জিএমপি কমিশনারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় বিজিএমইএ

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৩:৫৩ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৩:৫৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির পাশাপাশি যানজট নিরসনসহ গাজীপুর মহানগর এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ—জিএমপির কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।

নাগরিকদের জন্য গাজীপুরকে নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জিএমপি কমিশনার। যোগদানের মাত্র কয়েক মাসের মাথায় দক্ষতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নসহ যানজট নিরসনে অসামান্য সাফল্য তার।

এসব ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামকে গাজীপুর মহানগরবাসী সাধুবাদ দিচ্ছেন। এবার জিএমপি কমিশনারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস মেনুফ্যাকচারাস এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন—বিজিএমইএ।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনটি মোল্যা নজরুল ইসলামকে এবার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। গত ১১ অক্টোবর বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত এক ধন্যবাদপত্র পাঠানো হয় জিএমপি কমিশনারকে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, 'গাজীপুর অঞ্চলে বাংলাদেশের সর্বাধিক তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। শ্রমিক কর্মচারীর অধিকাংশই গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকাতে বসবাস করে। তারা প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন এলাকার রাস্তা পার হয়ে কারখানায় যাতায়াত করে ‌‌। এছাড়াও কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচাবাল এবং কারখানায় প্রস্তুতকৃত পোশাক নিয়ে বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ি মেট্রোপলিটন এলাকার রাস্তায় চলাচল করে। আপনি পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন অঞ্চলের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। আপনার এরূপ যুগান্তকারী উদ্যোগের জন্য আপনাকে বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদ এবং তৈরি পোশাক শিল্প পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’

‘আশা করি দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত তৈরি পোশাক শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশে আপনার এরূপ উদ্যোগ ও সহযোগিতা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে’—উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে।

মোল্যা নজরুল গত ১৩ জুলাই জিএমপি কমিশনারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর আগেও তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। যার প্রশংসা এখনো তার সহকর্মীরাসহ বিভিন্ন মহল করে থাকেন।

দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার লাইফ-লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। যা ব্যবহার করে ৩৬টি জেলায় যেতে হয় মানুষকে। তীব্র যানজটের কারণে যে সড়ক মানুষের কাছে উৎকণ্ঠার ছিল, এখন তা অনেকটাই স্বাভাবিক।

এই ম্যাজিকে যার কৃতিত্ব দেখছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ স্থানীয় মানুষ, তিনি হচ্ছেন জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। এমন কথাই বলছেন গাজীপুর মহানগরবাসীসহ ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীরা। তার দক্ষ পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের প্রশংসা এখন নগরবাসীর মুখে মুখে।

স্থানীয়রা বলছেন, এই মহাসড়কের গাজীপুর অংশে অসহনীয় যানজটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল মানুষকে। আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যেতে সময় লাগত দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এখন লাগে ৩০-৪০ মিনিট।

যানজট নিয়ন্ত্রণের মধ্যদিয়ে গাজীপুর ঘিরে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক অঞ্চল সংশ্লিষ্টদের দুর্ভোগের মাত্রা অনেকাংশে কমেছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর ফলে দুর্ঘটনা থেকে মানুষ ও যানবাহন রক্ষা পাচ্ছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বড় বড় শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা দ্রুত পৌঁছাতে পারছেন। কাজের গতি বেড়েছে। সঞ্চার হয়েছে অর্থনৈতিক গতিও। জিএমপি বলছে, এই যানজট নিরসনের ফলে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির হাত থেকে নিরাপদ হলো দেশ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মহাসড়কের পাশের অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ, অবৈধ ইজিবাইক-অটোরিকশাসহ তিন চাকার যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ফলে যানজট নিরসন হয়েছে। ফলে কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে পরিবহন করা যাচ্ছে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি, শিল্প ও ব্যবসার প্রসার ঘটছে। যা জীবন ও জীবিকায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

এদিকে জিএমপি কমিশনারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘গাজীপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের তুলনায় পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জিএমপি কমিশনার দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।’

মাদক, অপরাধ ও‌ যানজটমুক্ত নিরাপদ সিটি গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটি একটি টিমওয়ার্ক। আমি টিম লিডার হিসেবে কাজ করছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের টিম এগিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাশা করছি, এই ধারা অব্যাহত রেখে আগামী এক বছরের মধ্যে গাজীপুর মহানগরকে পুরোপুরি নিরাপদ বাসযোগ্য নগরীতে রূপ দিতে পারব।’

জিএমপির আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পর্কে স্থানীয় নারায়ণকুল ড্রিম মডেল স্কুল অন্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ (কলেজ) মোঃ আনিছুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে আমি চাকরির সুবাদে জিএমপির পুবাইল মিরের বাজার এলাকায় বসবাস করছি। এক সময় মিরের বাজার থেকে আবদুল্লাহপুর যেতে অসহনীয় যানজট থাকত।’

‘বর্তমান গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের বিভিন্ন পদক্ষেপে যানজটের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। মিরের বাজার এবং এর আশেপাশের এলাকার আরেরকটি বড় সমস্যা ছিল চুরি এবং ডাকাতি। গত কয়েক মাসে চুরি ও ডাকাতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, অনেকগুলো সমস্যার সমাধান হয়েছে গাজীপুরের বর্তমান কমিশনারের নেতৃত্বের কারনে।’

ওই শিক্ষক আরো বলেন, ‘যানজট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াও গাজীপুর মহানগরীর অন্যান্য সমস্যার মধ্যে ইভটিজিং এবং স্কুল-কলেজের সামনে বখাটেদের উৎপাতের বিরুদ্ধে জিএমপি কমিশনারের জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। তার এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক সেমিনার করছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসার।’

২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর ১২৮ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জিএমপি। এই মেট্রোপলিটন সিটির জনসংখ্যা সরকারি হিসাবে ১০ লাখ।

পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক, জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০০১ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। ২২ বছরের চাকরি জীবনে সাহসিকতা ও দক্ষতার জন্য পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম (বার) ও পিপিএম (বার) অর্জন করেন একাধিক বার।

২০১২ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি থাকাকালে সৌদি দূত খালাফ আল আলী, ব্লগার রাজীব, ডা. নিতাই হত্যাকাণ্ডসহ বেশকিছু ক্লুলেস খুনের রহস্য উদঘাটন করেন। ২০১৫ সালে ‘আগুন সন্ত্রাসের’ এক কঠিন পরিস্থিতিতে তাকে জয়পুরহাট জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখান। ২০১৬ সালে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার তৎপরতায় ধরা পড়ে প্রশ্ন ফাঁসের সর্ববৃহৎ চক্র।

এই অভিযান দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় ‘গুড জব ডান বাই পুলিশ’ হিসেবে ব্যাপক প্রচার পায়। এছাড়া মাদক থেকে মানি লন্ডারিংয়ের প্রথম মামলায় রাষ্ট্রের অনুকূলে মাদক ব্যবসায়ীদের শতকোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাও তার আরেকটি অর্জন। সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের ৩৪২টি নতুন পদ সৃজনে সরকারের সানুগ্রহ অনুমোদন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/আরআর/ডিএম)