বাংলাদেশ সন্ত্রাস দমন করায় যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১৭:৪২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশে সন্ত্রাস না থাকায় আমেরিকা নাখোশ কি না সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘র‌্যাবকে আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, তারা তো তেমনই কাজ করছে।’

বৃহস্পতিবার বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা তারা কতটুকু তুলবে জানি না। র‌্যাবকে দিয়ে দেশে সন্ত্রাস দমন হয়েছে। তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী? যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন। তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ?’

প্রধানমন্ত্রী আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের বিষয়টি টেনে বলেন, ‘৪০ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র সেই তালেবানকেই ক্ষমতা দিয়ে চলে এলো। ৪০ বছর তারা (যুক্তরাষ্ট্র) রাজত্ব করলো। তাহলে তাদের ব্যর্থতার কথা বলে না কেন?’

যত উন্নয়নই হোক, বিরোধিতা করাটাই তাদের কাজ

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দল শক্তিশালী হলে ভালো হতো। তারা যদি শক্তিশালী হতো, তাহলে অনেক কিছুই হতে পারতো। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অনেক হুমকি দিচ্ছে। এটাই তো তাদের কাজ। যত উন্নয়নই হোক, বিরোধিতা করাটাই তাদের কাজ।’

পাঁচ মাসের খাদ্য কেনার রিজার্ভ আছে

করোনাভাইরাস মহামারীতে সৃষ্ট সংকট আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরও বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখতে পারার বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ এখনও যথেষ্ট। যদি কোনো সংকট দেখা দেয় পাঁচ মাসের খাদ্য কেনার রিজার্ভ আমাদের আছে।’

‘রিজার্ভটা হিসাব করা হয় এই কারণে যে, যদি কোনো দুর্যোগ দেখা দেয় তাহলে আপনার তিন মাসের খাদ্য কেনার সংগতি আছে কি না। আর আমাদের সেখানে এখনও পাঁচ মাসের আছে। বাংলাদেশ কিন্তু এখনও ঋণখেলাপি হয়নি। আমরা সময়মতো ঋণ পরিশোধ করি। যখন পরিশোধ করি তখন রিজার্ভ কিছুটা কমে আসে।’

আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক

অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নিজেও আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব চান। বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলরও যদি বলে আমাকে চায় না, আমি কোনোদিনও থাকবো না। যেদিন আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল তখন থেকেই এই সত্যটা মেনে যাচ্ছি। এটা ঠিক দীর্ঘদিন হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। নেতৃত্ব কাউন্সিলররা নির্বাচিত করেন। তাদের সিদ্ধান্তটাই চূড়ান্ত। আর আমার তো আসলে সময় হয়ে গেছে।’

‘জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে আর্থসামাজিক অগ্রগতি করে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে যান। এই স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদার স্বীকৃতি কিন্তু জাতিসংঘই দিয়েছিল। এরপরে দেশে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি হয়েছে। ক্ষমতা ছিল বন্দি, গণতন্ত্র ছিল না। ছিল মার্শাল ল, মিলিটারি শাসন, কারফিউ, ইত্যাদি, ইত্যাদি।’

সংগ্রাম করে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়েছি

আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছেন উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আমরা গণতন্ত্র উদ্ধার করি। আমরা একটানা তিনবার ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় আছি, গণতান্ত্রিক ধারা বাংলাদেশে অব্যাহত আছে।’

‘এর বাইরে অনেক চড়াই-উতরাই, খুন-খারাবি, অগ্নিসংযোগ, অগ্নিসন্ত্রাস অনেক কিছু হয়েছে। এরপরেও আমরা ক্ষমতায় ছিলাম বলে আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এখন বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।’

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এবং বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করেছে।

ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে অংশ নিতে ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান সরকারপ্রধান।

জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে ওয়াশিংটন ডিসিতে কয়েক দিন কাটিয়ে মঙ্গলবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। এর এক দিন পর সংবাদ সম্মেলন করলেন সরকারপ্রধান।

যেকোনো দেশে রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন। এর আগে সবশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সরকারপ্রধান।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য দেন। জাতিসংঘে তার ভাষণের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।’

(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/জেএ/ডিএম)