‘শেখের বেটি মোক দুই শতক জমি দেইল, ফির পাকার ঘর বানে দেইল’

আব্দুর রশিদ শাহ, নীলফামারী
| আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২২, ১৬:০৪ | প্রকাশিত : ২৪ অক্টোবর ২০২২, ১৬:০৩

শরিফা বেগম। বয়স ৪০ বছর। দুই ছেলেকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের ধাপের ডাংগা আশ্রয়ন প্রকল্পের ৬৯ নম্বর ঘরে থাকেন তিনি। স্বামী হাসানুল হক ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজ করেন। দুই ছেলেকে নিয়ে থাকছেন এই ঘরে।

এখানে থেকেই বড় ছেলে শরিফ ইসলাম পার্শ্ববর্তী ঝাকুয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে আর ছোট ছেলে শাকিব ইসলামের বয়স মাত্র এক বছর।

ঘর ও জমি পেয়ে আনন্দের কমতি নেই শরিফা বেগমের। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কষ্টের শেষ ছিল না। মাইনষির জমিত ভাঙ্গা-চোরা ঘর বানেয়া থাকির নাগছিলো। পানি ঢুকছিলো ঘরোত। কি যে কষ্ট হইছিলো তা কওয়ায় যায় না। অ্যালা শান্তি মতোন শুতি পাইছি। কবার পাইছি একটা ঠিকানা হইছে। জমি আছে ঘরও আছে।

তবে এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিকে ভুল করেননি শরিফা বেগম। বলেন, যে কামটা গরিব মাইনষি গিলার করি দিছে আর কারো সাহস হইবে না, এই কাজ করি দেখেবার।

তার ছেলে শরিফ ইসলাম বলেন, ‘আগোত বাড়ি ঘর ছিলো না। খ্যাড়ের ঘরোত থাকির নাগছিলো। বাতাস হইলে খুব ভয় নাগছিলো। খাতা বই ভিজি গেইছিলো, এ্যালা চিন্তা করোনা বই খাতা ভিজিবার।’

একই প্রকল্পের ৬৮ নম্বর ঘরে থাকেন আজগর আলী। ৭০ বছর বয়সী আজগর আলীর সারা জীবনই কেটেছে মানুষের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করে।

স্ত্রী হাসিনা বেগমকে নিয়ে বসবাস করছেন সরকারি এই প্রকল্পে। বলেন, ‘সারাটা জীবন গেলো এক শতক জমি কিনির পানু না। শেখের ব্যাটি মোক দুই শতক জমি দেইল ফির পাকার ঘর বানে দেইল। আল্লাহ তার ভালো করুক। শ্রমিক হিসেবে কাম করি জীবনটা শ্যাষ হয়া গেলো। শেষ বয়সে এসে একটা ঠিকানা হইল। কবার পাইছি মুই মাইনসির জমিত থাকো না।’

আজগর আলীর স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, ৪০বছর আগোত যখন মোর বিয়াও হইল। তখন ওমরা (স্বামী) মাইনষির জমিত ছিলো। সংসার জীবন কাটি গেলো। ছেলে মেয়ের বিয়াও হয়া গেইল। অ্যানা জমি নিবার পাইল না। শেখ হাসিনা হামাক দেখিছি। নয়া বাড়ি ঘর করি দিছে। রাইতোত ভালো করি নিন পারির পাই অ্যালা।

শরিফা বেগম কিংবা আজগর আলী নয়। তাদের মত ৭১টি পরিবার পেয়েছেন নিশ্চিন্ত ভাবে ঘুমানোর ঠিকানা। যেখানে বিদ্যুৎসহ পাকা ঘর, রান্না ঘর, টয়লেটসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় এক ছাতায় বসবাস করছেন এই ৭১টি পরিবার।

গাছ গাছলা আর প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে আকাশি নীল রঙয়ের টিনের চালা পুরো এলাকার পরিবেশ বদলে দিয়েছে।

