয়ে ঘুমানো অর্থাৎ চিৎ হয়ে ঘুমানো অনিদ্রা মোকাবিলা করার সেরা উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম৷ কারণ এটি আপনার মাথা, ঘাড় ও মেরুদন্ডকে নিরপেক্ষ অবস্থানে বিশ্রাম দেয়৷ যদিও ঘুমানোর এই অবস্থানটি জনপ্রিয় না৷ তবে বিশেষঞ্জরা নিশ্চিত করেছেন এটি ভালো ঘুমের জন্য সর্বোত্তম পছন্দগুলোর মধ্যে একটি৷

উত্তর দিকে মাথা করে কখনোই ঘুমানো উচিত নয়। কারণ হিসেবে বলা রয়েছে, উত্তর মেরুতে পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র রয়েছে। তাই শরীরের উত্তর মেরুও সেদিকে রাখলে দুই মেরু মিলে যায়। এতে ঘুমে সমস্যা হয়, অনিদ্রা, ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখা, আচমকা ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি শরীরে রক্তের সঞ্চালন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়, কোলেস্টেরল বেড়ে যায়।

দক্ষিণ দিকে মাথা দিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস ভালো। এই দিকে মাথা দিয়ে ঘুমালে নাকি ধন সম্পদ বৃদ্ধি পায়, সংসারে সুখ আসে। যদিও দক্ষিণ দিকেও মাথা দিয়ে ঘুমানোর পক্ষপাতী নন অনেকে। তাদের মতে, পূর্ব দিকে মাথা দিয়ে ঘুমালে শরীরে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। আবার কেবলা মুসলমানদের জন্য অনেক মর্যাদার স্থান। তাই মুসলমানরা পশ্চিম দিকে মাথা দিয়ে ঘুমানোর পক্ষপাতী।

রাতে বেশিক্ষণ জেগে থাকলে ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে, সম্প্রতি আমেরিকার এক দল গবেষক এমনটাই দাবি করলেন। তাদের মতে, সকালে যারা তাড়াতাড়ি ওঠেন তাদের তুলনায় রাতে যারা দেরি করে ঘুমোন তাদের শরীরে মেদ পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা কমে যায়। আর সেই কারণেই রাতজাগাদের ডায়াবিটিস ও হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। সকালে যারা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠেন তাদের মেদ দ্রুত ঝরে, দেহে সারা দিনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন হয়। তারা সারাদিন অনেক বেশি চনমনে থাকেন।

গবেষকদের মতে, যারা রাতে অনেক ক্ষণ জেগে থাকেন তাদের শরীরে মূল শক্তি উৎপাদন হয় কার্বহাইড্রেট থেকে। শারীরবৃত্তীয় চক্রে অনিয়মের জন্যই এমনটা হয়। গবেষকদের মতে, রাতে দেরি করে ঘুমোলেও সকালে কাজের তাড়ায় তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে হয় অনেককেই। আর তাই আট থেকে ন’ঘণ্টার ঘুম সম্পন্ন হয় না। আর সেখানেই হয় বিপত্তি। যারা অফিসে রাতের শিফটে কাজ করেন তাদের মধ্যে ওবিসিটি, ডায়বিটিস ও হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যদি কারও ভালো ঘুম না হওয়ার সমস্যা থাকে, তাহলে কয়েকটা ছোট্ট উপায় মেনে চললেই ঘুমের সমস্যা কেটে যাবে।

ঘুমোতে যাওয়ার ৯০ মিনিট আগে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করা।

ঘুমের সময়টায় টিভি চালিয়ে রাখবেন না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে ল্যাপটপ, মোবাইলের মতো যন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করে দিন। রাত জেগে সামাজিক ট্যাব, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মোবাইলে সময় কাটালে তা শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে এবং ঘুম নষ্টের কারণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঘুমানোর সময়ে দুটো পায়ের মাঝখানে একটা বালিশ রেখে শুলে ভালো ঘুম হয়।

ঘুমের সময় সঠিকভাবে শোওয়া জরুরি। বালিশের মাঝামাঝি জায়গায় মাথা রাখুন।

কাজের মাঝখানে ঘুম পেলেও ঘুমোবেন না। প্রয়োজনে সেই সময়টা কারও সঙ্গে কথা বলে ঘুম কাটিয়ে নিন। তবেই রাতে ভালো ঘুম হবে।

যদি কোনও নির্দিষ্ট সময়ে ওঠার তাড়া না থাকে, তাহলে অ্যালার্ম ঘড়িটাকে ড্রয়ারের মধ্যে বা অন্য কোথাও সরিয়ে রাখুন।

একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। যাতে অ্যালার্ম ঘড়ির দরকার না পড়ে।

সারাদিনে যে কোনও সময়ে কিছুটা নিয়ম করে শরীরচর্চা করলে ভালো ঘুম হয়।

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চাইলে তুলনামূলক ঠান্ডা স্থান নির্বাচন করুন। ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাতাস প্রবেশ না করলে সেখানে ঘুমের সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। ঘুমানোর জন্য ঠান্ডা ঘর এবং শোবার জায়গা ঠান্ডা নির্বাচন করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

খালি পেটে কখনো শুতে যাবেন না। আবার রাতে গুরুপাকও খাবেন না। ভরা পেটে শুতে যাওয়া ঠিক নয়। ঘুমাতে যাওয়ার বেশ কিছু আগেই রাতের খাবার খেয়ে নিন। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন। দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান যা আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে। দুধ খুব বেশি গরম না হওয়া ভালো।

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সিগারেট, তামাক, চা, কফি না খাওয়াই ভালো। ঘুমের ওষুধ খাবেন না। ঘুম না হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

(ঢাকাটাইমস/০১ অক্টোবর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

দেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা, ঢাকা কতটা ঝুঁকিতে?

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস: জানুন মশাবাহিত এ রোগ প্রতিরোধের উপায়

গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :