মিয়ানমারে সরকারবিরোধী বিদ্রোহ, তিন দিনে ৬০ জনের বেশি সেনা নিহত

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১৩:৫৯ | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১৪:০৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
প্রতিকী ছবি

মিয়ানমারে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে দমন-নিপীড়ন। দেশটিতে গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে জান্তা সরকার। সরকারের এমন অত্যাচার ঘরছাড়া হয়েছে লাখ লাখ বাসিন্দা। পাশাপাশি দেশটিতে বেড়েছে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাত। মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সক্রিয় হতে দেখা গেছে জাতিগত প্রতিবাদ গোষ্ঠীদের। এতে বেশ কয়েক সরকার পক্ষের সেনা নিহতও হয়েছে।

ব্যাংককভিত্তিক মিয়ানমারে সংবাদ মাধ্যম দ্য ইরাবতী এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমারের পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) গ্রুপগুলি সাগাইং, মান্দালে এবং তানিনথারি অঞ্চল, রাখাইন ও মোন রাজ্যে সরকারি বাহিনী এবং সামরিক ঘাঁটিগুলিতে আক্রমণ চালিয়ে ৬০ জনের বেশি সেনা হত্যা করেছে শুধু গত তিন দিনে।

রবিবার সকালে সাগাইং অঞ্চলের সালিঙ্গি টাউনশিপে স্থানীয় চারটি প্রতিরোধ গোষ্ঠী কিয়ার তাত শহরের পুলিশ স্টেশন দখল করার চেষ্টা করলে জান্তা সেনাদের সঙ্গে ভয়ঙ্কর বাধে। সেখানে ৪০ জন সেনা এবং পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিল। পিডিএফ গোষ্ঠীদের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী লড়াই চলছিল সেনাদের। পরে সেনারা হেলিকপ্টার গানশিপ দিয়ে হামলা চালালে পিডিএফরা যুদ্ধ ক্ষেত্র ত্যাগ করে।

অভিযানে পাঁচ জান্তা সেনা এবং দুই পিডিএফ যোদ্ধা নিহত হয়। এছাড়াও পিডিএফ গ্রুপগুলি কিছু জান্তা অস্ত্র জব্দ করে নেয়।

সরকারপন্থী টেলিগ্রাম চ্যানেল ফিফটি টু নিউজ রবিবার রিপোর্ট করে জানিয়েছে, শাসক বাহিনী তাদের পুলিশ স্টেশনকে ২০০ পিডিএফ সদস্যের অভিযান থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে।

রবিবার স্থানীয় সময় রাত ২টায় সাগিয়াং অঞ্চলের মনিওয়া টাউনশিপের নিয়াং ফিউ পিন গ্রামে একটি থানায় অভিয়ান চালায় তিনটি পিডিএফ গ্রুপ। অভিযানে ১০ সেনা নিহত এবং পাঁচজন আহত হয় বলে সোমবার স্কোরপিয়নস-পিডিএফ দাবি করেছে। তবে তারা পুলিশ ফাঁড়ি দখলে ব্যর্থ হয়েছে।

পিপলস আর্মি টু ফাইট ডিক্টেটরশিপ (পিএএফডি) দাবি করেছে, রবিবার সকালে ১০টি স্থল মাইন ব্যবহার করে সাগাইং অঞ্চলের মাইনমু টাউনশিপের একটি হাইওয়েতে পাঁচটি গাড়ির এক সামরিক বহরে অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। সারিক এই বহরটিতে সিনিয়র সেনা অফিসাররা ছিল। তারা সাগাইং থেকে মনিওয়ায় যাচ্ছিল বলে ধারণা করা হয়েছে। চারটি প্রতিরোধ গোষ্ঠী যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে অনেক সেনা হতাহত হয়েছে বলে ধারণা করা তাদের।

মায়াংয়ে পিডিএফ অ্যামবুশে ১৫ জান্তা সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সেনাদের মৃতদেহ বহন করার জন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে দেকা গেছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।

অন্যদিকে সানচাং-পিডিএফ এর দাবি, রবিবার সন্ধ্যায় ইয়াঙ্গুন অঞ্চলের সানচাং টাউনশিপের বাহো রোডে জান্তা আদালতে রিমোট-নিয়ন্ত্রিত মাইন ব্যবহার করে বোমা হামলা করেছে তারা।

শনিবার রাতে মান্দালয় অঞ্চলের তাউংথা টাউনশিপে পিডিএফের অভিযানে ছয় সেনা নিহত হয়েছে। সেনারা একটি সামরিক চেকপয়েন্ট পরিচালনা করছিল।

পিডিএফ-এর মিডিয়া শাখা পিনলেবু বিপ্লব (পিআর) জানিয়েছে, শনিবার এবং গত শুক্রবার সাগাইং অঞ্চলের পিনলেবু টাউনশিপে শাসক বাহিনীর সঙ্গে পিনলেবু-পিডিএফ-এর দুই দিনের সংঘর্ষে গোলাগুলির সময় কমপক্ষে ছয় জান্তা সৈন্য হতাহাত হয়েছিল। তবে দুইজন প্রতিরোধ যোদ্ধাও আহত হয়েছেন বলে পিআর জানিয়েছে।

শনিবার ভোরে মান্দালয় অঞ্চলের মাইংইয়ান টাউনশিপে মায়াউক কিয়ুন গ্রামে একটি সামরিক চৌকিতে নয়টি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামলা চালায়। ঘটনায় এক সেনা কর্মকর্তাসহ ছয় সেনা নিহত হয়।

অপরদিকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়েস্টার্ন নিউজ জানায়, শনিবার রাখাইন রাজ্যের পোন্নাকিউন টাউনশিপে একজন পুলিশ ক্যাপ্টেন এবং সার্জেন্টকে আরাকান আর্মি (এএ) গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পূর্বে তারা একটি রেস্তোরাঁয় মদ্যপান করছিল।

এছাড়াও স্থানীয় মিডিয়া মাওলাক নিউজ জানিয়েছে, গত শুক্রবার সাগাইং অঞ্চলের মাওলাইক টাউনশিপের টুনপিন গ্রামের কাছে মাওলাইক-পিডিএফ-এর সঙ্গে সংঘর্ষে একজন ক্যাপ্টেন এবং সেকেন্ড লেফটেন্যান্টসহ আট সামরিক সৈন্য নিহত হয়।

বন্দুকযুদ্ধে আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

তাজে নিউজ জানায়, জান্তা সরকার এবং শাসকপন্থীরা ২০২১ সালের মে থেকে ২০২২ সালের অক্টোবরের মধ্যে সাগাইং অঞ্চলের তাজে টাউনশিপের ৬৪টি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে মোট ২ হাজার ১১১টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।

সরকারের হামলায় পাঁচটি গ্রাম সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এছাড়াও টাউনশিপে জান্তা সৈন্যদের হামলায় ৬৮ বেসামরিক নিহত এবং একজন মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে মিডিয়া আউটলেট জানিয়েছে।

পিডিএফ গ্রুপ আরও জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার তানিনথারি অঞ্চলের লংলন টাউনশিপে লংলন-পিডিএফ-এর সঙ্গে সংঘর্ষের শাসকপন্থী চারজন মিলিশিয়া সদস্য নিহত হয়েছে। পাশাপাশি সোম রাজ্যে একটি গাড়িতে শুক্রবার অতর্কিত হামলা চালায় ইয়ে বেলু নামের একটি প্রতিরোধ গোষ্ঠী। এতে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন প্রধান এবং দুই কনস্টেবল নিহত হয়। গোষ্ঠীটি দুটি বন্দুক ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে বলেও জানায়।

(ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/এসএটি)