জেলা পরিষদ নির্বাচন ইসির নিয়ন্ত্রণে নেই: মুজিবুল হক চুন্নু

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৪০ | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১৫:১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গাইবান্ধা উপনির্বাচন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন ইসির নিয়ন্ত্রণে নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারি দলের নেতারা।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

এদিন জাতীয় পার্টির ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিইসির রুমে এই সাক্ষাৎ করেন।

চুন্নু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রমাণ করেছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও নির্বাচন ফেয়ার হয় না। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমরা বলছি, বর্তমান সিস্টেমে নির্বাচন ফেয়ার করা সম্ভব নয়। একমাত্র নির্বাচন সিস্টেম যদি পরিবর্তন করা হয়, যদি আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলেই শতভাগ ফেয়ার নির্বাচন করা সম্ভব। তবে আমরা চাই বেশিরভাগ নির্বাচন ফেয়ার হোক।’

জাপা মহাসচিব বলেন, ‘যদিও আমরা ইভিএমের নির্বাচনের পক্ষে না। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনটা ইভিএমে হবে। কিন্তু আমাদের জাতীয় পার্টির কালচার আছে আমরা নির্বাচন বর্জন করি না। নির্বাচন বর্জন করাকে আমরা মনে করি গণতন্ত্রকে ব্যাহত করা। তাই আমরা প্রতিবাদ হিসেবে সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি৷ সেই নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এসেছিলাম।’

ইভিএমের ভোটে সিসিটিভি থাকবে কিনা সে বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইভিএমে নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করছি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে। যদিও আমরা নীতিগতভাবে ইভিএমের নির্বাচনের বিরুদ্ধে। তারপরও আমরা বলছি, এই নির্বাচনটা যদি ফেয়ার করতে পারেন, মানুষের কিছুটা আস্থা আসতে পারে। নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য করতে কী কী পদক্ষেপ নেবেন সেই বিষয়ে আমরা তাদের বলেছি। তারাও আমাদের বলেছেন।’

উল্লেখ্য, সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুতে গত ২৪ জুলাই গাইবান্ধা-৫ আসন শূন্য হয়। ১২ অক্টোবর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা পরিষদের ভোটের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব গাইবান্ধা জেলা পরিষদে অনেক এমপি তাদের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা করছেন বলে ইসিকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী কাজে বাধা দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের লোকেরা আমাদের প্রার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর করেছে।’

এগুলো নিরসন করার জন্য এবং জেলা পরিষদ ভোটে সকল কেন্দ্রে সিসিটিভির ব্যবস্থা করার কথাও বলেছে জাতীয় পার্টি।

প্রতিনিধি দল ইসিকে আর জানিয়েছে, ‘প্রার্থীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে, তারা বলছে জোর করে ভোট নিয়ে নেবেন, যারা এজেন্ট হবে তাদের এলাকায় থাকতে দেয়া হবে না।’

সিইসির কাছে জাতি আশা করে উল্লেখ করে মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘তারা (ইসি) বলেছেন ভয় ভীতির উর্ধ্বে থেকে সৎ থেকে ভালো নির্বাচন দেয়ার মতো মানসিকতা আছে। ইচ্ছা আছে।’

সেই ইচ্ছার প্রতিফলনটা জেলা পরিষদ নির্বাচন এবং গাইবান্ধা ভোটে দেখতে চায় জাতীয় পার্টি।

এক প্রশ্নের জবাবে পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সরাসরি নজরদারি দেখছি না। আমাদের প্রার্থীকে অপমান করেছে। প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করেছে। থানায় গেছে মামলা নেয় নাই। সেখানে জিডি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ আমরা দেখছি না। জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সাংগঠনিক কার্যক্রম করবে এটার ইনটেনশন হলো নির্বাচনে ভোট চাওয়া।’

চুন্নু বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আমাদের বলেছেন, আগামী দু-একদিনের মধ্যে কমিশন সভায় তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা আমাদের বলেছেন, আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে খুবই অনড় ও শক্ত অবস্থানে আছেন। সিইসি বলেছেন, এখন পর্যন্ত সংসদের উপনির্বাচনে সিসি টিভি ব্যবহার করার কথা রয়েছে। তবে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসি টিভি ব্যবহারের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী কমিশন সভায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসি টিভির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

ইভিএম ফল উল্টে দেয়ার মতো একটা মেশিন বলে পাবলিক পারসেপশন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মেশিনের দোষ নেই, মেশিন যারা চালায় তাদের দোষ। কাজেই ইভিএমে নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সবসময়ই আপত্তি। আমরা ইভিএমে নির্বাচন চাই না। আপত্তি সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধরে রাখার জন্য এই নির্বাচনে গেলাম। আগামী নির্বাচনে কি করব সেটা পরিস্থিতির উপর সিদ্ধান্ত নেবো। আমরা ভোট বর্জনের রাজনীতি করি না। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনের পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/এফএ)