গাঁট ও বাতের ব্যথা নিরাময়ে রসগোল্লা

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১১:০৯ | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৪৩

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

বাঙালি চিরকালই খাদ্যরসিক। বাঙালির শেষপাতে মিষ্টি যেন চাই-ই চাই। অনেকের আবার মিষ্টি না হলে খাওয়াটা যেন পরিপূর্ণ হয় না। মিষ্টির দোকানে গেলেই যে মিষ্টির দিকে সবার আগে নজর যায়, তা হল রসগোল্লা। বাড়িতে রসগোল্লা নিয়ে এলে টপটপ মুখে দিত দারুণ লাগে ৷ মিষ্টি শুধু বাংলাদেশ কিংবা ভারতে নয় বিদেশেও অনেক জায়গায় জনপ্রিয়।

বাঙালির সব কিছুতেই রসগোল্লা জড়িত। আনন্দের উপলক্ষ বা দুঃখের মুহূর্ত, বেশিরভাগ সময়ই রসগোল্লা মুখ মিষ্টি করে তোলে। সাধারণ রসগোল্লা (সাদা রঙের ছোলার বল রসে ডুবিয়ে) ছাড়াও আজকাল বিভিন্ন ধরনের রসগোল্লা (গুড়ের রসগোল্লা, কমলাভোগ, চকলেট রসগোল্লা, স্ট্রবেরি রসগোল্লা, আমের রসগোল্লা, আনারসের রসগোল্লা ইত্যাদি) পাওয়া যায়।

আধুনিকীকরণ রসগোল্লার নতুন রূপের মধ্যে বেকড রসগোল্লা অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টি। কিন্তু মিষ্টি যে বাঙালির জীবনের সঙ্গে এতটা অকৃত্রিমভাবে জড়িত এই বিষয়ে একটি সাধারণ প্রশ্ন করা হলে অধিকাংশ বাঙালিই উত্তর দিতে পারে না। কাউকে যদি রসগুল্লার ইংরেজি নাম জিজ্ঞেস করা হয়, প্রথমে দ্বিধা করলেও বেশিরভাগ মানুষই উত্তর দেবেন ‘রসগুল্লা’। মূলত, মিষ্টির ইংরেজি নাম হিসেবে ইংরেজিতে রসগোল্লা লেখা হলেও এই মিষ্টির একটি নির্দিষ্ট ইংরেজি নাম রয়েছে। রসগোল্লার সঠিক ইংরেজি নাম ‘সিরাপ ফিলড রোল’।

রসগোল্লা আবিষ্কারের পর তা বিভিন্ন নাম নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ‘রসগোল্লাজাতীয়’ অনেক মিষ্টি তৈরি হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্পঞ্জ রসগোল্লা, কমলা রসগোল্লা, রাজভোগ, ক্ষীরমোহন, দিলবাহার, চমচম, রসকদম্ব, মৌচাক, দানাদার, রসমুণ্ডী, ছানার গজা, ছানার মুড়কি ও পান্তোয়া। আর এই রসগোল্লাকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয় আরেকটি বিখ্যাত মিষ্টি 'রসমালাই' বা 'রসমঞ্জুরি'।

নবীনচন্দ্র দাস ১৮৬৮ সালে প্রথম ঐতিহ্যবাহী রসগোল্লার স্থানে নতুন এক ধরনের রসগোল্লা তৈরি করেন, যেটি ছিল সম্পূর্ণ গোল। নাম দেওয়া হলো স্পঞ্জের রসগোল্লা। চিরাচরিত রসগোল্লা সম্পূর্ণ গোল করা যেত না; তাছাড়া বেশির ভাগই ভেঙে যেত। তখন সেই অবস্থার সামাল দিলেন নবীনচন্দ্র দাস।

নবীন চন্দ্র দেখালেন রসগোল্লা কিভাবে গোল করা যায়, তার নতুন সন্ধান। তিনি দেখালেন ছানার এক ধরনের উৎসেচক জুড়ে রসগোল্লা বর্তুলাকৃতিকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হয়। তিনি যে নতুন ধরনের রসগোল্লা আবিষ্কার করলেন, তাতে সারা বাংলায় ভোজনরসিকদের কাছে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

কিছু লোকগবেষক মনে করেন বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলে প্রথম বানানো হয়েছিল রসগোল্লা। পিরোজপুর এলাকায় কিছু ইউরোপীয় সাহেব ও ডাচরা থাকতেন। ওই এলাকার ভান্ডারিয়ার ময়রারা ছানা, চিনি, দুধ ও সুজি দিয়ে গোলাকার এক ধরনের মিষ্টান্ন তৈরি করেছিলেন। সেটাই ছিল খুব সম্ভবত, 'ক্ষীরমোহন' বা 'রসগোল্লা'।

 

রসগোল্লার স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনাকে চমকে দেবে--

রসগোল্লায় ছানা ব্যবহার করা হয়। যা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত। আর এই সমস্ত উপাদান গাঁট ও বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন-কে এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড় শক্ত রাখে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গরম রসগোল্লা। আমাশার সমস্যা থাকলে গরম রসগোল্লা খান ১-২ট। উপকার পাবেন হাতেনাতে।

