কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে শরতের শুভ্রতা ছড়াচ্ছে কাশফুল

মমিনুল ইসলাম বাবু, কুড়িগ্রাম
| আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১১:৪২ | প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১১:৩২

শরৎকাল মানেই সাদা রঙের খেলা। নীল আকাশে সাদা মেঘ আর নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে দোল খাওয়া কাশবন মনে জাগায় অন্য রকম অনুভূতি। শারদীয় এ ঋতুতে ভ্রমণবিলাসীদের প্রথম পছন্দ কাশবন। কাশ ফুলের ছোঁয়া পেতে দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসে প্রকৃতি প্রেমী মানুষজন।

সরে জমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চিলমারী, নয়ারহাট ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদীর শাখাহাতির,ডাটিয়ারচর এলাকাসহ বিভিন্ন চরে দোল খাচ্ছে কাশ বন। এই কাশবনগুলো শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলেনি, কাশগাছ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকেই।

কোনো প্রকার খরচ ছাড়াই এক বিঘা জমির কাশবন বিক্রি করে ১৪-১৫ হাজার টাকা আয় করা যায়। অনাবাদী বালু চরে বন্যার পরে কাশ গাছ জন্মে। ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে গাছগুলো বড় হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। কাশবন বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এখানকার মানুষজন।

কাশবন দেখতে আসা মাইদুল ইসলাম (৩৫)ও আফসানা মিম (৩০) দম্পতি বলেন, কুয়াকাটা বা কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ব্যয় হয় তা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য, তাই আমরা কোথাও ঘুরতে গেলে অবশ্যই ব্রহ্মপুত্রের বুকে ভেসে ওটা ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে চলে আসি। বিশেষ করে শরৎকালে এই ছোট দ্বীপচরগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাশবন আর কাশফুলগুলো নয়ানাভিরাম। শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের মানু্ষেরা কাশফুল পছন্দ করে। স্বল্প খরচে এমন দৃশ্য উপভোগ করতে না পারা যেন প্রকৃতিকে অস্বীকার করা। যারা ব্রহ্মপুত্রের দ্বীপচরগুলোতে কখনো আসেননি তাদের এই দৃশ্য দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি চরের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার দুই বিঘা জমিতে কাশ বন আছে। পাঁচ থেকে ছয় মাস পর কাশ গাছের ফুল পড়ে গেলে গাছগুলো কেটে আঁটি বাঁধি। প্রতি হাজার আঁটি ৪ থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।

ব্রহ্মপুত্র নদের নয়ারহাট ইউনিয়নের ডাটিয়ার চর এলাকার মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমার ৩ একর জমিতে কাশিয়ার (কাশ) আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর বন্যার পর এমনিতেই জমিতে জন্ম নেয়।আর মাত্র এক থেকে দেড় মাস পর জমির কাশিয়া বিক্রি করতে পারবো। আশা করছি এই টাকা দিয়েই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারে খরচ চালাতে পারবো।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, ঋতুপরিক্রমায় এখন শরৎকাল। আর সেই শরৎকালের বৈশিষ্ট্য কাশফুল। কাশফুলের আদিনিবাস সুদূর রোমানিয়ায়। এটি বাংলাদেশেরও একটি পরিচিতি উদ্ভিদ। আমাদের কুড়িগ্রামে এটি অতিপরিচিত। যেহেতু কুড়িগ্রামে ৪২০টিরও বেশি চরাঞ্চলে রয়েছে। এসব চরে এখন কাশফুলের সমারোহ। কাশফুলের ইংরেজি নাম ক্যাটকিন। কাশফুলে রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। কাশ সাধারণত গোখাদ্যর খর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, কাশ দিয়ে গ্রামাঞ্চলে ঘরের ছাউনি, বেড়া নির্মাণ করা হয়ে থাকে। আমাদের অর্থনৈতিক ফসল পানগাছের ছাউনি ও বরজেও ব্যবহার হয়ে থাকে কাশ। আমরা জানি কাশে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। পিত্তথলিতে পাথর হলে কাশের মূল পিশিয়ে খাওয়ানো হয়। ব্যথা বা ফোঁড়া হলে কাশের মূলের রস উপশম করে। তা ছাড়া পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে যেখানে শিল্প-কারখানার ছাই থাকে, সেখানে কাশ জন্ম নিলে পরিবেশ পরিশোধিত হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, যে এলাকায় কাশবন আছে সে সব এলাকায় পর্যটকদের জন্য সুব্যবস্থা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২অক্টোবর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :