ফের সক্রিয় মানবপাচার চক্র, রোহিঙ্গা ঢলের শঙ্কা

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২২, ১৬:৪৮ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ১৬:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠেছে মানবপাচার চক্র। এছাড়া দালালের দৌরাত্ম্যের ফলে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শঙ্কা; সীমান্তে দালালদের সহায়তায় মিয়ানমার থেকে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন প্রলোভনে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়ায় পাচার করতে তারা কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে।  

সূত্র জানায়, দেশীয় দালালরা একদিকে মিয়ানমার থেকে নতুন করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আনার চেষ্টা করছে; অন্যদিকে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন প্রলোভনে মালয়েশিয়া পাঠানোর চেষ্টা করছে।

সূত্র আরো জানায়, টেকনাফ ও উখিয়ায় শতাধিক চিহ্নিত দালাল রয়েছে। এরা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পাশাপাশি অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে সক্রিয়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের নেপথ্যে এ দালাল চক্রের ভূমিকা ছিল বলেও জানা যায়।

গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে অন্তত সাত প্রদেশে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে দেশটির সেনাবাহিনী। এই সুযোগে রোহিঙ্গাদের আর কোনওস্রোত যেন প্রবেশ করাতে না পারে; এ জন্য দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।    - নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর অবসরপ্রাপ্ত এমদাদুল ইসলাম 

সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যেতে কয়েকটি দালালচক্র রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রচারণা চালাচ্ছে; সূত্রের এমন তথ্যে জানা যায়, সাধারণ রোহিঙ্গাদের রাতের আঁধারে আনা হয় উপকূলবর্তী ঘাটে। এরপর স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় উপকূলে ডিঙি নৌকায় মাধ্যমে সাগরে থাকা বড় ট্রলারে তুলে দেওয়া হয়। 

এদিকে রোহিঙ্গাদের দাবি, স্থানীয় ও রোহিঙ্গা দালালচক্র বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পাচারের জন্য তাদের জিম্মি করছে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় ট্রলারডুবির ঘটনায় চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় হলবনিয়া সমুদ্র সৈকতে কয়েক দফায় ৪৫ জন জীবিত ভেসে আসেন। তাদের মধ্যে ৪১ জন রোহিঙ্গা ও চারজন বাংলাদেশি। বাংলাদেশি চারজন মানবপাচার চক্রের সদস্য বলে জানা যায়। পরে ৪ দালালকে আটক করে পুলিশ।

এ অবস্থায় চিহ্নিত দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া অনুসন্ধান ও তদন্তের মাধ্যমে মূল হোতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

অপরদিকে দালালচক্র কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের সমুদ্র উপকূলকে মানব পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমার এলাকার কিছু দালাল ট্রানজিট ব্যবহার করে মানবপাচার করছে।’

কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশফাক বিন ইদ্রিস বলেন, ‘মিয়ানমারের নৌকাগুলো যেন আমাদের জল সীমনায় ঢুকতে না পারে; এজন্য আমরা কঠোর নজরদারি করছি।’

অনুসন্ধান ও তদন্তে দালালদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে জানিয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘অনুসন্ধানে সব তথ্য বের হয়ে আসবে। এ বিষয়ে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর অবসরপ্রাপ্ত এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের অন্তত সাত প্রদেশে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে দেশটির সেনাবাহিনী। এই সুযোগে রোহিঙ্গাদের আর কোনও স্রোত যেন প্রবেশ করাতে না পারে; এ জন্য দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দালালরা যাতে কোনোক্রমেই মানুষকে সমুদ্রপথে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে না পারে; সে বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।’

উল্লেখ্য, এবছর সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের চেষ্টার সময় প্রায় ৩শ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

(ঢাকাটাইমস/০৫অক্টোবর/এসএম)