রাজধানীর বাজার: ক্রেতাদের ‘হাত-পা বেঁধে রেখেছে’ ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১১:৫৪

পুলক রাজ, ঢাকাটাইমস

যতই দিন যাচ্ছে বাজারে অস্থিরতা ততই বাড়ছে। নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত এক মাস চাল, ডাল, ডিম, রসুন, আদা, মাছ, মুরগি ও সবজির দাম বেড়েই চলছে। নিম্ন আয়ের মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা দুষছেন জ্বালানি তেল ও ডলারের দাম বৃদ্ধি।

শুক্রবার সরজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

আজ শুক্রবার সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢেঁড়শ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, লম্বা বেগুনের কেজিপ্রতি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, গোল বেগুনের কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, বরবটি ৬৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি, করলা ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, শিমের কেজি ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকা, টমেটো ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি, মুলা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, গাজর ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, ধুন্দুল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, শসা কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কচুরলতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, লেবু ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালি, চালকুমড়া প্রতিটি আকার ভেদে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, লাউ আকার ভেদে ৬০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির দাম এক মাসে ৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিং মাছ আকার ভেদে কেজিপ্রতি ৫২০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি,  রুই কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল আকার ভেদে ৪৯০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, পাঙাশ   ১৯০ থেকে ২১৫ টাকা, তেলাপিয়া ২১০ থেকে ২২০ টাকা, শোল মাছ কেজিপ্রতি  ৪২০ থেকে ৬১০ টাকা, কই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আজ থেকে দেশে ইলিশ আহরণ, বহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ হলে বাজারে মিরছে প্রচুর ইলিশ। দামও কম নয়। ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা কেজি, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, ৮০০ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম ১০০০ থেকে ১২৫০ টাকা কেজি, ১ কেজির বেশি ওজনের হলে কেজি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা কেজি, ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও, মসুর ডাল চিকন কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা, মসুর ডাল মোটা ১২০ টাকা, কেজি, মুগডাল ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত একমাসে ডালের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগির দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৬৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

ডিম প্রতিটি ১৩ টাকা, এক হালি ৫০ টাকা ও ডজন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক মাসের ব্যবধানে বাজারে আদার দাম বেড়েছে। চীন থেকে আমদানি করা আদার দাম সব চেয়ে বেশি বেড়েছে। গত এক মাসে আদার দাম ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। আদার কেজি ১২০/১৪০ থেকে ১০০/৮০ টাকা বেড়ে ২০০/২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজরে আমদানি করা রসুনের চেয়ে দেশি রসুনের দাম বেশি বেড়েছে। গত এক মাসে দেশি রসুনের কেজি ৬০-৭০ টাকা বিক্রি হয়েছিলে। তবে অক্টোবর মাসের শুরুতেই ১০-৩০ টাকা বেড়ে  ৭০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে দফায় দফায় প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে। তবে চলতি মাসে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত।

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার ক্রেতা সবুজ তালুকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা আমাদের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। তারা যে দামে বিক্রি করতে চায় সেই দামেই কিনতে হয়।’

রাজধানীর ইন্দিরা রোডের ক্রেতা পলিন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যা রুজি করি তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যায়। বাজারে গেলেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়।’

ইন্দিরা রোডের মাছ বিক্রেতা আফজল মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা মহাবিপদের মধ্যে আছি। সবকিছুর দাম কেমন যেন দ্রুত বেড়ে গেছে। এখন আমাদের কিছু করার নেই।’

রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের সবজি বিক্রেতা সজল মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সবজির দাম কমছেই না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি আনতে আনতে দাম বেড়ে যায়। একমাত্র কারণ যানবাহন ভাড়া অতিরিক্ত।’

রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার মুরগি বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মুরগির খাবারের দাম বেশি। ফলে এখন পর্যন্ত দাম কমছে না।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আসে এবং আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বেশি থাকে ওটার দাম বাড়বেই। তবে নিজ থেকে যারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দেয় তাদের আইনের আওতায় আনা খুব জরুরি বলে আমি মনে করি।’

(ঢাকাটাইমস/০৭অক্টোবর/পিআর/এফএ)