দ্রুত নামছে প্লাটিলেট, ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কায় চিকিৎসকরাও

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২২, ২২:১০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় শঙ্কিত চিকিৎসকরাও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর তেমন উদ্যোগ নেই। যার ফলে সারা দেশে এডিস মশাবাহিত রোগের বিস্তার ঘটছে। এখনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে করোনার চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে গত একদিনে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২৫ জন। এ সময়ে মারা গেছেন তিন জন। নতুন রোগীদের মধ্যে ৩৫২ জন ঢাকার এবং বাইরের ১৭৩ জন।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী এবং মৃত্যুর সিংহভাগই হয়েছে সেপ্টেম্বরে। ওই মাসের  ৩০ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৯১১ জন। আর মারা গেছেন ৩৪ জন।

সাধারণত মাঝ-সেপ্টেম্বর থেকে কমতে থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে এবার অক্টোবরে এসেও জেঁকে বসেছে। পহেলা অক্টোবর ছিল মৌসুমের সর্বোচ্চ রোগী। চলতি মাসেই তিন দিনেই পাঁচশর বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এই তিন দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭২৮ জন। ঢাকার পাশাপাশি বাইরেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

চিকিৎসকরা বলছেন, বদলেছে ডেঙ্গু নিয়ে আগের ধারণা। এখন আর শহুরে রোগ নয় ডেঙ্গু। রোগীর ক্ষেত্রে চতুর্থ দিনেই কমছে রোগীর প্লাটিলেট। আবার হঠাৎ করেই নেমে আসছে ৩০ হাজারের নিচে।  হঠাৎ করেই প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় বাড়ছে আতঙ্ক। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্লাটিলেট কমলেও গাইডলাইন মেনে চিকিৎসা দিলে ভয়ের কিছু নেই। জ্বর হলেই নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ইদানীং ডায়রিয়া বা বমি হওয়াটা অনেক কমে এসেছে। এ ছাড়া র‌্যাশ হওয়াটাও কমেছে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থাৎ প্রথম ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. দীপি বড়ুয়া বলেন, জ্বর হলে একেবারে অবহেলা করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর তেমন উদ্যোগ নেই সরকারের। ফলে ৫০ টিরও বেশি জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু রোগীর যে হিসাব দিচ্ছে, বাস্তবে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করছেন তারা।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে–নজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। অতীতে দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞরা যেসব সুপারিশ করেছেন বা পরামর্শ দিয়েছেন, তার কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি। দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে, আরও খারাপের দিকে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর সংক্রমণের এ ঊর্ধ্বসীমা নভেম্বর পর্যন্ত যেতে পারে। ডেঙ্গুর সঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়ন জড়িত। এজন্য সারাদেশে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ণ করে কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দেওয়া এবং এর সঙ্গে ল্যাবরেটরি স্থাপন করে নিয়মিত গবেষণা জরুরি।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ১৭ হাজার ৮২০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ১৩ হাজার ৫১১ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট চার হাজার ৩০৯ জন। আর এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৬১ জন।

(ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/আরআর)