চট্টগ্রামের আতঙ্ক এখন ‘জমি দখল চক্র’

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০২২, ২২:১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ঘনবসতিপূর্ণ চট্টগ্রামে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে নগরায়ন। গড়ে উঠছে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এতে স্বাভাবিকভাবেই এখানে জমির দাম বাড়ছে। বাড়ছে জমির চাহিদাও। আর এই চাহিদাকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে ভূমি দখল সিন্ডিকেট।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, গত ২০ বছরে চট্টগ্রাম শহর ও এর আশপাশে ২৫টির বেশি সরকারি খাস ও সাধারণ মানুষের জমি দখল করেছে স্থানীয় এসএম জমির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। জবর-দখলের টাকায় তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক। চট্টগ্রামের বায়োজিদ এলাকায় ৪টি প্লট, কুয়াইশ অক্সিজেন রোডে প্রায় ২০ কোটি টাকার প্লট, থার্মিনাল ১৪ নাম্বার গ্যারেজসংলগ্ন মাহবুব কলোনিতে ৫ কাঠা, একে খান, সিটি গেট ও কুমিরা এলাকায় প্লট রয়েছে তার। এছাড়াও শহরের বায়োজিদ লিংক রোডে পাহাড় ও সমতল ভূমিও দখল করে রেখেছেন।

দখলকৃত প্লটে জমির উদ্দিনের জিন্নুরাইন ডেইরি ফার্ম নামে প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। মাহাবুব কলোনির ভূমি মালিক বাবর-হানিফ, কুমিরার এলাকার জমির মালিক আইয়ুব, সিটি গেট এলাকার দখলকৃত জমির প্রকৃত মালিক শহিদুল্লাহ গংরা বলেন, ভূমিদস্যু জমির চতুরতার সঙ্গে জমি দখল করে রেখেছেন।

ভুক্তভোগীরা বলেন, জমির উদ্দিন শানু নামে এক মহিলাকে দিয়ে আমাদের বিভিন্ন মামলা করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

পরবর্তীতে থানা ও আদালতে হয়রানিমূলক মামলা করে রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জমি দখল করে নেয়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা হয়। গত মাসে চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও থানার খতিববাড়ী মাহবুব কলোনিতে এক প্রবাসীর জমি দখলের অভিযোগে জমির উদ্দিন গংদের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতে জমিরের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ কলোনির গেট ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর, কেয়ারটেকারসহ ভাড়াটিয়াদের মারধর করে বের করে দিয়ে জমি দখল নিয়ে নেন।

জমির কেয়ারটেকার নাসিমাকে একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে মারধর এবং শারীরিকভাবে হেনস্তা করার পর কুয়াইশ ও অক্সিজেন রাস্তার মাথায় একটি নির্জন জায়গায় ফেলে দেয়। পরে টহল পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর বিষয়টি গণমাধ্যমে ও সিএমপি কমিশনারের দৃষ্টিগোচর হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলে জমি দখলের ঘটনায় চাঁদগাঁও থানায় মামলা হয় ৬০ জনের বিরুদ্ধে। পাঁচজনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। ঘটনার পর মামলার প্রধান আসামি জমির উদ্দিন কিছুদিন পলাতক থেকে উচ্চ আদালতে জামিন নিয়ে আবারও জমি দখলের চেষ্টা চালাতে থাকেন।

দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চল-১ এর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, জমির উদ্দিনসহ কয়েকজন ভূমিদস্যুর নামে তালিকা আমাদের হাতে আছে, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, জমির উদ্দিন ও তার গংরা সরকারি জমি দখলের পাশাপাশি আমাদের কেনা সম্পত্তিও ভুয়া দলিলে দখল করে নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও সুরাহা হচ্ছে না। ভূমিদস্যু জমির উদ্দিনের কাছে বেশি অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রবাসীরা। জমির উদ্দিন দখল করেছে বিপুল পরিমাণ পাহাড়ি খাস জমিও।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভূমিদস্যুতা ও জমি দখলের কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, সেপ্টেম্বরে চাঁদগাঁও এলাকায় এ ধরনের ঘটনায় থানা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে ভূমিদস্যুরা জমি দখলের সুযোগ পায়নি।

জমি দখলের বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য জসিমউদ্দিন শাহ বলেন, এই বিষয়ে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। ভুক্তভোগীদের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে জমির উদ্দিনকে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/আরআর/এলএ)