মাদারীপুরে ২০ বছর পর ব্যবসায়ী হত্যার রায়: মৃত্যুদণ্ড ৩, যাবজ্জীবন ৬

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৯:০১ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৯:০৩

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাঁড়া ইউনিয়নের নির্বাচনে হেরে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহমান হাওলাদারের বড় ভাই আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা মামলার ২০ বছর পর তিন জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনকে যাবজ্জীবন সাজার রায় দিয়েছেন আদালত। দোষ প্রমাণ না হওয়ায় ৫ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় দেন। এসময় আদালতে চার আসামী উপস্থিত ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা সবাই পূর্ব বাংলা সর্বহারা দলের সদস্য।

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের উত্তর শিরখাড়া এলাকার সুরুদ্দিন মাতুব্বরের ছেলে মাজাহারুল ইসলাম (৫০), একই ইউনিয়নের পশ্চিমমাঠ এলাকার সিরাজউদ্দিন শেখের দুই ছেলে মাছিম শেখ (৪৫) ও জসিম শেখ (৪০)।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৯ অক্টোবর বেলা ৩টার দিকে সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের পুরাতন রাজারহাটে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর হাওলাদারের বড় ভাই টিন ব্যবসা রাজ্জাক হাওলাদারকে প্রকাশ্য দিবালোকে ২৫ থেকে ৩০ জনের পূর্ব বাংলা সর্বহারা দলের সদস্যরা হামলা চালায়। হামলার নেতৃত্ব দেন তৎকালীন শিরখাড়া ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশ নেয়া ও সর্বহারা পার্টিও আঞ্চলিক কমান্ডার লুৎফর খালাসী। এসময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাজ্জাক হাওলাদারকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় সদর থানায় ১৫ জনের নাম ও অজ্ঞাত আরো ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী সেলিমা বেগম। পরে সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমএ হাশেম ২০০৪ সালের ১৫ জুলাই ১৫ জনকে দোষী করে চার্জশিট দেন। এরপরে ২০০৫ সালে তৎকালীন এএসপি সার্কেল মিজানুর রহমান ১৯ জনকে দোষী ও আরো ৩ জনকে দোষির সুপারিশ করে পুনরায় চার্জসীট দেয়। পরে দীর্ঘ শুনানী শেষে ২০ জনকে দোষী করে মামলার রায় দেয়া হয়। রায়ে ৩ জনকে মৃত্যুদÐ, ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদÐ প্রদান করা হয়। এছাড়া মামলায় দোষী না হওয়ায় ৫ জনকে খালাস দেয়া হয়। তবে মালার প্রধান আসামি লুৎফর খালাসী ও তার দুই ভাই ওবায়দুর খালাসী, খায়রুল খালাসীসহ ৫ আসামি ক্রসফায়ারে নিহত হয়। রায়ে নিহতের পরিবার ও রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে আসামীপক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্টে আপীল করবেন বলে জানান।

মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ‘র্দীঘ দিন পরে মামলার রায় পেয়ে আমার পরিবার খুশি। তবে আরো বেশি খুশি হবো যদি আসামীদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর হয়। অনেক সময় মামলার সাক্ষীদের আদালতে আসতে ভয়-ভীতি দেখানোর কারণে রায় পেতে সময় লেগেছে। তারপরেও আমরা এই রায় বাস্তবায়ন দেখে যেতে চাই।’

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী জাফর আলী মিয়া বলেন, ‘সাক্ষী প্রমাণ দিয়ে আসামিদের দোষী প্রমাণ করতে পারেননি আদালত। আমরা রায়ে অসন্তোষ ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। তাই উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আবেদন করব। আশা রাখি রায়ে সেখানে নির্দোষ প্রমাণিত হবে আসামিরা।’

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাড. সিদ্দিকুর রহমান সিং বলেন, ‘রায়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করছি। দীর্ঘ দিন পর হলেও এমন একটি চাঞ্চল্যকর হত্যার রায় করতে পেরে স্বস্তি এসেছে। আমরা রায় দ্রুত বাস্তবায়নের জন্যে প্রহর গুনছি। যদি আসামিরা ক্ষুব্ধ হয়ে থাকে, তাহলে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারে। তবে আমরা রায়ে খুশি।’

(ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/এআর)