বিশ্লেষকদের মত

জলবায়ু সমঝোতায় (কপ) বাংলাদেশ যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২২, ২২:৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারের কনফারেন্স হলে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গণমাধ্যম কর্মীদের জলবায়ু পরিবর্তনে রিপোর্টিং দক্ষতাবৃদ্ধিকরণ ও কপ-২৭ এ নানা মাত্রিকভাবে ভূমিকা রাখতে দিনব্যাপী এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার আয়োজিত কর্মশালাটিকে উদ্বোধনী অধিবেশন এবং মোট ৪টি টেকনিক্যাল সেশনে ভাগ করা হয়।

টেকনিক্যাল সেশনগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের সায়েন্স, অভিঘাত, পলিসি, পলিটিক্স, বৈশ্বিক সমঝোতা সংলাপ, আইপিসিসি’র ৬ষ্ঠ মূল্যায়ন রিপোর্ট, জলবায়ু পরিবর্তনের অ-অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বাস্তুচ্যুতি, আসন্ন কপ-২৭ এর প্রধান প্রধান ইস্যু এবং ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটির প্রত্যাশা ইত্যাদি নানা বিষয় আলোচিত হয়।

উদ্বোধনী অধিবেশন পরিচালনা করেন এবং আয়োজনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য তুলে ধরেন সিপিআরডি’র নির্বাহী প্রধান মো. শামসুদ্দোহা।

অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, ওয়াটার এ্যাইড’র কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, ডিয়াকোনিয়া’র কান্ট্রি ডিরেক্টর খোদেজা সুলতানা লোপা। 

টেকনিক্যাল সেশনগুলো পরিচালনা করেন ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ডের প্রধান ড. গোলাম রাব্বানি, পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহম্মেদ, সিপিআরডি’র নির্বাহী প্রধান মো. শামসুদ্দোহা, সিপিআরডি’র প্রকল্প সমন্বয়কারী আকিব জাবেদ এবং রিসার্চ অফিসার  শেখ নূর আতায়ে রাব্বি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মো. শামসুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার করণীয় নির্ধারণে বৈশ্বিক সমঝোতা আলোচনা বরবরই একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে এই সমঝোতা আলোচনায়ও নতুন নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে।

বৈশ্বিক নাগরিক সমাজ ও পরিবেশ সচেতন মানুষের চাপ এবং বিভিন্ন গবেষণা ফলাফলের ভিত্তিতে কপ-২৬ রাষ্ট্রসমূহকে তাদের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসকরণের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়াতে বলে। এটি এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সবচেয়ে কার্যকর পন্থাটি হচ্ছে কার্বন (গ্রিন হাউস গ্যাস) উদগীরণ হ্রাস করা।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্তÍ রাষ্ট্র এবং অঞ্চল সমূহের ক্ষয়-ক্ষতির (লস এবং ড্যামেজ) ক্ষতিপূরণ প্রদানের একটি আনুষ্ঠানিক মেকানিজম প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবারের সম্মেলনে।

শামসুদ্দোহা বলেন, এছাড়া ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় অভিযোজন সল্পতার (অ্যাডাপটেশন গ্যাপ) উত্তরোত্তর বৃদ্ধি কমাতে জলবায়ু অর্থায়নের (ক্লাইমেট ফাইন্যান্সিং) নিম্নপ্রবাহকে বৃদ্ধিকরণেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে। যাবতীয় কারণে বাংলাদেশের মতো অতিমাত্রায় বিপদাপন্ন রাষ্ট্রসমূহের জন্য কপ-২৭ অনেক বড় সুযোগ নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন আমরা যদি সুযোগ গুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে চাই এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও ক্ষয়ক্ষতিগুলো তুলে ধরতে চাই তাহলে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ, কিন্তু জলবায়ু সমঝোতা আলোচনায় বাংলাদেশের ভূমিকা যথেষ্ট দূর্বল। আমাদের জলবায়ু নেগোশিয়েটরের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন, আমরা এতবছরেও একটি দক্ষ নেগোশিয়েটর গ্রুপ দাঁড় করাতে পারিনি। এ বিষয়ে সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করনে।

তিনি বলেন প্রতিবছর  সমঝোতা সম্মেলনস্থলে বাংলাদেশের চমৎকার একটি প্যাভিলিয়ন থাকে, কিন্তু আমরা দেখেছি আমাদের সেই প্যাভিলিয়নটি দিনের বেশিরভাগ সময়ই ফাঁকা পড়ে থাকে, আমরা যদি সেই প্যাভিলিয়নটি সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারতাম তাহলে বাংলাদেশের সমস্যা এবং সংকটগুলোকে আরও বেশি দৃষ্টিগোচর করানো যেত। তিনি আরও বলেন, সমঝোতা সম্মেলনটি ৯-১০ দিনব্যাপী হলেও আমাদের কপ শেষ হয়ে যায় প্রথম দুই তিন দিন পরেই! প্রধানমন্ত্রী দেশে চলে আসলেই আমাদের সকল তৎপরতায় ভাটা পড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বালাদেশের সামনে হাজারো রকমের সমস্যা নিয়ে হাজির হয়েছে, এখন আমাদের উচিৎ এই সমস্যগুলোকে হাজারো কণ্ঠে হাজারভাবে বিশ্ব সমপ্রদায়ের সামনে উপস্থাপন করা। জলবায়ু সমঝোতা আলোচনায় এবং বৈশ্বিকভাবে আমদের সমস্যা এবং সংকটগুলো তুলে ধরতে আমাদের কোন কর্মকৌশল নেই বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

(ঢাকাটাইমস/৬অক্টোবর/এসকেএস)