গুণগত শিক্ষা পেতে শিক্ষকদের অভাব-অনটন দূর করুন: শিক্ষক নেতারা

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৫০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গুণগত শিক্ষা পেতে হলে আগে শিক্ষকদের অভাব-অনটন দূর করার কথা বলেছেন শিক্ষক নেতারা। দেশের সাড়ে পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর পেশাগত বৈষম্য রয়ে গেছে বলেও জানান তারা। ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশা, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি সাইদুল হাসান সেলিম ও সংগঠনের মহাসচিব মো. আব্দুল খালেক প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে হত্যা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে যারা দেশ চালিয়েছেন তারা শিক্ষার মৌলিক পরিবর্তনে কোনো বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। প্রাথমিক শিক্ষার সরকারিকরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই হয়েছে। যেমন- বছরের শুরুতে নতুন বই বিতরণ, বৃত্তি, উপবৃত্তি, জাতীয় শিক্ষানীতি শিক্ষা কারিকুলাম আধুনিকায়ন ও পরিবর্তন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, মূল্যায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, নতুন নতুন ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, সরকারি কর্মচারীদের অনুরূপ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন বৃদ্ধি, কর্মপরিকল্পনা উল্লেখযোগ্য।

গুণগত শিক্ষার জন্য সবার আগে শিক্ষকদের অভাব-অনটন দূর করতে হবে উল্লেখ করে শিক্ষক নেতারা বলেন, দেশের সাড়ে পাঁচলাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পেশাগত বৈষম্য রয়েই গেছে। আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষক। আমাদের পদোন্নতির কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের বাড়িভাড়া মাত্র একহাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা এবং উৎসব ভাতা মাত্র ২৫ শতাংশ। বিশেষ করে মাসিক পেনশনের ব্যবস্থা নেই। নেই বদলির কোনো ব্যবস্থা। এক কথায় আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা চরম বৈষম্যের শিকার।

বক্তারা বলেন, শ্রেণিকক্ষে গুণগত শিক্ষার জন্য সবার আগে শিক্ষকদের অভাব দূর করতে হবে। দেশের ৯৭ শতাংশ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব পালন করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। অথচ শিক্ষকদের নেই সামাজিক মর্যাদা, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা। নামমাত্র সরকারি অনুদান বা সহায়তায় দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর শিক্ষার দায়িত্ব পালন করছে।

এদিকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের মাথাপিছু আয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারত, পকিস্তানের চেয়েও সর্বোচ্চ। শিক্ষায় আমরা ভারতকেও পেছনে ফেলেছি। স্বাস্থ্যখাতে আমরা এগিয়েছি। বাংলাদেশে মাতৃ-মৃত্যু হার সবচেয়ে কম, তেমনি দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুমৃত্যু সবচেয়ে কম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে বিস্ময়কর অগ্রগতি হচ্ছে।’

‘রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ সালের পরিকল্পনা আমরা লিখেছি। আমাদের দেশটা সমাজতান্ত্রিক, জ্ঞানভিত্তিক। জ্ঞানভিত্তিক মানে- জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে। বিজ্ঞানের উদ্ভব ঘটাবে, আবিষ্কার করবে, যুক্তিবাদী হবে। আমাদের সবচেয়ে বেশি ব্যয় আসা উচিত মানবসম্পদে। মানবসম্পদটা হচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। শিক্ষাখাত অত্যন্ত জটিল ও কঠিন।’

শিক্ষকদের দাবী বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের দাবিগুলো খুবই সামান্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণে এই সরকার ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। এখন অনেক স্কুল এমপিওভুক্ত হতে চায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকার মনিপুর স্কুল সরকারকে বারবার চিঠি দিয়ে জানাচ্ছে তারা এমপিওভুক্ত হতে চান না। এটার কারণ মান সম্মত শিক্ষাব্যবস্থা।’

বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে নারীর সংখ্যা বেশি উল্লেখ করে ড. শামসুল আলম বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এটা সম্ভব হচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরকে অবৈতনিক ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার হার হবে শতভাগ। এইগুলো আমাদের পরিকল্পনার কিছু উদাহরণ মাত্র।’

(ঢাকাটাইমস/০৫অক্টোবর/একে/কেএম)