সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে আহত তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মৃত্যু

প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১৯:০৩ | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১৯:১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
নিহত সৈনিকরা হলেন- জাহাংগীর আলম, জসিম উদ্দিন ও শরীফ হোসেন (বাঁ থেকে ডানে ক্রমান্বয়ে)।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনাকালে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে আহত চার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন। দেশটির স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বোয়ার মিনুসকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।

নিহতরা শান্তিরক্ষীরা হলেন—সৈনিক জসিম উদ্দিন, সৈনিক জাহাংগীর আলম ও সৈনিক শরিফ হোসেন। এদের মধ্যে জসিমের বাড়ি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার কাটিঙ্গা গ্রামে, জাহাংগীর আলমের বাড়ি নিলফামারীর ডিমলার দক্ষিণ টিটিপাড়া এবং শরিফের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচির বাড়াক রুয়া গ্রামে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর—আইএসপিআর জানিয়েছে, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের স্থানীয় সময় সোমবার দিবাগত রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৩৫ মিনিট) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি গাড়ি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণের মুখে পড়ে। এতে বাংলাদেশি তিন শান্তিরক্ষী নিহত হন। এছাড়া টহল কমান্ডার মেজর আশরাফুল হক আহত হন।

উল্লেখ্য, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের পশ্চিম সেক্টরে বোয়ার এলাকায় মোতায়েন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন (ব্যানব্যাট-৮) গত বছরের ৯ নভেম্বর থেকে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে।

দুর্গম এলাকায় মোতায়েন অন্যতম অস্থায়ী ক্যাম্প কুই হতে পরিচালিত যান্ত্রিক টহলের একটি দল মেজর আশরাফের নেতৃত্বে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কাইতা এলাকায় টহলে বের হয়।

বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টার দিকে প্রত্যাবর্তনের পথে টহল কমান্ডার মেজর আশরাফকে বহনকারী প্রথম গাড়িটি মাটিতে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে পতিত হয়। এতে গাড়িটি প্রায় ১৫ ফুট দূরত্বে ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সৈনিক শরিফ, সৈনিক জাহাংগীর ও সৈনিক জসিম মারাত্মকভাবে আহত হন।

আইএসপিআর আরও জানায়, ঘটনার পরপরই আহত শান্তিরক্ষীদের জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে উন্নত চিকিৎসার জন্য দুর্গম এলাকা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং ঘন অন্ধকারের মধ্যে উদ্ধার তৎপরতার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয়।

মিশন সদর, জাতিসংঘ সদর এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুততার সঙ্গে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ১৪৪ কিলোমিটার দূরের বোয়ার মিনুসকা হাসপাতালে।

সেখানে স্থানীয় সময় সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটা পাঁচ মিনিট (বাংলাদেশ সময় ১১টা ৩০ থেকে ১২টা ৫ মিনিটের মধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসক সৈনিক জসিম উদ্দিন, সৈনিক জাহাংগীর আলম এবং সৈনিক শরিফ হোসেনকে মৃত ঘোষনা করেন।

অপর আহত শান্তিরক্ষী মেজর আশরাফুল হক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়োজিত অন্যান্য শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে আছেন। শাহাদাৎবরণকারী সেনাসদস্যদের মৃতদেহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে আনার বিষয়টি চলমান রয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা আফ্রিকার আটটি দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে তারা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে চলেছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৪অক্টোবর/এসএস/ইএস/ডিএম)