ডায়েটিশিয়ানদের মতে রসগোল্লা হাই প্রোটিন ডায়েট। এই মিষ্টির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

জন্ডিস হলে রসগোল্লা উপকারী খাবার, তাই জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রতিদিন একটি করে রসগোল্লা খেতে পারেন, সকালে খেলেই বেশি কাজ দেয়।

চোখের সমস্যার সমাধানে রসগোল্লা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, যাদের চোখ সবসময় হলুদ হয়ে থাকে বা জ্বালা করে বা চুলকায় তারা প্রতিদিন সকালে একটি করে রসগোল্লা খেতে পারেন।

শরীরে বল ফিরিয়ে দেয় রসগোল্লা, একটি মাত্র রসগোল্লা শরীরের দূর্বলতা কাটিয়ে দিতে পারে, সেক্ষেত্রে এই মিষ্টি হেলথ টনিক বা হেলথ ড্রিঙ্কসের মত কাজ করে। 

গরম রসগোল্লাতে উচ্চমানের প্রোটিন থাকার ফলে ব্রেস্ট ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসার বা কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

গরম রসগোল্লা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। সর্দি, কাশি কমায়।
রসগোল্লায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকার ফলে এটি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ফলে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায় এবং হার্ট ভালো থাকে।

রসগোল্লা ইউরিনারি সিস্টেমের কর্মক্ষমতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রস্রাবের সময় যাদের জ্বলন হয়, তারা রসগোল্লা খেতে পারেন। কিডনিতে পাথর হওয়াও আটকায় এটি।

তবে, খুব বেশি রসগোল্লা না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে।

বাঙালির প্রিয় মিষ্টি রসগোল্লা বাড়িতেও বানানো যায়। তার জন্য প্রথমেই কিছু উপকরণ লাগবে। আপনার বাড়িতে কতজন আছে সেই হিসেবে আপনি রসগোল্লা বানাতে পারেন।

 

উপকরণ

দুধ: এক লিটার।

পাতি লেবু: একটা

ময়দা: হাফ টেবিল চামচ (পরিবর্তে সুজি ব্যবহার করা যেতে পারে।)

চিনি: দু'কাপ, ছোট দানার।

পানি: তিন কাপ

 

প্রণালি

প্রথমে আগে থেকেই দুধ গরম করে ফ্রিজে রেখে ৩০ মিনিট অথবা এক ঘণ্টা ঠাণ্ডা করে নিন। এবার দুধ ফ্রিজ থেকে বার করে ছানা কাটানোর জন্য দুধে লেবুর রস ঢেলে দিন। লেবুর রস দিয়ে দুধ আবার গরম করতে দিন। দুধ ছানা হলে নামিয়ে ফেলুন। এর পর ছানাটি ভাল করে কাপড়ে ছেঁকে নিন। ছানা ছেঁকে নেওয়া জন্য একটি পাত্রে পরিষ্কার কাপড়ের উপর ছানা ছেঁকে নিন। ছানা একটু ঠাণ্ডা পানি দিয়ে নিন কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখুন। ছানা পুরোপুরি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার ছানাটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে হাত দিয়ে ভালোভাবে মিহি করে পেস্ট করে নিন যাতে এর মধ্যে ছানার দানা না থাকে। হাফ চা চামচ ময়দা মিশিয়ে হাত দিয়ে ভালভাবে মিহি করে পেস্ট। এই কাজে কাঠের পাটাতন ব্যবহার করতে পারেন। ছানা যত মিহি হবে রসগোল্লা তত ভালো হবে। একটাও ছানার দলা যেন না থাকে।

রসগোল্লার রস বানানোর জন্য একটি পাত্রে তিন কাপ পানিতে দুই কাপ চিনি এবং কয়েকটি এলাচ দানা দিয়ে ফোটান। ভালোভাবে ফোঁটাতে হবে যতক্ষণ না রসগোল্লার রসের মতো হয়ে আসে। এবার ছানা মিহি পেস্ট হয়ে গেলে ছোট ছোট টুকরো গোল গোল করে নিন রসগোল্লার আকারে।

ফুটন্ত রসে ছোট ছোট গোল করা ছানার টুকরোগুলো দিয়ে দিন। এবার কিছুক্ষণ গরম করুন। কিছুক্ষণ ফোটানোর পর দেখবেন রসগোল্লাগুলো ফুলে উঠছে। একটু নাড়াচাড়া দিন। যতক্ষণ না পর্যন্ত রসগোল্লা পুরো রসের মধ্যে ডুবে যাবে। প্রায় ১০ মিনিট ধরে ফোঁটাতে হবে। ব্যস তৈরি রসগোল্লা। গরম গরম রসগোল্লা অতিথিদের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

(ঢাকাটাইমস/০৩ অক্টোবর/আরজেড)