এক সময়ে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন নূর বানু। স্বামী আমিরুল ইসলামও একই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পুটিমারী ইউনিয়নের শাল্টিবাড়িতে অন্যের জমিতে থাকতো নূর বানুর পরিবার। সেখানেই বিয়ে হয় নূর বানু-আমিরুল দম্পতির।

যদিও পরে তারা ঠিকানা পরিবর্তন করে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।

এখন থাকার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন আশ্রয়ন প্রকল্পে। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিলেও ঝি এর কাজ করে দিন চলে তাদের।

নূর বানু জানান, হামরা যে বাড়ি ঘর জমি পামো এইটা চিন্তাই করির পাই নাই। একদিন উপজেলা থাকি স্যারের ঘর আসি খোঁজ খবর নেইল, আইডি কার্ড নেইল, যোগাযোগ করিল। কইছিলো যে তোমাক শেখ হাসিনা ঘর দিবে। ঠিক, ঘরও করি দিছে। এ্যালা খুব খুশি নাগেছে মোক। থাকির পাইছি।

জানা গেছে, তৃতীয় পর্যায়ে এখানে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫ শ টাকা বরাদ্দে ঘরগুলো তৈরি করে দেয়া হয় সুবিধাভোগীদের মাঝে। দ্বিতীয় পর্যায়েও একই বরাদ্দে ঘর তৈরি করা হয়। যেখানে প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দে ঘর তৈরি করা হয়েছিলো। এসব ঘরে আরসিসি কলাম, গ্রেড বীম ও লিনটন না থাকলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ঘরগুলো আরসিসি কলাম, গ্রেড বীম ও লিনটন বসানো হয়েছে। এর ফলে ঘরগুলো যেমন শক্তিশালী হয়েছে তেমনি দীর্ঘস্থায়ীও হবে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, অত্যন্ত সু প্রক্রিয়ায় সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয়েছে। যেখানে তালিকা পাওয়ার পর সরেজমিনে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে আশ্রয়নে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের।

উপজেলায় ৫৭৭জনের তালিকা করা হলেও তিন পর্যায়ে এখন পর্যন্ত ৫৩৭জনের ঠাঁই হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ন প্রকল্পের জমিসহ ঘরে।

এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৪০টি পরিবার, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৭০টি পরিবার এবং তৃতীয় পর্যায়ে ২২৭টি পরিবার রয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে একটি মানুষও যেন ভুমিহীন ও গৃহহীন না থাকে প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগে কিশোরগঞ্জ উপজেলাতেও কাজ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন।

যার সঠিক বাস্তবায়নের ফলে ভুমিহীন ও গৃহহীন মানুষ শূন্যের কোটায় আসছে আর কয়েক দিন পরই।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম বারী পাইলট বলেন, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমরা সম্মিলিতভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করি। কখোনো আমরা ভাবিনি অসহায় এই মানুষরা ঘর পাবে ঠিকানা পাবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্যালুট জানিয়ে আমি বলতে চাই, যারা সুবিধাভোগী হয়েছেন তাদের একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি।

আমি বলবো আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জেলার মধ্যে আমার উপজেলায় সেরা কাজটা হয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, আর ৪০ জনকে প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হলে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হবে এই উপজেলা। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ‘ভুমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত’ উপজেলা ঘোষণা দিতে পারবো আমরা।

তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকাকে সুন্দর করতে আরো পরিকল্পনা রয়েছে প্রশাসনের। রাস্তা ঘাট নির্মাণ থেকে শুরু করে প্রয়োজন সব করে দেয়া পর্যায়ক্রমে।

তিনি বলেন, চতুর্থ পর্যায়ে যে ৪০টি ঘর নির্মাণ করা হবে এতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৪হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে আগের গুলোর চেয়ে আরো ভালো মানের ঘর তৈরি করা হবে।

তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে এই কাজটি করতে পেরে আমি আনন্দিত এবং গর্বিত।

(ঢাকাটাইমস/২৪অক্টোবর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :