দেশে দেশে অস্থিরতা কোন পথে বিশ্ব

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০৩ | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১২:১৪

সাইখ আল তমাল, ঢাকাটাইমস

সদ্য করোনা মহামারি কাটিয়ে ওঠা বিশ্ব একের পর এক সংঘাত আর অনটনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। চলতি বছরের শুরুতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। এর প্রভাব টের পাচ্ছে পুরো বিশ্ব। পুতিনের বিশেষ সামরিক অভিযান, মার্কিনিদের নিষেধাজ্ঞার খেলা আর এশিয়ায় নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কা, সব মিলিয়ে বছরের নয় মাসই কেটেছে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে। সহসা এর থেকে মুক্তির সম্ভাবনাও নেই বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের।

করোনা মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে যে ধাক্কা দিয়েছে তা সামলে ওঠার আগেই পশ্চিমে যুদ্ধের পারদ তাতে আরও চাপ সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শস্য রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেনের শস্য বিশ্বব্যাপী রপ্তানি না হওয়ায় বেশ কিছু দেশে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট এবং খাদ্যপণ্যের লাগামহীন দামের। তীব্র হয়েছে জ্বালানি সংকটও।

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল-গ্যাস রপ্তানিকারক রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা জোটের নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞার ফলে জ্বালানির মূল্য রেকর্ড ছুঁয়েছে। ইউরোপসহ প্রায় প্রতিটি দেশে বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি। জ্বালানি এবং খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বেশ কিছু দেশে প্রতিবাদে রাস্তায়ও নেমেছে মানুষ।

দক্ষিণ এশিয়াতে অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক সংকটেরও। ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় দেখা গেছে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট যা আগে কখনো দেখেনি দেশটি। কয়েক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা রাজাপাকসে পরিবারের নির্মম পরিণতি ঘটিয়েছে দেশের সর্বসাধারণ। পাকিস্তানে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক সংকট যার কারণে অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খানকে। রাজনৈতিক সংকটের পর দেশটিতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে অন্তত ৫০ বছর পিছিয়ে গেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিবেশী আফগানিস্তানের চিত্রটা আরও করুণ। ফের দেশটির ক্ষমতায় এসেছে তালেবান সরকার। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা একে একে পরিবর্তন করতে থাকে প্রচলিত সব নিয়ম কানুন। তাদের ভয়ে দেশ ছেড়েছে লাখ লাখ মানুষ। স্বাধীনতা হারিয়েছে নারীরা। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে দেখা গেছে ভূমিকম্প, বন্যার মতো বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুও ঘটেছে।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবেশী মিয়ানমারের দুরবস্থা শুরু হয়েছে গত বছর থেকে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী অং সান সু চিকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে জান্তা সরকার। ক্ষমতায় এসে একের পর এক নৃশংসতা চালাতে শুরু করে জান্তা। মিয়ানমারের গ্রামের পর গ্রাম আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া, নারী-শিশুসহ অসংখ্য বেসামরিক হত্যা ইত্যাদির মতো বহু ঘটনার খবর পাওয়া গেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে।

দেশের অভ্যন্তরে ইতোমধ্যে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে আঞ্চলিক প্রতিরোধ গোষ্ঠীরা। জান্তা সরকারের সঙ্গে প্রতিদিনই তাদের সংঘর্ষের খবর আসছে সংবাদ মাধ্যমে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকাতেও মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেল এসে পড়েছে। এমনকি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মিয়ানমারের গোলার আঘাতে রোহিঙ্গা নিহতের ঘটনাও ঘটেছে।

অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে চীন-তাইওয়ানের মধ্যে। মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ঘিরে দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলে সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে চীন, ছুড়েছে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র। যুদ্ধ বাধার একেবারে দ্বারপ্রান্ত, পরিস্থিতি এমন পর্যায়েই চলে গিয়েছিল প্রায়।

এছাড়াও সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ বহু মাত্রায় বাড়িয়েছে উত্তর কোরিয়া। গত এক সপ্তাহেই চতুর্থবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর মঙ্গলবার পঞ্চমবারের মতো ফের ছুড়েছে। প্রথমবারের মতো জাপানের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে দেশটি। তাতে সামরিক মহড়া আর শক্তি দুটোই বাড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি পাল্টা জবাবে বুধবার যৌথভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু সেই ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বস্ত হয় আকাশেই। তাতে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সামরিক বাহিনীর দাবি এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এর জন্য পরে তারা ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে।

এছাড়াও সর্বশেষ সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে দেখা দিয়েছে ভিন্নধর্মী এক প্রতিবাদী বিক্ষোভের। হিজাব পরার পর চুল দেখা যাওয়ায় তেহরানে গ্রেপ্তার হওয়া বাইশ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনি দেশটির নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই মারা যায়। এই নিয়ে বিক্ষোভের সূত্রপাত। পরে তা রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নেয়। এর মধ্যে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা খামেনী বলেছেন, এর পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ইন্ধন।

তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বে দেখা দিয়েছে নানা সংকটের। প্রভাব পড়ছে ভূরাজনীতিতেও। সেইসঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা যেন ঘুরছে বিপরীতে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছরেই হয়তো দেখা যেতে পারে বিশ্বব্যাপী মহামন্দা। পোলারাইজেশনের ফাঁদে পরে স্বল্প ও মধ্যম উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশ শোচনীয় পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/ডিএম)