তোমাদের এই ভাবসাবে লাগাম দাও
রাতের আঁধারে (রাত১২টা-ভোর ৪টা পর্যন্ত) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে আটকে রেখে একজন নিরীহ ছাত্রের ওপর যারা নির্যাতন-নিপীড়ন চালায় তাদের থামানো দরকার। চারদিকে এই যে শুনশান ফিসফাস, কী হতে যাচ্ছে দেশে, কী হচ্ছে বিশ্বে—এই সংকটকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানবিক জায়গা থেকে সত্যটা উপলব্ধি করবার কথা। আগামির বাংলাদেশ কীভাবে সহনীয় করা যায়, সবার জন্য বসবাস উপযোগী করা যায় তা নিয়ে ভাববার কথা; কিন্তু তারা এখনো পুরনো বাসি, পঁচা রাস্তায় হাঁটছে। এদের বিবেচনা, রুচি এবং চিন্তাটা কেমন বলুন। এদের হাতে কীভাবে আমরা আগামির বাংলাদেশ তুলে দেবো?
রাজনৈতিক দলের সাথে থাকলে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তোমাকে নষ্ট হতে হবে কে বলেছে?
কয়েক বছরের ব্যবধানে এমন কী ঘটলো যে, অমানুষের মতো আচরণ করতে হবে। কেন, মানুষের মতো মানুষ হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে তোমার বাবা-মা ভার্সিটিতে পাঠায়নি? ঐতিহ্য, ভ্রাতৃত্ব, বন্ধন আমরা কেনো ভুলে যেতে চাই? কেনো নিজেদের রসাতলে নিয়ে যেতে চাই?
জানা গেল, সামির নামের ওই ছাত্রের ওপর নিপীড়নই নয়, তার বাবা-মাকেও মধ্যরাতে ফোন দিয়ে উদ্বিগ্ন করা হয়েছে। ছেলের কান্নার শব্দ যদি বাবা-মায়ের কানে যায়, তখন তাঁদের কী অবস্থা হয় একবার ভাবুন। ওই ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তার কাছে নিষিদ্ধ বই খাতা ছিল।
আরে বাবা, কোনটা নিষিদ্ধ কোনটা প্রসিদ্ধ কিংবা কোনটা আইন-বহির্ভূত সেটা তুমি ঠিক করার কে? দেশের বিচার আছে। আইন আছে। তারা কি করবে, তুমি যদি ছাত্রের বাবা-মাকে ফোন করে উদ্বিগ্ন করে তোলো?
কেউ তো আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ওই ছেলে যদি নিষিদ্ধ বই খাতা রেখে থাকে, হল কর্তৃপক্ষ দেখবে। তাদের জানাও। তাকে তো শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করতে পারো না। তোমাকে এই অধিকার কেউ দেয়নি। আইন দেয়নি। দল দেয়নি। তুমি তোমার রাজত্ব কায়েম করতে দলের বা সংগঠনের একটা পদ ব্যবহার করছো মাত্র।
আর এইটুকুই তোমাকে এতো বেপরোয়া করে দিল? আরো বড় হলে, বড় পদে গেলে কী করবা?
বিষয়টি খারাপ লাগার জায়গা হলো, সাধারণ ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মাকে ফোন বিচলিত করে দেয়া। এই জায়গায় আমাদের যেতে হবে কেনো। হল কর্তৃপক্ষের তাহলে দরকার কী?
সময়টা এখন মানবিক হওয়ার। সময়টা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। মানুষকে বিচলিত করার নয়। ভিন্ন মত হলেই একটা কিছু তকমা দিয়ে হয়রানি করার আগে শতবার ভাবা উচিত। আজ একজনকে যে কায়দায় হয়রানি করা হবে, কাল যেনো সেটা ঘুরে এসে নিজেদের ওপর না পড়ে। দরকার কী বাবা এতো কিছুর। পড়াশোনা করতে এসছো, করো। রাজনীতি তো মূল সাবজেক্ট নয়। পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়ার দিকে মনোনিবেশ করার চেয়ে ভালো কোনো উপায় নেই।