উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার কন্যাকে বিয়ে করলেন বাংলাদেশি যুবক

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০২২, ২০:১২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল আসামের নিষিদ্ধ ঘোষিত বিদ্রোহী সংগঠন উলফার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও জেনারেল সেক্রেটারি গোলাপ বড়ুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়ার মেয়ে বন্যা বড়ুয়াকে (২৭) বিয়ে করেছেন   বাংলাদেশের কুমিল্লার যুবক অনির্বান চৌধুরী।

আসামের ডিব্রুগড় জেলার চাবুয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত জেরাই গ্রামে বর ও কনের পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। অনির্বান বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বসবাস করছেন। আগামী ২৫ নভেম্বরে মেলবোর্নের ইসকন মন্দিরে তাদের বিবাহত্তোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশি যুবক অনির্বাণ চৌধুরীর বাসা ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডিতে। অনুপ চেটিয়া যখন বাংলাদেশের জেলে বন্দি ছিলেন তখন তার মেয়ে বন্যা বড়ুয়া পড়াশোনা করতেন ঢাকার মাস্টারমাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। সেখানেই সহপাঠী অনির্বাণ চৌধুরীর প্রেমে পড়ে যান তিনি। বন্যা-অনির্বাণের প্রেম চলতে থাকে সাত বছর ধরে। তখন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) বিদ্রোহ একেবারে চরম পর্যায়ে।

জানা গেছে, ঢাকার ধানমন্ডির মাস্টার মাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল  অনির্বান ও বন্যার পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তখন অনুপ চেটিয়া এবং তার পরিবার বাংলাদেশে আত্মগোপন করে ছিলেন। তাকে ১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার আদাবর এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ।  তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান,বিদেশি মুদ্রা ও স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে মামলা দায়ের করা করা হয়। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে গোলাপ বড়ুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশে জেলে ছিলেন।

২০১৫ সালে গোলাপ বড়ুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশ। যাতে তিনি উলফা ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। ওদিকে প্রেম চলতে থাকে বন্যা-অনির্বাণের। সেই প্রেম অবশেষে পূর্ণতা পায় গত ৩০ শে সেপ্টেম্বর।

এদিন আসামের জেরাইগাঁওয়ে অনুপ চেটিয়ার নিজের বাড়িতে বিয়ে সম্পন্ন হয় এই প্রেমিক যুগলের। এই যুগলের বিয়ের ছবি পোস্ট করেছেন উলফা নেতা অনুপ বড়ুয়া নিজে।

অনুপ চেটিয়া বলেন, যেহেতু আমি বাংলাদেশের জেলে ছিলাম। তাই ওদের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে জানতাম না। আমাদের বিপ্লবের সময় আমাদেরকে বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে সহায়তা করেছেন তার জন্য তাদের প্রতি আমার ভালবাসা ও সম্মান আছে। এ জন্যই এ বিয়েতে আমি কোনো আপত্তি করিনি। বৃহস্পতিবার ডেকান হেরাল্ডকে এসব কথা বলেছেন তিনি। 

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে অনুপ চেটিয়া ও আসামের অন্য কয়েকজন যুবক মিলে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গঠন করেন উলফা। প্রতিবেশি বাংলাদেশ থেকে আসামে বেআইনিভাবে অভিবাসন সমস্যার সমাধান করতে চান তারা। উলফা বলেছে, বাংলাদেশি বেআইনি অভিবাসীদের কারণে আসামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরিচয় হুমকিতে পড়ছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর অপারেশনের পর অনুপ চেটিয়া সহ উলফার বেশ কয়েকজন নেতা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ডেকান হেরাল্ড লিখেছে, বাংলাদেশের ভিতরে ক্যাম্প স্থাপন করে উলফা। সেখান থেকে তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকে। 

 

অনুপ চেটিয়া বলেন, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর জন্য আসাম ও বাংলাদেশের যুবক যুবতীদের আরও বেশি বিয়ে হওয়া উচিত। অনুপ চেটিয়া আসামের মোটোক সম্প্রদায়ের। এটি আসামের একটি আদিবাসী সম্প্রদায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিয়ে নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কথিত অবৈধ অভিবাসন ও সংশোধিত নাগরিকপঞ্জি (সিএএ) ইস্যুতে এখন কি অবস্থান নেবেন অনুপ চেটিয়া।  ফেসবুকের এক পোস্টে বলা হয়েছে, যেহেতু বালকটি (অনির্বাণ) বাংলাদেশি একজন হিন্দু, তবে কি সিএএ’র বিরোধিতা করবেন অনুপ চেটিয়া? কারণ, সিএএ তো বাংলাদেশ থেকে যেসব হিন্দু ভারতে গিয়েছেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলেছে।

তবে এক্ষেত্রে অনুপ চেটিয়ার পক্ষ নিয়েছেন তার এক বন্ধু। তিনি বলেছেন অনির্বাণ তো আসামে বসবাস করতে আসেননি। তার বাসা ঢাকার ধানমন্ডিতে। তাকে বাংলাদেশ থেকে আসা কথিত অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তুলনা করা যাবে না।

অনুপ চেটিয়া বর্তমানে উলফার আলোচনাপন্থী দলের প্রধান হিসেবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আরেকটি অংশ উলফা-স্বাধীনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পরেশ বড়ুয়া। যিনি বর্তমানে চেয়ারপারসন ও কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে সশস্ত্র আন্দোলন করছেন। চেটিয়া এবং উলফার কমান্ডার-ইন-চীফ পরেশ বড়ুয়া সহ আরও পাঁচজন নেতা, যিনি আগে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর চীন বা মিয়ানমার কোথাও লুকিয়ে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/০৭অক্টোবর/আরজেড)