কিডনির সংক্রমণ প্রতিরোধ করে যেসব খাবার

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৪৩ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১২:২৩

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি। কিডনি রক্তে উপস্থিত দূষিত পদার্থগুলো পরিশোধন করে এবং মূত্র তৈরি করে সেগুলো দেহ থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। চিকিৎসকেরা কিডনির সমস্যাকে নীরব ঘাতক বলেই ব্যাখ্যা করেন। কারণ, কিডনির সমস্যা বা অসুখের নির্দিষ্ট কোনো উপসর্গ হয় না। কোনো কারণে কিডনি আক্রান্ত হলে বা কিডনির কোনো রকম সংক্রমণ হলে শরীরে একের পর এক নানা জটিল সমস্যা বাসা বাঁধতে শুরু করে।

ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস, শরীরের অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, কিডনির জন্য ক্ষতিকর এমন ওষুধ সেবন, জন্মগত কিডনির সমস্যা, ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব ব্যক্তি, প্রভৃতি কিডনি রোগের ঝুঁকির অন্যতম কারণ।

কিডনি সংক্রমণ বা কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রধান লক্ষণগুলো হলো: সারাদিন ক্লান্ত লাগা, ঘুমাতে না পারা, শুষ্ক ত্বক, ঘন ঘন প্রস্রাব, রক্তাক্ত বা বিবর্ণ প্রস্রাব, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, পায়ের গোড়ালি এবং চোখের চারপাশে ফোলাভাব, পিঠের পাশে নিচের দিকে ব্যথা, বমি বা বমি বমি ভাব, মনোযোগ দিতে অসুবিধা, সবসময় শীত লাগা।

মাত্র দুটি পরীক্ষায় জানা যায় কিডনি রোগ আছে কি-না এবং একটি সহজ সমীকরণে বের করা যায় কিডনি শত ভাগের কত ভাগ কাজ করছে। একটি হলো- প্রস্রাবে অ্যালবুমিন বা মাইক্রো অ্যালবুমিন যায় কি-না এবং অন্যটি রক্তের ক্রিয়েটিনিন।

মেডিসিন বা অন্য চিকিৎসার পাশাপাশি কিডনি সুরক্ষার জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিডনি রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমিয়ে ফেলতে হবে। চর্বি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে, পরিমিত পানি পান করতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। খাবার পাতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। রক্তে কলস্টেরল যেন সবসময় স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। প্রতিদিন বেশি পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। জেনে নিন কিডনির সংক্রমণ প্রতিরোধ করে যেসব খাবার-

 

পেঁয়াজ

পেঁয়াজ অবশ্যই স্বাস্থ্যকর কিডনির খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। কারণ, লবণ খাওয়া কিডনি রোগে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই লবণের বিকল্প হিসেবে পেঁয়াজ ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া পেঁয়াজে রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, বি ভিটামিন এবং প্রিবায়োটিক ফাইবার। যা আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়।

 

রসুন

কিডনির রোগ এড়াতে রসুন অবশ্যই খেতে হবে। কারণ, পেঁয়াজের মতো এটিও লবণের দারুণ বিকল্প। একই সময়ে, এর ভিতরে উপস্থিত ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬, সালফার যৌগগুলির প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে জানা যায়। যা কিডনিকে সুস্থ রাখে।

 

আদা

কিডনিকে আরও কার্যকর করতে আদা খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ কিডনিকে ভালো রাখতে আদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদা কিডনিতে রক্তের চলাচল বাড়িয়ে একে সচল ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। যদি নিয়মিত কাঁচা আদা, আদার গুঁড়া কিংবা জুস করে খাওয়া যায় তা হলে তা কিডনি পরিষ্কারে ভূমিকা রাখে।

 

হলুদ

এলার্জি থেকে ত্বককে রক্ষা করা, ত্বককে পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি কিডনির রক্ষাও করে হলুদ। নিয়মিত হলুদ খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। সেই সঙ্গে কিডনিও পরিষ্কার হয়। এতে থাকা কারকুমিনে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান কিডনি রোগ ও পাথর জমা হওয়া রোধ করে।

 

বাঁধাকপি

আপনি যদি কিডনির সংক্রমণ এড়াতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার প্লেটে বাঁধাকপি রাখুন। বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফোলেট ইত্যাদি। যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে কিডনি সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। সেই সঙ্গে বাঁধাকপির অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য কিডনির ক্ষতি রোধ করে।

 

​ডিমের সাদা অংশ

ডিমের প্রতিটি অংশই স্বাস্থ্যকর। কিন্তু এর সাদা অংশ কিডনির জন্য বেশি উপকারী। ডিমের সাদা অংশ কিডনি-স্বাস্থ্যকর প্রোটিনে সমৃদ্ধ। তাই কিডনি রোগে আক্রান্ত বা এড়াতে ডিমের সাদা অংশ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

অলিভঅয়েল

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের রান্নায় অন্যান্য তেলের চেয়ে অলিভঅয়েল ব্যবহার করা বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে অলিক এসিড, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ফ্যাটি এসিড আছে, যা কিডনি সুস্থ রাখার পাশাপাশি ক্যানসার প্রতিরোধ করে থাকে।

 

লেবুর শরবত

প্রতিদিন লেবু মেশানো পানি পান করলেও কিডনি পরিষ্কার হয়। লেবুতে যে এসিড উপাদান আছে তা কিডনিতে জমা হওয়া পাথর ভাঙতে বেশ কার্যকর। লেবুতে যে সাইট্রাস উপাদান আছে তা কিডনিতে থাকা ক্রিস্টালদের পরস্পরের জোড়া লাগতে বাধা দেয়।

 

আপেল

প্রচলিত আছে 'প্রতিদিন একটা আপেল খান আর ডাক্তারকে দূরে রাখুন'। কথাটা কিডনির ক্ষেত্রেও সত্য। আপেল উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, এতে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি আছে যা বাজে কোলেস্টেরল দূর করে হৃদ রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়া এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। আপেল কাঁচা বা রান্না করে অথবা প্রতিদিন এক গ্লাস আপেলের জুস খাওয়ার চেষ্টা করুন।

 

​আনারস

আপনি যদি একটি কিডনি স্বাস্থ্যকর ফল খুঁজছেন, তাহলে অবশ্যই আনারস খান। কারণ, আনারস একটি কম পটাশিয়ামযুক্ত খাবার, যা কিডনি রোগীদের উপকার করে। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত ফাইবার, ভিটামিন সি, ব্রোমেলেন, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি কিডনির প্রদাহ কমায় এবং কিডনি সংক্রমণ ও কিডনি রোগ থেকে রক্ষা করে।

 

মুলা

মুলা কিডনির স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কার্যকর। মুলার ভিতরে পটাসিয়াম ও ফসফরাস কম থাকলেও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ। যা কিডনি রোগের পাশাপাশি হৃদরোগ ও ছানি প্রতিরোধ করে।

(ঢাকাটাইমস/১৬ অক্টোবর/আরজেড)