পুরনো গ্রাহকদের পাওনা না দিয়েই ফের ব্যবসা শুরু করছে ইভ্যালি

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২২, ২২:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পুরনো গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ হয়নি এখনো। এই অবস্থায়ই আগামী ১৫ অক্টোবর নতুন সার্ভার থেকে পণ্য বেচাকেনা শুরু করতে যাচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অজুহাত, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারাগারে থাকায় সার্ভারের পাসওয়ার্ড উদ্ধার করা যাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ইভ্যালির বর্তমান পরিচালক শামীমা নাসরিন।

শামীমা নাসরিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল কারাবন্দি। তাকে ছাড়া টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। তাকে ছাড়া পুরোনো সার্ভার পাসওয়ার্ড উদ্ধার করা যাচ্ছে না, সার্ভার সচল করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা বাধ্য হয়েই নতুন সার্ভার থেকে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করতে যাচ্ছি।’

গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন মোহাম্মদ রাসেল ও শামীমা নাসরিন। এ বছর এপ্রিলে শামীমা নাসরিন জামিনে মুক্তি পেলেও মোহাম্মদ রাসেল এখনো কারাবন্দি।

সংবাদ সম্মেলনে শামীমা নাসরিন জানান, তারা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। এ কারণে বাধ্য হয়ে মোহাম্মদ রাসেল একাই সার্ভারের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের দায়িত্ব নেন। একটি কাগজে লিখে অফিসের টেবিলের ড্রয়ারে পাসওয়ার্ডটি রাখা হয়।

শামীমা নাসরিন অভিযোগ করেন, তাদের গ্রেপ্তারের পর র‍্যাব ইভ্যালি অফিসে প্রবেশ করে এবং অফিস অরক্ষিত অবস্থায় রেখেই চলে যায়। এরপর কয়েকদিন অফিসের প্রবেশপথগুলো খোলা ছিল। অফিস তছনছ হয়েছে। তারা পরে আর পাসওয়ার্ড পাননি। মোহাম্মদ রাসেলও পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন। তিনি আমাজনের সঙ্গে বসলে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করা সম্ভব, অন্যথায় নয়।

শামীমা নাসরিন বলেন, ‘ব্যবসায়িক কৌশলে ত্রুটি স্বীকার করে তা সারিয়ে উঠার জন্য ছয় মাস সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়। হাইকোর্টে আমরা আবেদন করেছিলাম ব্যবসা পরিচালনার। ভোক্তা সাধারণের কথা চিন্তা করে মুনাফা না করে একটি পণ্যও বিক্রি করব না।’

হাইকোর্ট নিযুক্ত ইভ্যালির সাবেক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিভিন্ন মন্তব্য অসত্য বলে দাবি করেন শামীমা নাসরিন। তিনি বলেন, ‘মানিক সাহেব বলেছেন আমরা মানি লন্ডারিং করতাম, প্রতি মাসে দুবাই যেতাম। আমরা মাত্র দুবার দুবাই গিয়েছি। ইমিগ্রেশনে যোগাযোগ করলেই এটা জানা যাবে। ইভ্যালির সামগ্রিক তথ্য হয় তিনি বুঝতে পারেননি, নয়তো তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে অসত্য বলেছেন।’

শামীমা নাসরিন জানান, ইভ্যালির ৪৫ লাখ গ্রাহক রয়েছে। গত বছর ব্যবসা পরিচালনাকাল পর্যন্ত তাঁদের দেনা ৪০০ কোটি টাকার মতো। এক বছর ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ পেলেই এই পাওনা পরিশোধ করতে পারবেন।

গত বছর মোহাম্মদ রাসেল ও শামীমা নাসরিন গ্রেপ্তারের পর সে বছরের ১৮ অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন উচ্চ আদালত। এই বোর্ডকে ইভ্যালির দায়-দেনা নিরূপণ করে প্রতিষ্ঠানটি চলবে নাকি দেউলিয়া ঘোষণা করা হবে সে ব্যাপারে মতামত জানাতে নির্দেশ দেন। তবে ইভ্যালির সার্ভারের পাসওয়ার্ড উদ্ধার করতে না পারায় দায়-দেনার হিসাব জানা সম্ভব নয় জানিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব ছাড়ে মানিকের বোর্ড।

আদালতের নির্দেশে বর্তমানে পাঁচ সদস্যের নতুন বোর্ড ইভ্যালি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন—শামীমা নাসরিন, তার মা এবং বোনের স্বামী, ই-ক্যাবের সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী কামরুন নাহার।

(ঢাকাটাইমস/০৬অক্টোবর/কেএম)