ভাগিয়ে আনা স্ত্রীর হাতেই খুন হন ফজল মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ২১:৩৫ | প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ২০:১৭

ভুক্তভোগী ফজল মিয়া ও গাজী রহমান রাজধানীতে একসঙ্গে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। মোহাম্মদপুর এলাকায় ভিক্ষা করার সময় তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে তাদের নিজেদের মধ্যের সম্পর্ক বাসায় যাওয়া-আসা পর্যন্ত গড়ায়। ওই সম্পর্কের সূত্র ধরে গাজীর স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে ভাগিয়ে আনেন ভুক্তভোগী ফজল। আর এই ফজলই হত্যার শিকার হন গাজীর মেয়েকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে ফজলের ভাড়া বাসা থেকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে গ্রেপ্তারের পরে বেরিয়ে আসে চাঞ্চলকার সব তথ্য।

গতকার রবিবার রাতে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানার নিজ বাড়ি থেকে আসামি বাবা-মাসহ মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ। আজ সোমবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর লালবাগ ডিসি অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. জাফর হোসেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ফজল মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম, মেয়ে মিতু ও তার বাবা গাজী রহমান। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে কামরাঙ্গীরচর থানাধীন হাসান নগর ৯ নম্বর গলি ফেরদৌসী ভিলার মালিক লিটন মিয়াসহ এলাকার লোকজন কামরাঙ্গীরচর থানায় সংবাদ দেয়। তারা জানান, ওই বাড়ির ২য় তলা থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাড়টিয়ার ঘরের দরজা ভেঙ্গে ফজল মিয়ার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, অজ্ঞাতনামা আসামীরা ভুক্তভোগীর গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানান হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী ফজলের পরিবারকে সংবাদ দেয়া হলে, তার ভাইসহ অন্যান্য স্বজনরা ঘটনাস্থলে আসেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর ছোট ভাই সাজু মিয়া বাদী হয়ে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ডিসি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনাস্থলসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শেরপুর ঝিনাইগাথি এলাকা থেকে ভুক্তভোগীর পলাতক স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ফাতেমাকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বামী ফজল মিয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

গ্রেপ্তারের পরে জিজ্ঞাসাবাদে বরাত দিয়ে ডিসি জাফর হোসেন বলেন, ফাতেমা বেগম ভুক্তভোগী ফজল মিয়ার ৫ম স্ত্রী এবং ফজল ফাতেমা বেগমের ২য় স্বামী। ভুক্তভোগীর বাড়ি রংপুর জেলার কাউনিয়া থানাধীন ঠাকুরদেশ গ্রামে। তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। গ্রেপ্তার ফাতেমা খাতুনের ১ম স্বামী গাজী রহমান ও ভুক্তভোগী ফজল মিয়া একসাথে মোহাম্মদপুর এলাকায় ভিক্ষা করত। সেই সূত্রে ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে ভুক্তভোগী পরিচয় হয়। তারা দুই বছর পূর্বে বিবাহ করেন। বিবাহের পর ফাতেমা খাতুন তার প্রথম পক্ষের দুই মেয়ে সহ ফজল মিয়ার সাথে কামরাঙ্গীরচর থানাধীন হাসাননগর ১নং গলির ফেরদৌসী ভিলা নামক লিটন মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তারা।

জানা যায়, ভিকটিম ফজল মিয়া ফাতেমা বেগমের প্রথম পক্ষের মেয়ে মিতুকে প্রায়ই যৌন হয়রানি করত। এ বিষয়ে ফাতেমা খাতুন ফজল মিয়াকে নিষেধ করলেও সে কোন কর্ণপাত না করে তার এই অনৈতিক কামনা চরিতার্থ করার জন্য চেষ্টা চালাত।

ডিসি বলেন, ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় ফাতেমা খাতুন ও তার বড় মেয়ে বাড়ির বাইরে গেলে ভিকটিম ফজল মিয়া ফাতেমা খাতুনের ছোট মেয়ে মিতুর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জোর জবরদস্তি করতে থাকে। সে সময় ফাতেমা খাতুন বাড়ি ফিরে এসে ধস্তাধস্তির বিষয়টি দেখতে পায়। পরে ফজল মিয়াকে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমা ও তার মেয়েকে মারধর করে। এছাড়া সৎ মেয়ে মিতুকে ধর্ষণের হুকমী দেয়। এতে ফাতেমা খাতুন মামলা করার কথা বললে, ফজল মিয়া বলে, সে প্রতিবন্ধী, ধর্ষণের বিষয়ে কোর্ট ও পুলিশ তার কিছুই করবে না।

এতে বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে তাকে উযুক্ত শাস্তি দিতে হত্যার পরিকল্পনা করে স্ত্রী ফাতেমা। ঘটনার দিন দুপুরে ফাতেমা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুধের সঙ্গে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে ভুক্তভোগীকে খাওয়ায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফজল ঘুমিয়ে পড়লে। ফাতেমা তার প্রথম স্বামী গাজী রহমানকে ফোন করে ডেকে নিয়ে হত্যা করে।

হত্যার কার কী ভূমিকা:

ফাতেমা বেগম ঘুমন্ত ফজল মিয়ার হাত-পা গামছা দিয়ে বাঁধে। গাজী রহমান ভুক্তভোগীর বুক ওপরে বসে চেপে ধরেন। আর মেয়ে মিতু মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে ফাতেমা ক্ষোভে ব্লেড দিয়ে ভুক্তভোগীর পুরুষাঙ্গ কেটে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর তারা ঘরের দরজা তালাবদ্ধ করে সেখান থেকে পালিয়ে যান।

রাজধানীর কামরাঙ্গীচর থানায় হওয়া মামলায় তাদের আদালতে তুললে ঘটনার বিষয়ে ফাতেমা খাতুন ও গাজী রহমান আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জাফর হোসেনের তত্ত্বাবধানে লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার কুদরত-ই-খুদা, অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শহিদুল ইসলাম ও সহকারী পুলিশ কমিশনার কে. এন. রায় নিয়তির নেতৃত্বে কামরাঙ্গীরচর থানার একটি টিম ভুক্তভোগী ফজল মিয়ার পলাতক স্ত্রী ফাতেমা খাতুন গ্রেপ্তার করেন। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি বাবা ও মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/এএইচ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

ডিজিটাল হুন্ডিতে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

ইউটিউবে জাল টাকা তৈরি শেখা, রাজমিস্ত্রি-জেলেকে নিয়ে গড়ে তোলা হয় চক্র

দুর্নীতি মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে

ভুয়া নিয়োগপত্রে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

শিশু বিক্রির অর্ডার নিয়ে অপহরণ করতেন তারা

দুর্নীতির অভিযোগে রুয়েটের সাবেক ভিসি ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা ​​​​

যাবজ্জীবন সাজা থেকে বাঁচতে ২২ বছর ধরে তরমুজ ও ওষুধ বিক্রেতা, অতঃপর...

বিমানবন্দরে ডলার কারসাজি, ১৯ ব্যাংকারসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ঢাবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধর করে ছিনতাইয়ের অভিযোগ

ধানক্ষেতে বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে ‘হত্যা’: তিন আসামি গ্রেপ্তার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :