নাব্য সংকট দেখিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল বন্ধ

কক্সবাজার প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১৭:৫৫

পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার পথেই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

বিভিন্ন সংস্থার লিখিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নাব্য সংকটের কথা বলা হলেও এ সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমার অংশে উত্তেজনা। মিয়ানমারের সম্ভাব্য মর্টারশেল থেকে পর্যটকদের নিরাপদে রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পর্যটন মৌসুম শুরু হয় ১ অক্টোবর থেকে। মার্চ পর্যন্ত দ্বীপটিতে পর্যটকরা যেতে পারেন। মৌসুম শুরু হলে টেকনাফ থেকে সাতটি জাহাজ ও ৩০টির বেশি কাঠের ট্রলারে সেন্টমার্টিন যাওয়া-আসা করেন দৈনিক প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যটক। আর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে দুটি বিলাসবহুল জাহাজ চলাচল করে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এরফানুল হক জানান, নাব্য সংকট ও মিয়ানমারের সৃষ্ট সমস্যার কারণে নাফনদী দিয়ে চলাচলকারী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, নাফ নদীতে নাব্য সংকট থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পর্যটক চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন এবং চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটক চলাচল অব্যাহত থাকবে।’

সীমান্তের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি যেকোনো সময় খারাপ হতে পারে। অথবা মিয়ানমারের একটা গোলা বা মর্টারশেল পর্যটকবাহী জাহাজে এসে পড়তে পারে। এ কারণে মূলত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাফ নদী দুই দেশের মধ্যে সীমানা হিসেবে কাজ করছে। এই নদীর ৭ কিলোমিটার অভিন্ন নৌপথ পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিনে যেতে হয়।

এদিকে বাংলাদেশ সীমান্তে এবং দুই দেশের শূন্যরেখায় সম্প্রতি কয়েক দফা মর্টারশেল নিক্ষেপ করেছে মিয়ানমার। এতে একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। দফায় দফায় প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতিতে দ্বীপের প্রবাল, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্য প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। পর্যটকরা গভীর রাত পর্যন্ত সৈকতে উৎসব করেন। তাদের গানবাজনা ও কোলাহল বেড়ে যাওয়ায় গভীর সমুদ্র থেকে তীরে কচ্ছপ ছুটে আসা অনেক কমে গেছে। দ্বীপের দুই শতাধিক হোটেল-মোটেলের বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। হোটেলের বর্জ্য সরাসরি চলে যাচ্ছে সমুদ্রে। এতে সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল পানি ঘোলাটে হচ্ছে। জাহাজ ও ট্রলারের পাখার কারণে সমুদ্রের তলদেশের বালু পানিতে মিশে প্রবালের ওপর জমে আস্তরের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে অনেক এলাকার প্রবাল মরে গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর সম্প্রতি সেন্টমার্টিন থেকে বিপুল পরিমাণ পলিথিন, নৌকার মাছ ধরার জাল, প্লাস্টিক বোতল, ক্যান ও সিগারেটের উচ্ছিষ্ট উদ্ধার করেছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু সুফিয়ান বলেন, যেহেতু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ এসেছে তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে।

সেন্টমার্টন দ্বীপে পর্যটক আসা যাওয়া ও প্রাসঙ্গিক সেবা সম্পর্কিত মতবিনিময় সভায় সার্বিক বিষয় তুলে ধরে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এ সিদ্ধান্ত দেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে সভার শুরুতে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে উপস্থিত সকলকে পর্যটনে নতুন ভাবনা শীর্ষক প্রতিপাদ্যের বিষয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এরপর তিনি অনলাইনে সংযুক্ত কর্মকর্তাদের পরিচয় পর্ব শেষে বলেন, ১ অক্টোবর হতে সেন্টমার্টিনদ্বীপ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে কিনা এ বিষয়ে অনলাইনে সংযুক্ত সকল সদস্যদের মতামত ব্যক্ত করতে অনুরোধ জানান। সভাপতির অনুরোধক্রমে উপস্থিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিরা পর্যায়ক্রমে বর্ণিত বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বলেন, সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহনের ক্ষেত্রে ৩টি রুট ব্যবহৃত হয়। সেগুলো হল- টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন এবং চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন। এর মধ্যে নাব্য সংকট পরিলক্ষিত হওয়ায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটটি বন্ধ রেখে অন্য দু'টি রুটে পর্যটক চলাচল অব্যাহত রাখা যেতে পারে।

কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুট দু'টি ব্যবহারের বিষয়ে সভায় উপস্থিত সকলে একমত পোষণ করেন।

সিদ্ধান্ত: সভায় বিস্তারিত আলোচনান্তে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:

নাফ নদীতে বর্তমানে নাব্যতা সংকট বিদ্যমান থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পর্যটক চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন এবং চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটক চলাচল অব্যাহত থাকবে”।

এদিকে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে টেকনাফের দমদমিয়া-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হোক।

(ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :