বিরোধী নেতাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহের নির্দেশ সংবিধান পরিপন্থি: মির্জা ফখরুল

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪০ | আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১৩:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সারাদেশে বিরোধীদলের নেতা এবং সহযোগীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহের জন্য পুলিশের হেড কোয়ার্টার বেতার বার্তায় স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এটা সংবিধান পরিপন্থি। রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমানোর জন্য এটা করা হয়েছে।’

যে সকল অতিউৎসাহী কর্মকর্তা এ ধরনের অবৈধ হীন কাজের সাথে জড়িত দেশের মানুষ তাদের চিহ্নিত করে রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগই ভীত হয়ে আছে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে। সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিলে তাদের ভরাডুবি হবে জেনেই তারা চায় যাতে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। কিন্তু সেই অপচেষ্টা জনগণ মানবে না। সময় হলেই এই সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামবে বিএনপি তার মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে।’

শুক্রবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।  

ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকাস্থ স্পেশাল ব্রাঞ্চ হেডকোয়াটার্সের বরাত দিয়ে রাঙ্গামাটি জেলার পুলিশ সুপার গত ২৫ সেপ্টেম্বর জেলার সকল থানার ওসিদেরকে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের রাঙ্গামাটি জেলার কমপক্ষে ৮ জন শীর্ষ ব্যক্তি, প্রতি উপজেলার শীর্ষ ৫ ব্যক্তি এবং রাঙ্গামাটি জেলার সকল পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের অধীন কমপক্ষে ৫ ব্যক্তি যারা বর্তমান সরকার বিরোধী চলমান গণআন্দোলনে জনবল সংগঠক বা অর্থায়ন করে কিংবা অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করে এমন ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য যেমন ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও এনআইডি নং ইত্যাদি সংগ্রহ করে তার কাছে প্রথমে ইমেইল যোগে এবং পরে হার্ডকপি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার নির্দেশনা অনুযায়ীই এই বার্তা পাঠানো হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে যে ঢাকাস্থ স্পেশাল ব্রাঞ্চের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের সকল জেলার পুলিশ সুপার নিজ নিজ এলাকার সকল থানার ওসিকে বেতার বার্তা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুরূপ নির্দেশনা জারি করেছেন যা অত্যন্ত ভয়ংকর, অপ্রত্যাশিত, অসাংবিধানিক, এখতিয়ার বহির্ভূত, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আচরণবিধি পরিপন্থি এবং রাজনৈতিক দল তথা গণমানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও আন্দোলন সমাবেশ করার মৌলিক অধিকার বিরোধী।’  

ফখরুল বলেন, ‘বিষয়বস্তু থেকে এটি প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থসমূহ বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্দেশে একটি নীলনকশার অধীনে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে গুড়িয়ে দমন করার জন্য একযোগে কাজ করছে।’

‘বর্তমান সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, অত্যাচার-নির্যাতনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর আর্থিক মেরুদণ্ডও ভেঙ্গে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এ প্রক্রিয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গণআন্দোলন দমনের হীন উদ্দেশ্যে মানুষ হত্যার জন্য শান্তিপূর্ণ আইনসিদ্ধ গণতান্ত্রিক মিছিলে গুলিবর্ষণ করে নেতাকর্মীদের হত্যা করছে।’

ফখরুল বলেন, ‘বেতার বার্তাটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে আঘাত করেছে যা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, আইনের শাসন, আইনানুগ সংস্থা ও সমাবেশের নিশ্চয়তা, জনগণের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইন অনুযায়ী সমানভাবে আচরণ করার অধিকার এর পরিপন্থি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপি আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল‌।

(ঢাকাটাইমস/৭অক্টোবর/এসএম/এফএ)