দলের ভেতরে বাইরে সাধারণ সম্পাদক নিয়ে আলোচনা

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৪৪

জাফর আহমেদ, ঢাকাটাইমস

স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানান আলোচনা। কেবল আওয়ামী লীগেই নয় দলের বাইরেও আগ্রহ অনেক। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে এবার কে আসছেন সেটিই এই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

আওয়ামী লীগ বরাবরই চেষ্টা করে জাতীয় কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে নেতা নির্বাচনে নতুনত্ব আনার। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সভাপতির পরই সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান। ফলে এ পদে পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদের ঠাঁই হয়। অতীতের কাউন্সিল তাই প্রমাণ দেয়।

আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ২২তম কাউন্সিল করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামী ডিসেম্বরে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে ক্ষমতাসীনদের দলটি। তবে সব ছাপিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন তার দিকেই সবার নজর। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে  আলোচনা। তবে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।

এ বিষয়ে নিয়ে ঢাকা টাইমসের পক্ষ থেকে কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ হয়। তাদের প্রত্যাশা, দলকে সার্বক্ষণিক সময় দিতে পারবে, সংকটে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এগিয়ে নেবে এবং শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ও মতমতাদর্শী হয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চিন্তাচেতনা ফুটিয়ে তুলবেনÑএমন নেতাই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আসুক।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ১৫ মাস বাকি। তাই ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের এবারের জাতীয় সম্মেলনের গুরুত্ব অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি। তাই আওয়ামী লীগকে সাধারণ সম্পাদক বাছাইয়ে অনেক কৌশলী হতে হবে।

নেতাকর্মীরা ঢাকা টাইমসকে বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগকে এবার নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হওয়ার বিকল্প নেই। তাই তারা এমন সাধারণ সম্পাদক চানÑযিনি অহঙ্কারী হবেন না, নেতাকর্মরা সহজেই তাকে পাবে, মাইম্যান সৃষ্টি না করে দলের জন্য নিবেদিতদের সবসময় মূল্যায়ন করবেন। দলের জন্য কাজ করে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে এগিয়ে নেবেন।

নেতাকর্মীদের আগ্রহ কে হচ্ছেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক? বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব পেয়ে হ্যাটট্রিক করবেন? না কি সম্পাদক পদে নতুন মুখ পাচ্ছে নেতাকর্মীরা? সম্পাদকের পদ ছাড়াও বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সব পদ নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই। নতুন কমিটিতে বর্তমান কমিটির কারা কারা ঠাঁই পেতে পারেন আর বাদ পড়তে পারেন তা নিয়েও আছে জোরালো আলোচনা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির বেশ কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে ঢাকা টাইমস প্রতিবেদকের কথা হয়। তাদের মতে, আগামী নির্বাচনে তৃণমূলকে সক্রিয় ও শক্তিশালী রাখার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককের দায়িত্ব কাকে দিলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে পারবে সেটাই হলো মূল নেতৃত্ব যাচাই করার প্রক্রিয়া।

গত জুন এবং আগস্ট মাসে দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও সাংগঠনিক সম্পাদককের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দুই বৈঠকে ছিলেন এমন বেশ কজন নেতার সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়।

জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলন আর তার আগে বিভাগীয় কমিটি করে দলকে ঢেলে সাজানোর নিদের্শনা দিয়েছেন দলীয় প্রধান। এছাড়া প্রতিটি বিভাগীয় সাংগঠনিক জেলার আলাদা তথ্য মেনে জাতীয় সম্মেলন ও নির্বাচন উপলক্ষে তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনার পর জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা।

দলীয় সূত্র বলছে, যেসব নেতাকর্মীরা দলের মধ্যে থেকে  ‘পারফর্মেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন’ এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে দলের সুনাম নষ্ট করেছে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে তাদের কপাল পুড়তে পারে। এর মধ্যে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা কয়েকজন এমপির নামও শোনা যাচ্ছে। এছাড়া ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন সাবেক নেতা এবার নতুন করে কমিটিতে জায়গা পেতে পারেন।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আসছে যাদের নাম:

আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আসছে শীর্ষ পর্যায়ের ছয় নেতার নাম। তাদের মধ্যে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেমন আছেন তেমনি আছেন সভাপতিমণ্ডলির তিন সদস্য আর দুজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নাম। সভাপতিমণ্ডলির তিন সদস্য হলেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুজন হলেনÑড. হাছান মাহমুদ ও মাহবুব উল আলম হানিফ। এছাড়া শেখ পরিবারের আরও দুজনের নামও নেতাকর্মীদের মুখে আলোচনায় আছে।

তৃণমূলের প্রত্যাশা:

ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাবু অনল কুমার দে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি যাকে বাছাই করবেন আমরা তাকেই সমর্থন জানাবো।’

চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দীন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কর্মীবান্ধব আর দলের সকল নেতাকর্মীদের খোজঁখবর রাখবেন এমন সাধারণ সম্পাদকই প্রত্যাশা করি আমরা।’

সিলেট বিভাগের সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আমরা সম্মেলনে   কাউন্সিলর হিসেবে থাকি। আমরা চাই দলের সাধারণ সম্পাদক হোক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। যিনি সকল জেলার নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর রাখবেন দলের জন্য নিবেদিত থাকবে শুধু দলকে এগিয়ে নিবেন।

বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাকে বানাবেন একমাত্র দলের সভাপতি শেখ হাসিনাই ভালো জানেন। তিনি যা করবেন আমরা সেটার প্রতিই আস্থাশীল। তবে আমরা মাঠের নেতাকর্মীরা চাই দলের সাধারণ সম্পাদক হবে দলের প্রতি আস্থাশীল, নিবেদিত, সদা সক্রিয় আর সবসময় নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখবেন।’

রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা তৃণমূল আওয়ামী লীগ থেকে চাইবো দলের সাধারণ সম্পাদক হবেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তিনি সবসময় আমাদের খবর রাখবেন। আমাদের কথা শুনবেন। ভালো মন্দ দেখবেন।’

খুলনা বিভাগের যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ঢাকা টাইমসকে বলেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দলের মধ্যে মাইম্যান সৃষ্টি করেননি, গ্রুপিং করেননি। তবে দলের সভাপতি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তার প্রতি আমরা একমত পোষণ করবো।’

রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম লাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা সাধারণ সম্পাদক এমন নেতাকে চাই সব কিছুতেই তৃণমূল নেতাকর্মীরা যেন তাকে সহজেই পান।’

ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান আতিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকে সাধারণ সম্পাদক করবেন আমরা তাকেই মানবো।’

(ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/ডিএম)